ইন্দিরা ভবনের নাম বদলের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ‘রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া’র জেরে ‘চিন্তাভাবনা’ শুরু করেছে রাজ্য সরকার।
শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ মহলে ইঙ্গিত দিয়েছেন, কবি নজরুল ইসলামের নামে একটি অ্যাকাডেমি গড়ে তোলাই তাঁর সরকারের আসল ‘অভিপ্রায়’। ইন্দিরা গাঁধীর স্মৃতির প্রতি ‘অবমাননা’ নয়। সল্টলেকের ইন্দিরা ভবন সরকারি
নথিতে একটি ‘অতিথিশালা’। সেই বাড়ি ভেঙে ‘নজরুল ভবন’ গড়ার কথা সরকারের বিবেচনায় রয়েছে। ওই বাড়িতে ‘ইন্দিরা ভবন’ নামে কোনও ফলক নেই। ইন্দিরা বাড়িটির দ্বারোদঘাটন করেছিলেন, এই মর্মে একটি ফলক আছে। নতুন বাড়িতে সেই ফলকটি রেখে দেবে সরকার।
মুখ্যমন্ত্রী ইন্দিরার স্মৃতি বিসর্জনের কথা ভাবছেন না বলে জানিয়েছেন সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়াও। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নিতেই পারেন। মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে তাঁর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। ওঁর ইন্দিরার প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধা রয়েছে। উনি আমায় বলেছেন, ‘নজরুল ভবন করব বলেছি। ইন্দিরা ভবন বদলে দেব বলিনি।” মানসের মন্তব্য, “ইন্দিরার নাম রেখে নজরুলের সংগ্রহশালা থাকলে আপত্তি কী!” |
মহাকরণের সামনে কংগ্রেস কর্মীর বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র |
সরকারের ব্যাখ্যা না-জানা থাকায় কংগ্রেসের তরফে দিনভর রাজ্যের নানা প্রান্তে ‘প্রতিবাদ’ অব্যাহত ছিল। হয়েছে রেল ও সড়ক অবরোধও। বিক্ষোভ হয়েছে মহাকরণের সেন্ট্রাল গেটেও। কলকাতায় ইন্দিরা মূর্তির পাদদেশে বিক্ষোভ-অবস্থান করে প্রদীপ ঘোষ, অরুণাভ ঘোষ, মালা রায়ের মতো কংগ্রেস নেতা-নেত্রীরা ঘোষণা করেন, নাম বদলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না-হলে রাজ্য জুড়ে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। এ দিন ভদ্রেশ্বরে জেলা কংগ্রেস আয়োজিত সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে এআইসিসি-র তরফে পশ্চিমবঙ্গের ভারপ্রাপ্ত নেতা শাকিল আহমেদ ইন্দিরা ভবনের নাম পরিবর্তনকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ আখ্যা দেন। বলেন, “দু’দলেরই উচিত, একে অপরকে সম্মান করা এবং জোট যাতে বহাল থাকে, তা দেখা।” সেখানেই প্রদেশ কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান বলেন, “যা করা হচ্ছে, তাতে নজরুল ও ইন্দিরা দু’জনেরই অপমান হচ্ছে!”
তৃণমূলের তরফেও এ দিনই প্রথম এই বিতর্কে মুখ খোলা হয়েছে। কংগ্রেস যে ভাবে প্রতিবাদে নেমেছে, তাকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে অভিহিত করে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিম নজরুল এবং সংখ্যালঘু প্রশ্নে পাল্টা ‘আবেগ’ সঞ্চারের চেষ্টা করেছেন। ফিরহাদের কথায়, “গত ৩৪ বছর বা তার আগে নজরুলকে সম্মান দিতে কোনও সরকারই উদ্যোগী হয়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের উদ্যোগে যখন তার চেষ্টা হচ্ছে, তখন কংগ্রেসের একাংশ বিরোধিতা করছেন!” পুরমন্ত্রীর মন্তব্য, “ভোটের আগে কংগ্রেস-সহ সব দলেরই সংখ্যালঘুদের কথা মনে পড়ে। নজরুলকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ‘একই বৃন্তে দু’টি কুসুম হিন্দু-মুসলমান’। কিন্তু ভোটের পরে নজরুলকেও ভুলে যায়, সংখ্যালঘুদেরও!”
ইন্দিরা-আবেগকেও তাঁরা যে ‘অস্বীকার’ করতে চাইছেন না, তা-ও বুঝিয়ে ফিরহাদ বলেন, “ইন্দিরা গাঁধীকে আমরাও সম্মান করি। তৃণমূল কলকাতা পুরসভায় ক্ষমতায় থাকার সময়েই ইন্দিরার মূর্তি বসিয়েছিল। ইন্দিরা ভবন নজরুল ভবন হলে আপত্তির কী আছে? আমরা তো ওখান থেকে ইন্দিরা সংক্রান্ত ফলকটা খুলে ফেলছি না!” টানাপোড়েন যে ইন্দিরা-আবেগ নিয়েই, তা স্পষ্ট মন্ত্রী মানসবাবুর কথাতেও। তিনি বলেছেন, “ছাত্রজীবনে ইন্দিরা গাঁধীর নাম নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছিলাম। ইন্দিরা গাঁধী আমাদের কাছে একমাত্র ভাবাবেগ!” |