|
|
|
|
|
|
|
নাটক সমালোচনা ১...
কলাপীর সফল প্রযোজনা |
|
ভালবাসার নষ্টনীড় |
পিনাকি চৌধুরী |
কলাপী নাট্যমঞ্চের ‘নষ্টনীড়’ একটি সফল ও উৎকৃষ্ট রবীন্দ্র প্রযোজনা, যা দর্শকদের হৃদয় স্পর্শ করে। ভূপতি দাম্ভিক, উন্নাসিক কিন্তু উদার। সরল মনে সব মানুষকেই বিশ্বাস করেন তিনি। অন্য দিকে তিনি সাহিত্যকর্মকে সময়ের অপচয় বলেই মনে করেন। আবার স্ত্রীর প্রতি ভালবাসা তাঁর অগাধ, কিন্তু তাঁর সম্পাদনায় কাগজ ‘সেন্টিনেল’ তাঁর কাছে আরও প্রিয়। রাজা রামমোহন এবং সুরেন বন্দ্যোপাধ্যায়ের একনিষ্ঠ ভক্ত ভূপতির রয়েছে রাজনীতির প্রতি প্রগাঢ় টান। সুতরাং এত কাজের মধ্যে স্ত্রীকে সময় দিতে পারেন না তিনি। তাই তাঁর স্ত্রী নিঃসঙ্গ। কাগজ আর রাজনীতি যেন ভূপতিকে তাড়িয়ে বেড়ায়। এই নাটকে ভূপতি চরিত্রের মতো কঠিন কাজটি অত্যন্ত নৈপুণ্যের সঙ্গে করতে পেরেছেন জ্যোতির্ময় বক্সী। জ্যোতির্ময়ের অপূর্ব কণ্ঠস্বর, শরীরী ভাষা, টানা টানা কিন্তু তীর্যক ভঙ্গিতে সংলাপ প্রক্ষেপণ চরিত্রটিকে অপূর্ব রূপদান করেছে। চরিত্রের প্রতিটি দিক তাই নিখুঁত। প্রথম পর্বে দাম্ভিক, উদার, সরল ভূপতি। দ্বিতীয় পর্বে শ্যালক উমাপদ এবং প্রিয়বন্ধু নিশিকান্তের তঞ্চকতায় ক্রমশ ভেঙে পড়েন। শেষ পর্বে চারুর সঙ্গে তাঁরই আশ্রিত মাসতুতো ভাই অমলের সম্পর্কের কথা উপলব্ধি করে ভূপতি নিঃস্ব, রিক্ত হয়ে পড়েন। ভূপতির ক্রমশ ভেঙে পড়া এবং অলস হয়ে পড়া সুন্দর ভাবে ধরা পড়ে জ্যোতির্ময়ের নির্বাক অভিনয়ে। চারুকে তার স্বামী একেবারেই সময় দেন না, উপরন্তু তাঁর দাদার স্ত্রী মন্দা রসবোধহীন। সুতরাং তাকে চারুর ভাল লাগার কথা নয়। |
|
‘নষ্টনীড়’-এ জ্যোতির্ময় বক্সী |
মন্দার ভূমিকায় চৈতালী মৌলিক অসামান্য অভিনয় করেছেন। তাঁর চলনবলন, উচ্চগ্রামে কথা বলার ভঙ্গি মন্দা চরিত্রকে সঠিক রূপদান করেছে।
ইতিমধ্যে চারুর নিঃসঙ্গ জীবনে ঝড়ের মতো প্রবেশ করে অমল। চারু ক্রমশ অমলকে অবলম্বন করতে চায়। এই নির্ভরতা এক সময় নারী পুরুষের শাশ্বত সম্পর্কের দিকে বাঁক নেয়, কিন্তু অমল দাদার আশ্রিত সুতরাং তার এ ধরনের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া মোটেই শোভন নয়। উপরন্তু তার ভয় হয় মাথার ছাদ ও পেটের অন্ন যদি না থাকে তবে সে বিপাকে পড়বে। সুতরাং অমল নিজেকে বিরত করে এবং দাদার কথায় বিয়ে করে বিদেশে পাড়ি দেয়। কিন্তু চারু অমলকে ভুলতে পারে না। বিদেশ থেকে আসা অমলের চিঠিকে সম্বলহীন চারু খড়কুটোর মতো আঁকড়ে ধরতে চায়। এখানে ভূপতির প্রবেশ। তৈরি হয় নাটকের চরম ভাঙনের মুহূর্ত। এই নাটকে অমল কখনও কখনও কথক এবং পরমুহূর্তে অভিনেতা হয়ে ওঠে। অমলের ভূমিকায় তথাগত চৌধুরী সাবলীল এবং স্বচ্ছন্দ। নাটকের অন্যতম মুখ্য চরিত্রে শর্মী পাল ভাল। কিন্তু ওঁকে আরও যত্নবান হতে হবে। উমাপদ চন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় স্বাভাবিক।
নাটকটির প্রথমার্ধে নাট্যকার বিভিন্ন চরিত্রের সম্পর্কগুলি নিয়ে বুনট ভাবে জাল বুনেছেন। ফলে প্রথমার্ধে নাটকটি সুন্দর ভাবে গড়ে উঠেছে। দ্বিতীয়ার্ধে বিভিন্ন চরিত্রগুলির সম্পর্ক একটু একটু করে ভেঙেছে। অনেকটা সত্যজিৎ রায়ের ‘চারুলতা’কে অনুসরণ করলেও নাট্যকার শেখর সমাদ্দার তাঁর সক্রিয়তা বজায় রাখতে পেরেছেন। নাটকের মঞ্চসজ্জায় সৌমিক-পিয়ালি সফল। আলোয় উত্তীয় জানা মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। নাটকে সুরারোপ করেছেন তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার। |
|
|
|
|
|