নিধুবাবু বললেই বাংলা টপ্পা গানের যে আঙ্গিকের কথা মনে আসে তার প্রেরণা পঞ্জাবি শেরী মিঞার টপ্পার অনুসরণে। নিধুবাবু বা রামনিধি গুপ্তের জীবনে যে নারীর সম্পর্ক ছিল, দীর্ঘ আশি বছর ধরে সঙ্গীত রচনা করেছেন অনেকটা তারই প্রেরণায়। এ দিন সেই সব নির্বাচিত গানের কিছুটা অংশ শোনা গেল বিড়লা অ্যাকাডেমিতে। অংশ নিলেন ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায় (সঙ্গীত), রায়া ভট্টাচার্য (গ্রন্থনা), সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায় ও কাঞ্চনা মৈত্র (শ্রুতি নাট্যাংশ)। ইতিপূর্বে চলচ্চিত্রে, নাটকে নিধুবাবুকে নিয়ে যে সব প্রযোজনা হয়েছে তার স্বরূপ দর্শকদের জানা আছে। কিন্তু তাঁকে নিয়ে পাঠ গানের মাধ্যমে যে অনুষ্ঠান হল, তার প্রচেষ্টা প্রশংসনীয় হলেও সমগ্র অনুষ্ঠানটি ভীষণ অসম্পূর্ণ। জমে ওঠার আগেই শেষ হয়ে যায়। |
নাটকের গানে ঋদ্ধির সুর, তাল, লয় সবই বিরাজমান। তবে টপ্পা গানের যে বিশেষ ধরনের গায়কি আছে, তা এখনও সম্পূর্ণরূপে তাঁর আয়ত্তাধীন নয়। এই বিখ্যাত গায়কি এমন কয়েক জনের কণ্ঠে শোনার অভিজ্ঞতা প্রতিবেদকেরও আছে। ‘নানান দেশে নানান ভাষা’ বা ‘ছাড়িলে তো ছাড়া নাহি যায়’ গান দু’টি প্রচেষ্টা সত্ত্বেও শুধুমাত্র কাঠামোয় আবদ্ধ থাকে। বাকি গানগুলির প্রত্যেকটি সুগীত।
রায়া ভট্টাচার্যের একটা বিশেষ গুণ, তিনি অনুষ্ঠানের গুরুত্ব বুঝে পাঠের বৈশিষ্ট্য গড়ে তোলেন। এ দিন যেমন খুব সংক্ষিপ্ত পরিসরে তিনি নিধুবাবুর জীবনের অনেকটাই তুলে এনেছেন। আর সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে সে কাজে তিনি চূড়ান্ত সফল। বিশেষ করে ‘যত দিন বাংলা ভাষা বাঁচবে’ অংশ থেকে শেষ অবধি তিনি যে বর্ণনা দেন, তা শুনে মনে হয় তিনি নিজের অন্তরের বিশ্বাসের কথাই বলেছেন।
বারবনিতা হয়েও তাঁর মধ্যে যে একটা চাপা আত্মমর্যাদা আছে তা চমৎকার ফুটিয়েছেন শ্রীমতীর ভূমিকায় কাঞ্চনা মৈত্র তাঁর বাচিক অভিনয়ে। সুজয়প্রসাদ তাঁর কণ্ঠাভিনয়ে অতীত দিনের এক চলচ্চিত্র শিল্পীকে অনুসরণ করেছেন, যা দূরদর্শনের মাধ্যমে এখনও বিরাজমান। হয়তো ঝুঁকি নিতে চাননি, তবে নিজস্বতাই কাম্য ছিল। তাতে চরিত্রটি অন্য মাত্রা পেত। |