দু’পক্ষের মধ্যে গণ্ডগোলের জেরে বন্ধ হয়ে গেল নাকাশিপাড়া থানার কালাবাগ দোগাছিয়া গ্রামের ‘শীতকালীন কৃষি মেলা’। দু’পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে ‘চক্রান্ত’ করার অভিযোগ করেছে। বৃহস্পতিবার কৃষ্ণনগর সদর মহকুমাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি মেলা প্রাঙ্গণে ১৪৪ ধারা জারি করে দিয়েছেন। ৩১ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত সেখানে ১৪৪ ধারা জারি থাকবে।
মেলা শুরু হওয়ার কথা ছিল ২ জানুয়ারি। চলার কথা ৮ জানুয়ারি। এলাকার লোকজন প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে হতাশ। তবে মহকুমাশাসকের বক্তব্য, “দুই পক্ষ একই দিনে একই জায়গায় মেলা করতে চাইছিল। উভয় পক্ষই থানা থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সব মহল থেকেই প্রয়োজনীয় অনুমতি নিয়ে নিয়েছিল। এই কাণ্ডের পরেও আমরা চেষ্টা করেছিলাম যাতে সমস্যা এড়িয়ে মেলা করা যায়। সে জন্য দু’পক্ষের মধ্যে আলোচনা করে সমস্যা মেটানোর চেষ্টাও করেছিলাম আমরা। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি।” তিনি বলেন, “উত্তেজনা যে ভাবে বাড়ছিল, তাতে মেলা হলে বড় গণ্ডগোলের আশঙ্কা থেকে যাচ্ছিল। তাই মেলা বন্ধ করা ছাড়া আর কোনও উপায় আমাদের ছিল না।” জেলার পুলিশ সুপার সব্যসাচী রমণ মিশ্র বলেন, “একই সঙ্গে কী করে দু’পক্ষকে একই দিনে একই জায়গায় মেলা করার অনুমতি দেওয়া হল, তা আমরা তদন্ত করে দেখছি। প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
কালাবাগ-দোগাছিয়ার ফুটবল মাঠে ১৯ বছর আগে কৃষকদের সচেতন ও উৎসাহিত করার জন্য এই মেলার আয়োজন শুরু হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ওই মেলার কলেবরও বাড়তে থাকে।
প্রায় দেড়শোটি দোকান, যাত্রা-গানে জমজমাট থাকত মেলা। কৃষি ও পশুপালন নিয়ে আলোচনাচক্রের পাশাপাশি বাৎসরিক উৎসবেরও আকার নিয়েছিল। মেলায় এলাকার কৃষকদের উৎপাদিত ফসলের প্রদর্শনী হত। হত মহিলাদের ফুটবলও। সেই সঙ্গে ক্রমশ যোগ হতে থাকে রক্তদান শিবির, হস্তশিল্পের প্রদর্শনী।
এলাকার খুবই জনপ্রিয় সেই মেলার দায়িত্ব কার হাতে থাকবে, তা নিয়ে সম্প্রতি সমস্যা শুরু হয়। স্থানীয় দু’টি গোষ্ঠী একই সঙ্গে মেলার নিয়ন্ত্রণ দাবি করে সংশ্লিষ্ট মহলগুলি থেকে অনুমতি নিতে শুরু করে। মেলা প্রাঙ্গণে তোরণ, মঞ্চ, মণ্ডপ তৈরির পাশাপাশি একে একে দোকান বসতে শুরু করে। তাদের দাবি দলাদলি ভুলে সব পক্ষ এক সঙ্গে মিলে মেলা চালু করুক। সেই দাবিতে এলাকার ছাত্রছাত্রী গ্রামবাসীরা মেলার দাবিতে প্রাঙ্গণে বিক্ষোভও দেখায়। প্রথম বারের মেলা কমিটির সম্পাদক শেখ মীরকাশিম এ বারও একটি মেলা কমিটির সম্পাদক। তিনি বলেন, “এলাকার সব ধরনের মানুষ সব রাজনৈতিক দলের লোকজনকে নিয়ে আমরা এতদিন মেলা পরিচালনা করে আসছি। সারা বছর ধরে এলাকার মানুষ এই মেলার জন্য অপেক্ষা করে থাকতেন। কিন্তু তৃণমূলের কয়েকজন নেতা মিলে চক্রান্ত করে মেলা বন্ধ করে দিল।” আর এক পক্ষের মেলা কমিটির সম্পাদক নাকাশিপাড়া পঞ্চায়েত সমিতির বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ আব্দুল লতিফ মোল্লা বলেন, “এত দিন সিপিএম মেলাটাকে কুক্ষিগত করে রেখেছিল। লাভজনক ব্যবসায় পরিণত করেছিল। ভয়ে এলাকার কেউ কিছু বলতে পারত না। সরকার পরিবর্তনের পরে আমরা মানুষের দাবি মেনে কৃষকের স্বার্থে মেলা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ওরাই চক্রান্ত করে বন্ধ করে দিল।”
তবে ২ জানুয়ারির এখনও দেরি। এর মধ্যে দুই পক্ষ নিজেদের মধ্যে সমস্যা মিটিয়ে নেবেন ও মেলাও শুরু হতে পারে বলে আশায় রয়েছেন এলাকার মানুষ। |