জোটে ‘অস্বস্তি’
অধীরকে ‘ক্রিমিনাল’ বলে ফিরহাদ বিঁধলেন কংগ্রেসকে
প্রত্যাশিত ভাবেই কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরীর মন্তব্যের ‘কড়া’ জবাব দিল তৃণমূল। এবং তা দিলেন রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য ফিরহাদ (ববি) হাকিম। বলা বাহুল্য, তাঁর বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘অনুমোদন’ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার বহরমপুরের এক সভায় সাংসদ তথা মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেস সভাপতি অধীর সরাসরি প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কংগ্রেস রাজ্যের জোট সরকার থেকে বেরিয়ে আসুক! শুক্রবার অধীরকে ‘বাস্তবতা’ মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে তৃণমূলের তরফে কংগ্রেস এ রাজ্যের জোট সরকার থেকে বেরিয়ে গেলেও সরকার বহাল তবিয়তে গরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় থাকবে। কিন্তু তৃণমূল কেন্দ্রের ইউপিএ-২ সরকারের উপর থেকে সমর্থন তুলে নিলে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের পতন হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা।

অধীর চৌধুরী

ফিরহাদ হাকিম
ববির কথায়, “অধীর চৌধুরী তো কংগ্রেসকে কালিদাস হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন! কংগ্রেস সমর্থন তুলে নিলে এ রাজ্যের জোট সরকারের বিপদ নেই। কিন্তু আমরা কেন্দ্রে সমর্থন তুলে নিলে কিন্তু কেন্দ্রে কংগ্রেসের সরকার সংখ্যালঘু হয়ে পড়বে। জোটসঙ্গী হিসেবে ওঁর বিবৃতি আমাদের কাছে যথেষ্ট অপমানজনক।”
এক ধাপ এগিয়ে মমতার ‘আস্থাভাজন’ মন্ত্রী ববি যা বলেছেন, তার ‘প্রভাব’ জোটে আরও বেশি করে পড়ার সম্ভাবনা। বহরমপুরের যে সভায় অধীর কংগ্রেসকে জোট ছাড়ার প্রস্তাব দেন, সেই সভা থেকেই তাঁর উপস্থিতিতে অভিযোগ করা হয়েছিল, সিপিএমের অপরাধীদের সঙ্গে নিয়ে কংগ্রেসকে শেষ করতে চাইছে তৃণমূল। যে প্রসঙ্গ তুলে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ববি বলেন, “মুর্শিদাবাদের এক কংগ্রেস নেতা অপরাধীকরণের কথা বলছেন। সারা বাংলায় ওঁর থেকে বড় ক্রিমিনাল (অপরাধী) আর কেউ আছে নাকি!”
প্রত্যাশিত ভাবেই মন্ত্রিসভায় ববির সতীর্থ কংগ্রেসি মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া মহাকরণেই ওই মন্তব্যের ‘প্রতিবাদ’ করেছেন। মানসবাবুর কথায়, “মন্ত্রিসভার সদস্য ফিরহাদ হাকিম যা বলেছেন, তা তাঁর মতামত। মুর্শিদাবাদ এবং বাংলার মানুষ কিন্তু অধীরকে রবিনহুড বলেন।
২০ বছর ধরে মুর্শিদাবাদে সিপিএমের বিরুদ্ধে অধীর লড়াই চালাচ্ছেন। কেউ যদি অধীরকে ক্রিমিনাল বলেন, তা হলে আমি অসহায়।” পাশাপাশিই তাঁর বক্তব্য, “রাজনীতিতে ভদ্রতা এবং সংযমের খুবই অভাব হচ্ছে। এটা খুবই বেদনার এবং দুঃখের।
সরকারের তরফে কৃষকদের কাছ থেকে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে ধান-পাট-আলু কেনা হচ্ছে না, এই অভিযোগে বহরমপুরে সভা করেছিল জেলা কংগ্রেস। ন্যায্য সহায়ক মূল্যের দাবিতে আগামী ৪ জানুয়ারি কলকাতার মেট্রো চ্যানেলে কৃষকদের নিয়ে অবস্থান-কর্মসূচি করছে প্রদেশ কংগ্রেস। একই দাবিতে ১০ জানুয়ারি রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে কৃষকদের নিয়ে সমাবেশ করবে সিপিআইএমএল (লিবারেশন)-এর কৃষকসভা। সংগঠনের তরফে কার্তিক পাল এ দিন বলেন, “বাম জমানায় কৃষকদের জন্য কিছু করা হয়নি। এখনও কিছু হচ্ছে না। কৃষকদের সমস্যা মেটাতে ও আত্মহত্যা রোধ করতে সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করা হবে ওই সমাবেশে।”
কংগ্রেসের জোট ছাড়ার বিষয়ে অধীরের প্রস্তাবকে তাঁর ‘ব্যক্তিগত’ অভিমত বলেই আপাতত দেখতে চান রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্ব। বস্তুত, অধীরের ওই মন্তব্য ‘মুর্শিদাবাদ-কেন্দ্রিক’ বলেই মনে করছেন তাঁরা। যেমন মনে করছেন অধীরের ওই ঘোষণাও যে, পঞ্চায়েত ভোটে মুর্শিদাবাদ জেলায় কংগ্রেস একাই লড়বে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের কথায়, “অধীর মুর্শিদাবাদে যা বলেছে, জানি। ওরা ওদের দিক থেকে ওই কথা বলেছে। কিন্তু জোট ছাড়া নিয়ে এখনই আমি মন্তব্য করব না।” তবে একের পর এক ঘটনায় কংগ্রেস-তৃণমূল জোট-সম্পর্কে যে ‘চিড়’ ধরছে, তা মেনে নিয়েই প্রদীপবাবু বলেন, “এখন রাজ্যে জোট-সম্পর্কের যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা সুখকর নয়। একের পর এক ঘটনায় জোটশরিক কংগ্রেসের উপর অন্যায় হচ্ছে। তা আর মুখ বুজে সহ্য করা সম্ভব নয়।” এই পরিস্থিতিতে ‘রাজনৈতিক কর্মসূচি’ ঠিক করতে আজ, শনিবার প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব আলোচনায় বসছেন। সেই আলোচনায় থাকার কথা এআইসিসি-র তরফে পশ্চিমবঙ্গের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শাকিল আহমেদেরও। ওই বৈঠকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় থাকবেন কি না, তা এখনও নিশ্চিত নয়।
তবে জোট সরকারে ‘টানাপোড়েন’ এ দিন আরও প্রকাশ্যে চলে আসে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে। ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ ভাবে মন্ত্রিসভার বৈঠকে মানসবাবু এলেও ‘অধীর-পন্থী’ হিসাবে পরিচিত মুর্শিদাবাদের দুই বিধায়ক আবু হেনা ও মনোজ চক্রবর্তী আসেননি। বহরমপুরের সভায়ও হেনা-মনোজের তুলনায় মানসবাবুর বক্তব্যের সুর ‘ঈষৎ নরম’ ছিল।
মনোজবাবুর সঙ্গে সন্ধ্যায় যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “প্রথমত, আমার জেলায় দলীয় কর্মসূচি ছিল। আর গিয়েই বা কী লাভ!” মনোজবাবু বলেন, মন্ত্রিসভার বৈঠকে যাবেন না বলে আগে থেকে কাউকে জানানওনি। ভবিষ্যতে যাবেন? তাঁর জবাব, “ভবিষ্যতের কথা ভবিষ্যতে।” অপর মন্ত্রী আবু হেনা অবশ্য জানান, তিনি এ দিনের অনুপস্থিতির বিষয়ে মুখ্যসচিবকে আগেই জানিয়েছিলেন। মন্ত্রিসভায় তাঁর সতীর্থ মানসবাবুকেও বহরমপুরের সভাতেই বিষয়টি জানিয়ে অনুরোধ করেছিলেন, তিনি যেন তাঁর অনুপস্থিতির কারণ জানিয়ে দেন। হেনার কথায়, “মন্ত্রিসভার বৈঠকটি ২৭ তারিখ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর মায়ের পারলৌকিক ক্রিয়াদির জন্য তা এ দিন হয়। দলীয় কর্মসূচি আগেই ঠিক হয়ে যাওয়ায় যেতে পারিনি।” এর সঙ্গে বহরমপুরের সভার ‘সম্পর্ক’ নেই বলেও তিনি জানান।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.