ক্লিক অর প্রেস
ল্যাপটপের সন্ধানে
প্রথমেই ঠিক করে নিতে হবে ল্যাপটপ আপনার কোন কাজে লাগবে। সেই অনুযায়ী তার গড়ন, ওজন, পোর্ট, হার্ড ডিস্ক, মেমোরি, প্রসেসর, ওয়ারেন্টি ও ব্যাটারি লাইফ সম্পর্কে খোঁজ নিতে হবে।
প্রথমেই বলি, চকমকে ল্যাপটপের দিকে যাবেন না। প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি এ সব ল্যাপটপ দেখতে যেমন ভাল তেমনই দামেও সস্তা। ‘ইন মোল্ড ডেকরেশন’ পদ্ধতিতে প্লাস্টিকের স্তরের মধ্যে নানা প্যাটার্ন তৈরি করা হয়। HP, Toshiba, এবং Acer-এর এ ধরনের ল্যাপটপ আছে। তবে এগুলির থেকে ধাতুর তৈরি ল্যাপটপ কেনাই ভাল। Apple MacBook Pro 13 inch (Thunderbolt), Dell XPS 15z এবং HP Pavilion dv6 মডেল-এর ল্যাপটপগুলি অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি। অ্যালুমিনিয়ামের সুবিধা হল এতে প্লাস্টিকের থেকেও সরু ও হাল্কা ল্যাপটপ বানানো সম্ভব। আরও শক্তপোক্ত কিছু চাইলে ম্যাগনেসিয়াম অ্যালয়-এর তৈরি ল্যাপটপ নিতে পারেন। এ ছাড়া কার্বন ফাইবারের তৈরি ল্যাপটপও আছে, যেমন Sony VAIO VPC-Z214GX। কিন্তু এ ধরনের ল্যাপটপের দাম কিছুটা বেশি।
এ বার আসি ওজনের কথায়। যদি ল্যাপটপ নিয়ে বেশি ঘোরাঘুরি করতে না হয় তবে ১৫ ইঞ্চি বা তার থেকে বড় স্ক্রিনের ল্যাপটপ নিতে পারেন। তবে Apple MacBook Pro (late 2011) এবং Samsung RC512-SO2-এর ১৫ ইঞ্চি স্ক্রিনের ল্যাপটপের ওজন অন্যদের থেকে কম। কিন্তু বেশি ঘুরতে হলে ১৩ বা ১৪ ইঞ্চি স্ক্রিনের ল্যাপটপ নেওয়া ভাল। সাধারণত ১৫ ইঞ্চি বা তার থেকে বড় স্ক্রিনের ল্যাপটপ মিডিয়া ও গেমের কাজে লাগে। আর ১৭ বা ১৮ ইঞ্চি স্ক্রিনের ল্যাপটপে উচ্চ রেজলিউশনের ছবি, গেমিং গ্রাফিক্স, দু’টি হার্ড ডিস্ক-সহ নানা সুবিধা পাওয়া যায়। Toshiba Portege R Series এবং Sony VAIO S series ১৩ ইঞ্চির ভাল ল্যাপটপ। ১৪ ইঞ্চির মধ্যে Asus এবং Samsung-এর কয়েকটি ভাল ল্যাপটপ রয়েছে। তবে ওজন বেশি না হলেও দাম কিছুটা বেশি।
এ বার দেখুন USB পোর্ট ক’টি আছে। USB 3.0 পোর্টে দ্রুত তথ্য বিনিময় হয়। অ্যাপল Thunderbolt প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। তাদের দাবি, এতে USB 3.0 থেকেও দ্রুত তথ্য বিনিময় সম্ভব। একটি USB পোর্টকে eSATA পোর্ট করে নিন। এতে বেশি করে তথ্য জমা রাখতে পারবেন। ল্যাপটপগুলিতে মোটামুটি ৫০০ জিবির হার্ড ডিস্ক থাকে। আর নোটবুকের ক্ষেত্রে ২৫০ থেকে ৩২০ জিবির হার্ড ডিস্ক থাকে। প্রয়োজনে ৬৪০ থেকে ৭৫০ জিবি পর্যন্ত বাড়াতে পারেন। তবে ভিডিও নিয়ে কাজ না করলে এত বড় হার্ড ডিস্কের দরকার নেই।
বড় পর্দায় স্লাইড শো দেখানোর জন্য অনেকে VGA ব্যবহার করেন। তবে DisplayPort এবং HDMI আরও বেশি রেজলিউশনের ভাল ছবি বা ভিডিও স্ট্রিম করতে পারে। নোটবুক ছাড়া প্রায় সব ল্যাপটপে DisplayPort বা HDMI থাকে। The Dell XPS 15z এবং Lenovo Thinkpad XI-এর মতো কয়েকটি ল্যাপটপে দু’টিই আছে।
ল্যাপটপে কিন্তু Wi-Fi 802.11/n থাকতেই হবে। Wi-Fi 802.11/b বা Wi-Fi 802.11/g থাকলে সে ল্যাপটপ না কেনাই ভাল। মোবাইল ব্রডব্যান্ড (3G) এবং ব্লু টুথ অত্যন্ত দরকারি। নোটবুক ছাড়া সব ল্যাপটপেই এখন ডিভিডি রাইটার থাকে। ব্লু রে ড্রাইভের দাম ধীরে ধীরে কমছে। তবে এখনও কয়েকটি উঁচু শ্রেণির ল্যাপটপে ব্লু রে ড্রাইভ পাওয়া যায়। ওয়েব ক্যাম ও মেমোরি কার্ড রিডার এখন প্রায় সব ল্যাপটপেই থাকে। Apple Macbook Air 13 inch (Thunderbolt) এবং Samsung Series 9 কোনও অপটিক্যাল ড্রাইভ ছাড়া প্রায় সব কিছুই পাওয়া যায়।
প্রসেসরও গুরুত্বপূর্ণ। কাজ ও ব্যাটারি কতক্ষণ চলবে প্রসেসর ঠিক করতে গেলে এই দু’টি বিষয়ে নজর রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে Intel-এর রমরমা। Intel-এর দ্বিতীয় প্রজন্মের Sandy Bridge প্রসেসর Core i3, Core i5 এবং Core i7 এখন খুব জনপ্রিয়। এতে কাজ ভাল হয় এবং ব্যাটারিও দীর্ঘ ক্ষণ চলে। আরও বেশি ব্যাটারি চালাতে গেলে Atom প্রসেসর নিতে পারেন। Atom প্রসেসরে বিদ্যুৎ অনেক কম খরচ হয়। সাধারণত নোটবুকে এই প্রসেসর ব্যবহার করা হয়। গেমের জন্য Intel-এর quad-core Core i7s ভাল কাজ করে। অন্য দিকে AMD-এর triple এবং quad-core প্রসেসর Phenoms রয়েছে।
বেশি গ্রাফিক্সের কাজ করলে গ্রাফিক্স কার্ড প্রয়োজন। তবে গ্রাফিক্স কার্ড লাগালে ব্যাটারি দ্রুত ফুরিয়ে যায়। Nvidia (Optimus) এবং অ্যাপল-এর Automatic Graphics Switching-এ দু ’টি গ্রাফিক্স চিপ থাকে। একটি সঙ্গে লাগানো। অন্যটি আলাদা। Dell XPS 15z এবং Apple MacBook Pro ১৫ ইঞ্চিতে এই সুবিধা পাওয়া যায়। AMD-এরও switching graphics প্রযুক্তি রয়েছে। যদিও এ ক্ষেত্রে সফ্টওয়্যারের মাধ্যমে switching করতে হয়।
ল্যাপটপের প্রাণভোমরা হল ব্যাটারি। ব্যাটারি ফুরিয়ে গেলে ল্যাপটপের সব জারিজুরি শেষ। সাধারণত অধিকাংশ ল্যাপটপে ছয় সেলের ব্যাটারি থাকে। এতে এক বার পুরো চার্জ দিলে ছয় থেকে সাত ঘণ্টা চলে যায়। ব্যাটারির ক্ষমতা ওয়াট-আওয়ারে মাপা হয়। দু’টি ছয় সেলের ব্যাটারির ওয়াট-আওয়ার আলাদা হতে পারে। যে সব ল্যাপটপ ব্যবসার কাজে ব্যবহৃত হয় সেখানে swappable এবং snap-on ব্যাটারির বেস বা স্লাইস থাকে। এতে প্রায় ১০ ঘণ্টা মতো কাজ চলে যায়। MacBook Pro-তে প্রায় ১০ ঘণ্টার মতো কাজ করা যায়। যদি আপনি পথেই বেশি সময় কাটান তবে সঙ্গে আরও একটি ব্যাটারি থাকা ভাল। এতে লাগেজের ওজন বাড়ে বটে। তবে কাজে সুবিধা হয়।
শেষ করব ওয়ারেন্টি-র কথা বলে। বেশির ভাগ ল্যাপটপের যন্ত্রাংশের উপরে এক বছরের ওয়ারেন্টি থাকে। HP যে কোনও দুর্ঘটনার জন্য এক বছরের ওয়ারেন্টির সুবিধা দেয়। জন্য পরে অর্থ দিয়ে ওয়ারেন্টির সময় বাড়ানো যায়। তবে ল্যাপটপের খরচের ১৫ শতাংশের বেশি ওয়ারেন্টিতে বাড়াতে খরচ হলে তা না করাই ভাল।

কম্পিউটার সংক্রান্ত আপনার প্রশ্ন পাঠান:
askdoss@abpmail.com-এ
সাবজেক্ট লাইনে লিখুন abp kolkata




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.