মারগাওয়ে বিশ্রী হারের ধাক্কায় অ্যালান গাওয়ের বিদায়ঘণ্টা বেজে গেল ইস্টবেঙ্গলে। যিনি কিনা চোটের জন্য অনেক দিনই মাঠের বাইরে।
বৃহস্পতিবার সালগাওকর ম্যাচে টোলগে-মেহতাব ঝামেলা, ড্রেসিংরুমে ভাঙচুরের ঘটনাকে লাল-হলুদ কর্তারা তেমন গুরুত্বই দিচ্ছেন না। বরং ট্রেভর মর্গ্যানের ঘোর দুঃসময়ের মধ্যে তাঁর ‘স্নেহধন্য’ গাওকে ছেঁটে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল ইস্টবেঙ্গল। ফুটবল সচিব সন্তোষ ভট্টাচার্য শুক্রবার বলে দিলেন, “শনিবারই মর্গ্যানের সঙ্গে আলোচনায় বসছি। গাওকে আমি কেন, ক্লাবের কেউই আর চাইছে না। কোচও নিশ্চয়ই আমাদের সঙ্গে একমত হবেন। ওকে দলে রাখার আর কোনও যুক্তি নেই।”
বহু দিন ধরে গাওকে নিয়ে টানাপোড়েন চলছে ক্লাব কর্তা ও কোচের মধ্যে। স্কটিশ মিডফিল্ডারের চোট আর অসুস্থতার কাগজপত্র ফেডারেশনে জমা পড়েছে। বদলি ফুটবলার পাওয়ার প্রাথমিক পর্বের কাজ কর্তারা সাঙ্গ করে ফেললেও মর্গ্যান নিজের পছন্দ করে আনা বিদেশিকে ছেঁটে ফেলার ব্যাপারে মত দেননি। বরং নানা ভাবে গাওকে রেখে দেওয়ার ব্যাপারে জোরাজুরি করে গিয়েছেন। অশান্তির ভয়ে কোনও কর্তাও এত দিন প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি। এ দিন প্রথম সেটা করলেন ফুটবল সচিব। “একটা ম্যাচ খেলার পর তিনটে ম্যাচ বসে থাকছে গাও। ও থাকলে বুধবার সালগাওকরের বিরুদ্ধে দু’জন বিদেশি নিয়ে খেলতে হত না আমাদের। গাও-এর যা এম আর আই রিপোর্ট তাতে এ মরসুমে আর ভাল খেলতে পারবে না। সামনে এএফসি কাপ। সেখানে চার জন বিদেশি নিয়ে যেতে হবে। হাতে আর সময়ও নেই। কোচের সঙ্গে কথা বলে আমরা নতুন ফুটবলার আনতে চাই,” বলছিলেন সন্তোষবাবু। ক্লাব সূত্রের খবর, আই লিগের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ চার গোলে হেরে মর্গ্যান এখন লাল-হলুদে বেশ চাপে। এই সুযোগটাই কাজে লাগাতে চাইছে ক্লাব।
সালগাওকরের কাছে জঘন্য হার নিয়েও ক্লাবকর্তারা প্রচণ্ড বিরক্ত। গোয়ায় এখন ক্রিসমাসের উৎসব চলছে। সে রকম একটা জায়গায় তিন দিন আগে টিম পাঠানোটাও হারের একটা কারণ কি না, তা নিয়েও চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। কর্তারা চিন্তিত ড্রেসিংরুমের পরিবেশ নিয়েও। ড্রেসিংরুমের ঝামেলার ব্যাপারটি ‘কিছুই নয়’ বলে ধামাচাপা দিলেও ফুটবল সচিব বললেন, “মেহতাবের মতো ফুটবলারের ও ভাবে কার্ড দেখা ঠিক হয়নি। ও অন্যায় করেছে। কলকাতায় ফিরলে ওর সঙ্গে কথা বলব।” এ দিকে মেহতাব জানান, তিনি দু’-তিনটি ম্যাচে বিশ্রাম চান। অবশ্য কোচ তাতে রাজি থাকবেন কি না সেটাই দেখার। মারগাওয়ে ফোন করে জানা গেল, টোলগে এ দিন মেহতাবের কাছে গিয়ে পুরো ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেন। মেহতাব বললেন, “আমি কি মারামারি করার ছেলে? ঝামেলা একটা হয়েছিল বিরতিতে। সেটা মিটে গিয়েছে। টোলগে আমার সঙ্গে এসে কথা বলে গিয়েছে।”
মেহতাব-টোলগেরা এখন গলাগলি করলেও, বুধবারের গণ্ডগোলের জের সামলাতে মাঠে নামতে হয়েছিল লাল-হলুদ কর্তাদেরও। ইস্টবেঙ্গল ড্রেসিংরুমের চেয়ার ভাঙার ছবি সালগাওকরের ফেসবুকে প্রকাশিত হওয়ার পরই ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামেন ইস্টবেঙ্গল কর্তারা। সালগাওকর কর্তা রাজ গোমস এ দিন ফোনে বললেন, “গণ্ডগোলের পর ইস্টবেঙ্গলের মণীশ বন্দ্যোপাধ্যায় ফোন করে ব্যাপারটা নিয়ে জলঘোলা না করার জন্য অনুরোধ করেন। আমি তাকে কথা দিই, সমস্যা হবে না।”
টোলগেকে কিছু না বললেও, শুক্রবার বিকেলের বিমানে মারগাও থেকে কলকাতা ফেরার আগে হোটেলে মেহতাবকে নিয়ে আলোচনায় বসেছিলেন মর্গ্যান এবং গোলকিপার কোচ অতনু ভট্টাচার্য। অতনু বললেন, “মেহতাবকে বুঝিয়েছি যে, ও কার্ড দেখলে দলেরই ক্ষতি হচ্ছে। এখন থেকে যেন আরও সতর্ক হয়।”
বিশ্রী হারের পর মর্গ্যান ফুটবলারদের কাউকে দোষারোপ করেননি। বরং দলকে চাঙ্গা করতে বলে দিয়েছেন, ২ জানুয়ারি এয়ার ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে জয়ের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তে। |