মোহনবাগান-২ (জুয়েল, মণীশ ভার্গব)
জর্জ টেলিগ্রাফ-২ (এমেকা পেনাল্টি-সহ ২) |
ময়দানের দু’টো চেনা ছবি মোহনবাগান মাঠে ফিরে এল শুক্রবার বিকালে।
এক, ব্যারেটো-ওডাফাহীন পালতোলা নৌকা ফের আটকাল চোরাবালিতে। এমনকী দশ জনের জর্জ টেলিগ্রাফের বিরুদ্ধে ২-০ এগিয়েও।
দু’নম্বর ছবিটা অনেক পুরনো। দু’দলেরই কোচেরা যখন ফুটবলার ছিলেন, তখনও সেই ছবি ময়দানে দেখা যেত। বড় দলের জিততে না পেরে রেফারি-ঘেরাও। এ দিন যা করলেন, মোহন-টিডি সুব্রত ভট্টাচার্য। তাঁর সঙ্গে যোগ দেন সবুজ-মেরুনের অন্যতম ফুটবলার রহিম নবি। যথারীতি ম্যাচের কর্তব্যরত বিশাল পুলিশ বাহিনী রেফারি উদ্ধারে এগিয়ে আসে। সম্বিত ফিরে পেয়ে সুব্রত ক্লাবতাঁবুতে ফিরে গেলেও তার অনেক পরে পুলিশ পাহারায় মাঠ ছাড়েন রেফারি।
সুব্রতদের দাবি, বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যের জর্জের ২-২ করার গোলটার পেনাল্টির কারণ যে হ্যান্ডবল সেটা মোহনরাজের ইচ্ছাকৃত ছিল না। বল হাতে লাগাতেই যদি পেনাল্টি হয়, তা হলে মোহনরাজকে রেফারি হলুদ কার্ড দেখালেন না কেন?
কলকাতা লিগে ছয় ম্যাচে ১১ পয়েন্ট পেয়ে মোহনবাগান অনেকটাই পিছিয়ে ইস্টবেঙ্গলের থেকে। ৭ পয়েন্টে। জাতীয় লিগের চ্যাম্পিয়নশিপের দৌড়ে তা-ও বা থাকলেও স্থানীয় লিগের আশা প্রায় নেই সুব্রত ভট্টাচার্যের টিমের। |
অথচ দিন শেষের ছবি এতটা ‘ডার্টি’ না-ও হতে পারত। বরং নিউইয়ার্স ইভ-এর মুখে বাগানকে আলোয় ঝলমলিয়ে তুলতে পারতেন অনূর্ধ্ব উনিশের মণীশ ভার্গব। ক্লাবেরই দুর্গাপুর অ্যাকাডেমির এই রাইটহাফের এ দিনই ছিল বড় দলের হয়ে প্রথম ম্যাচ। রাকেশ মাসির বাড়ানো বল ধরে ইনসাইড ডজে জর্জের শ্রীকান্ত কোলেকে কাটিয়ে বাঁ পায়ের জোরালো শটে তিনিই ২-০ করেছিলেন। বিরতির আগেই। জর্জ ১০ জনে খেলেও ২-২ করার পরেও দু’বার মোহনবাগানকে জেতানোর খুব কাছে চলে এসেছিলেন মণীশ। দু’বারই তাঁর বাঁ পায়ের শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
মোহনবাগানকে এগিয়ে দিয়েছিলেন জুয়েল রাজা। পেনাল্টি বক্সের বাইরে থেকে ডান পায়ের আউটস্টেপে। কিংশুক-নবি হয়ে বল পেয়ে। তার মিনিট দুয়েক পরই জুয়েলকে ফাউল করে সরাসরি লাল কার্ড দেখেন জর্জের মাঝমাঠের ফুটবলার শিলাদিত্য শেঠ। যা নিয়েও চরম অসন্তোষ জর্জ শিবিরে।
তবে জুয়েলের গোল হওয়ার আগে বাগান মাঝমাঠের যে দশা ছিল পরেও তা-ই রইল। জমাট বাঁধল না আদৌ। জর্জের কমবয়সি ফুটবলারদের ছোট-ছোট পাস সামাল দিতে তখন কিংশুক, মাসিরা উঁচু বলের আশ্রয়ে। তেমন ম্যাচ প্র্যাক্টিস না-পাওয়া স্ট্রাইকার জাগতার সিংহ যেগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনার ব্যর্থ চেষ্টা করে গেলেন সারাক্ষণ। সঙ্গী অভিজ্ঞ স্ট্রাইকার অসীম বিশ্বাস আটচল্লিশ ঘণ্টা আগেই এয়ার ইন্ডিয়া ম্যাচে ভাল খেলেছিলেন। গোলও পেয়েছিলেন। তিনিও সে দিনের ‘ভাল টাচ’ খুঁজে বেড়ালেন।
বাগান ডিফেন্সের প্রথম ছন্দপতন বিরতিতে। প্রথমার্ধে হলুদ কার্ড দেখা কিংশুককে তুলে সুব্রত নামান এন প্রদীপকে। ৭ জানুয়ারি ইস্টবেঙ্গল ম্যাচের জন্য কিংশুককে সংরক্ষণ করতেই এই স্ট্র্যাটেজি। কলকাতা লিগে যে ম্যাচ কার্যত এখন শুধু সম্মানের লড়াই। রাকেশের ডিফেন্সিভ ব্লকারের জায়গা নেন প্রদীপ। রাকেশ চলে যান স্টপারে। রক্ষণে তখন অনেক ফাঁকফোকর। ড্যানিয়েল, ধনরাজনরা জর্জের দুই বিদেশি সামলাতে খাবি খেলেন। যার সুবিধা নিয়ে এমেকা সঙ্গী স্ট্রাইকার ওরোকের সঙ্গে চমৎকার পাস খেলে ১-২ করে যান। এবং দু’মিনিটের মধ্যে পেনাল্টিটাও আদায় করেন এমেকা-ই।
তার সঙ্গে সুব্রতর রক্ষণের না-সারা রোগকেও খুঁচিয়ে দিয়ে গেলেন।
মোহনবাগান: শিল্টন, ধনরাজন, কিংশুক (প্রদীপ), ড্যানিয়েল (আনোয়ার), মোহনরাজ, মণীশ ভার্গব, রাকেশ, জুয়েল, নবি, অসীম, জাগতার (সাকতার)। |