তিনশো রান তোলার জন্য ভারত এক বা দু’জন ব্যাটসম্যানের উপর নির্ভর করে থাকতে পারে না। রাহুল দ্রাবিড় একা যদি ইংল্যান্ডে দলকে উদ্ধার করতে না পারে, সচিন তেন্ডুলকরও অস্ট্রেলিয়ায় সেই কাজটা করতে পারবে না। প্রথম সারির সব ব্যাটসম্যানের থেকেই রান চাই। বোলাররা যেখানে নজর কাড়ছে, ব্যাটসম্যানদের সেখানে কোনও অধিকার নেই তাদের চেষ্টায় জলাঞ্জলি দেওয়ার।
এই মুহূর্তে গম্ভীর আর সহবাগই নিশ্চয়ই নিজেদের সবচেয়ে দুর্ভাগা মনে করছে। গোটা বছরে একটাও টেস্ট সেঞ্চুরি নেই ওদের। দু’জনেই এই বছরে পাঁচশো রানের গণ্ডিও পার করতে পারেনি। গড়? সে তো মাত্র তিরিশের ঘরে! একই ভাবে সারা বছরে নিজের ব্যাটিং পারফরম্যান্স ফিরে দেখতে চাইবে না ধোনিও। সেঞ্চুরি যদি বা আছে, মোট রান পাঁচশো পেরোয়নি। গড়ও তিরিশ ছোঁয়নি। কোহলি এখনও টেস্ট টিমে নিজের জায়গা পাকা করার চেষ্টা চালাচ্ছে। সব মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ভারতের ব্যাটিংয়ের হাল ধরার দায়িত্ব সেই এসে পড়ছে দ্রাবিড়, তেন্ডুলকর আর লক্ষ্মণের উপর। |
ধোনিদের কপালের ভাঁজ আরও গভীর করে দেবে দু’টি ঘটনা। একটা হল অস্ট্রেলিয়ার বর্তমান বোলিং আক্রমণ। আর দু’নম্বর, বাকি তিনটে টেস্টেও ব্যাটিং কন্ডিশন ভারতীয়দের পক্ষে বন্ধুত্বপূর্ণ না হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা। সবাই ধরে নিচ্ছে সিডনি আর পার্থের পিচ তৈরি হচ্ছে তেন্ডুলকরদের ‘উষ্ণ’ অভিনন্দন জানাতে। অ্যাডিলেডের তুলনামূলক সহজ পিচে সিরিজ যখন পৌঁছবে, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যাবে।
যতই বৈপরীত্য থাক, ভারতের এই টিমটা কিন্তু সত্যিই অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ইতিহাস গড়ার ক্ষমতা রাখে। অসাধারণ পেস-অ্যাটাক যার ধার আছে, স্কিলও আছে। জাহির আরও ভালর দিকে এগোচ্ছে। ইশান্তের দুর্ভাগ্য তো আর সব সময়ের সঙ্গী থাকবে না! এখনও পর্যন্ত কিন্তু ভারতীয় পেসাররা অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানদের যত বার পরাস্ত করেছে, উল্টো দিক থেকে কিন্তু ততটা বেশি দেখা যায়নি।
আসলে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের বেশি নড়বড় না করে ইনিংসের প্রথম ৩০টা ওভার কাটিয়ে দিতে হবে। চাপটা নিতে হবে প্রথম তিন ব্যাটসম্যানকেই। উইকেট ব্যাটিংয়ের উপযোগী না-ই হতে পারে। নতুন বল খেলার দুর্বলতা বা ভয়ঙ্কর পেস খেলতে অসুবিধা হওয়ার মধ্যে লজ্জার তো কিছু নেই। টিকে থাকতে গেলে যদি খেলার চেয়ে বেশি বল ছাড়তে হয়, তা হলে তাই করতে হবে। নিজের স্বাভাবিক ব্যাটিং সেক্ষেত্রে বিসর্জন দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, প্যাটিনসন-সিডলরা রক্তের স্বাদ পেয়ে গিয়েছে। তাই তারা চাইবেই ভারতের জন্য একই রকমের খাদ্যে প্লেট সাজাতে। বাকি তিনটে টেস্টে ক্লার্ক যদি চার পেসারে খেলে আমি অন্তত এতটুকু অবাক হব না।
অস্ট্রেলিয়ানরা ক্রিকেট খেলার একটাই পদ্ধতি জানে আর সেটা হল ক্রমাগত আক্রমণ। পন্টিং-হাসিরা ভারতের পেস আক্রমণকে সমঝে খেলবে কিন্তু ভয়ে কাঁপবে না। তা হলে তো মেলবোর্নে টস জিতে ক্লার্ক ওই মেঘলা আবহাওয়ায় প্রথমে ব্যাটিং নিতই না। তা ছাড়া ওদের আত্মবিশ্বাসের পালে আরও হাওয়া জোগাবে এমসিজি-তে দু’ইনিংসেই খাদের ধার থেকে ফিরে আসাটাও। টেলএন্ডারদের এই ভরসা জোগানোটা কিন্তু ছোঁয়াচে।
আমি অবাক হব না সিরিজটা যদি বোলারদের হয়। তা হলে কিন্তু প্রতিটা রান করা এবং বাঁচানোই থাকবে গুনতির মধ্যে। ভারতের স্কিল আছে। সেটাকে শুধু এখন কাজে লাগাতে হবে। |