‘ডাইন’ তকমা দিয়ে হত্যা
গ্রেফতার প্রাক্তন সিপিএম সভাপতি
ডেবরার রাধামোহনপুরের ডিঙ্গল গ্রামে ‘ডাইন’ তকমা দিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক বৃদ্ধকে পিটিয়ে মারার ঘটনায় পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সিপিএম সভাপতি-সহ ৯ জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। হত্যা ও এই গ্রেফতার নিয়ে শোরগোল পড়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা জুড়েই। পুলিশের বক্তব্য, নিহতের পরিবারের অভিযোগের প্রেক্ষিতেই প্রাক্তন সভাপতিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি অভিযুক্তদেরও খোঁজ চলছে।
পাশের বাড়ির এক মহিলা দীর্ঘ দিন ধরে অসুস্থ। সালিশি বসিয়ে সে জন্য ‘দায়ী’ করা হয় বৃদ্ধ মতিলাল শিকারিকে (৬৬)। তাঁকে ‘ডাইন’ ঘোষণা করা হয় ওই সালিশিতে। তার পরেই মতিলালবাবু ও তাঁর স্ত্রী গৌরীদেবীকে বাড়ি থেকে টেনে রাস্তায় বের করে শুরু হয় প্রহার। অদূরেই স্থানীয় পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান রিনা নায়েকের বাড়ি। অভিযোগ, তাঁর বাড়ির সামনেই বৃদ্ধ দম্পতিকে পেটানো হয়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় মতিলালের। গুরুতর জখম হন গৌরীদেবীও। পরে তাঁকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে ২৯ জনের নামে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়। অভিযুক্তদের অধিকাংশই সিপিএম নেতাকর্মী-সমর্থক। এখনও পর্যন্ত ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদেরই অন্যতম ডেবরা পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সিপিএম সভাপতি রঘুনাথ মুন্ডা। যাঁর পায়ে ধরে কেঁদেও স্বামীর প্রাণ রক্ষা করতে পারেননি বলে জানিয়েছেন স্বয়ং গৌরীদেবী।
থমথমে ডিঙ্গল গ্রাম। নিজস্ব চিত্র।
এই ঘটনা ও গ্রেফতার নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে। তৃণমূলের অভিযোগ, পরিকল্পনা করেই গোটা ঘটনা ঘটানো হয়েছে। ঘটনার পিছনে মদত ছিল সিপিএম নেতা-কর্মীদের। নিহতের পরিবারের সবাই তৃণমূল-সমর্থক বলেই এই ঘটনা। রাধামোহন অঞ্চলেই বাড়ি তৃণমূলের ডেবরা ব্লক সভাপতি অলোক আচার্যের। তাঁর কথায়, “এমন ঘটনা ভাবাই যায় না। সিপিএম নেতা-কর্মীরা চাইলেই এই ঘটনা এড়ানো যেত। এর পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে।” অভিযোগ উড়িয়ে সিপিএমের ডেবরা জোনাল কমিটির সম্পাদক প্রাণকৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, “সমাজে যে এখনও কুসংস্কার রয়েছে, এ ঘটনা তারই প্রমাণ। আমরা ঘটনার তীব্র নিন্দা করি। এমন ঘটনা এড়াতে সচেতনতা বাড়ানোর প্রয়োজন। এ জন্য সবাইকেই উদ্যোগী হতে হবে।” ডেবরার কংগ্রেস নেতা পৃথ্বীশ ভট্টাচার্যও বলেন, “ কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তোলা প্রয়োজন।”
শুক্রবার ডিঙ্গল গ্রাম ছিল প্রায় পুরুষ-শূন্য। পুলিশি ধরপাকড়ের ভয়ে অনেকেই গ্রাম ছেড়েছেন। তবে বাড়ি ফিরেছেন গৌরীদেবী। তাঁর কথায়, “কী দোষ তাই জানি না। ওরা এসে বলল বাইরে যেতে হবে। আগেই ওরা সালিশি সভায় ডেকেছিল। আমরা যাইনি।” বৃদ্ধা বলেন, “কতবার বললাম, এ ভাবে মেরো না। ওরা কেউ কোনও কথা শুনল না।” পুলিশের দাবি, পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সিপিএম সভাপতি রঘুনাথ মুন্ডা ঘটনাস্থলেই ছিলেন। রঘুনাথবাবু-সহ ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠি বলেন, “তদন্ত শুরু হয়েছে। বাকি অভিযুক্তদেরও খোঁজ চলছে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.