অসমে ‘বিদেশি’ চিহ্নিতকরণের নামে বৈধ ভারতীয় নাগরিকদের কী ভাবে নিগ্রহ করা হচ্ছে আবার তার একটি প্রমাণ মিলল। ‘বিদেশি’ তকমা লাগিয়ে জেলে পুরে দেওয়া হয়েছিল পিতা রমেশ দাস ও পুত্র মঙ্গল দাসকে। ছয় মাস বিনা অপরাধে জেলে কাটানোর পর ট্রাইব্যুনালের রায়ে মঙ্গল দাস মুক্তি পেলেন। রায় দেওয়া হয়েছে, মঙ্গল ভারতীয় নাগরিক, বিদেশি নন। পিতা রমেশবাবু জামিনে মুক্তি পেলেও এখনও তাঁর গা থেকে খাতায়কলমে ‘বিদেশি’ ছাপ ওঠেনি। তবে পিতা-পুত্রের হয়ে আদালতে মামলা লড়ছেন যে আইনজীবী, লেই অনুপ চৌধুরীর আশা, ট্রাইব্যুনালে শুনানি হলেই অভিযোগমুক্ত হবেন রমেশবাবুও।
২০০৮ সালে ফরেনার্স ট্রাইবুনাল মঙ্গল দাসকে ‘বিদেশি’ বলে শনাক্ত করে। একই রায় বেরোয় তাঁর বাবা রমেশ দাসের বিরুদ্ধেও। মাস ছয়েক আগে পুলিশ সত্তরোর্ধ্ব রমেশবাবুকে ধলাই থানার জারইলতলার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে। পরদিন মঙ্গল কাছাড়ের পুলিশ সুপারের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। তখন থেকেই তিনি শিলচর সেন্ট্রাল জেলে বন্দি। রমেশবাবু অক্টোবরে জামিন পান।
পরে অবশ্য পিতা-পুত্র এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানান। আজ ৪৩ বছর বয়সি মঙ্গল দাসের আবেদনের শুনানির মামলায় ফরেনার্স ট্রাইবুনালের বিচারক এ কে চৌধুরী রায় দেন, সমস্ত কাগজপত্র পরীক্ষা করে মঙ্গল দাসকে ভারতীয় বলেই ঘোষণা করা হল। পরে তাঁর আইনজীবী অনুপ চৌধুরী বলেন, মঙ্গলবাবুর জন্ম হয়েছে কাটিগড়ার চণ্ডীপুরে। পড়াশোনা ওই এলাকাতেই। তাঁর বাবা রমেশ দাসেরও নাগরিকত্বের উপযুক্ত প্রমাণপত্র রয়েছে। পিতাপুত্র দু’জনেই ভারতের বৈধ নাগরিক। অকারণে তাঁরা নিগ্রহ ও হয়রানির শিকার।
রমেশ-মঙ্গলের পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, ১৯৯৭ সালে পুলিশ পিতা-পুত্রকে ‘বিদেশি’ সন্দেহ করে ট্রাইবুনালে মামলা পাঠয়েছে। পরে শুনানিও হয়েছে। কিন্তু এর বিন্দুবিসর্গ পুলিশ তাঁদের জানায়নি। তাই ট্রাইবুনালে হাজির হতে পারেননি দু’জনের কেউই। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই তাঁদের গায়ে ‘বিদেশি’ তকমা লাগিয়ে দেওয়া হয়।
এর আগে উধারবন্দের মানিক দাসকে একই ভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়। রায় ঘোষণার পর মানিককে রাতের অন্ধকারে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হয়েছিল। গত মাসে তাঁকেও ভারতীয় বলে রায় দেয় ট্রাইব্যুনাল।
নাগরিক অধিকার রক্ষা সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাধন পুরকায়স্থর অভিযোগ, প্রাথমিক তদন্ত ছাড়াই পুলিশ বৈধ ভারতীয় নাগরিকদের ‘বিদেশি’ বলে ধরে নিয়ে ট্রাইব্যুনালে ঠেলে দিচ্ছে। এর পিছনে অসম সরকারের হাত আছে। তিনি বলেন, “এ সবই বাঙালি হওয়ার বিড়ম্বনা।” |