ভোটের ঠিক আগে ভেঙে গেল মণিপুরের শাসক জোট। অন্য দিকে মণিপুরের বিরোধী দলগুলি প্রাক নির্বাচনী জোট গড়ল। সব মিলিয়ে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বেজায় সমস্যায় পড়েছেন মণিপুরের কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী, ওক্রাম ইবোবি সিংহ। সন্ত্রাস, ভুয়ো-সংঘর্ষের অভিযোগ, বন্ধ-অবরোধ আর মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কায় এমনিতেই বর্তমান সরকারের জনপ্রিয়তা গত এক বছরে একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে। তার উপর শাসকদলকে ধাক্কা দিতে বিরোধীরা জোটবদ্ধ হওয়ায় আশঙ্কা বাড়ছে কংগ্রেস শিবিরে। যদিও মুখ্যমন্ত্রী ইবোবি মুখে বলছেন, “দশম বিধানসভা নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে কংগ্রেসই।”
মণিপুরের বর্তমান শাসক জোট ‘সেকুলার প্রোগ্রেসিভ ফ্রন্ট’-এ তারা আর থাকছে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে সিপিআই। কিছু দিন আগে বাম দলটিকে ‘বোঝা’ বলে প্রকাশ্যে মন্তব্য করেছিলেন কংগ্রেস নেতারা। তারপর থেকেই জোটে চিড় ধরতে শুরু করে। সিপিআইয়ের বক্তব্য, মন্ত্রিসভা হোক বা গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সিদ্ধান্ত-কোথাওই সিপিআইয়ের মতামতকে গুরুত্ব দেয়নি কংগ্রেস। নবম বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ৩১টি ও সিপিআই ৪টি আসন পেয়েছিল। ১২ সদস্যের মন্ত্রিসভায় সিপিআইয়ের একজন মন্ত্রীও রয়েছেন। ইদানীং ক্ষমতাসীন প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের বক্তব্য ছিল, ছোট দল জোটে এলে আপত্তি নেই। তবে তাদের মন্ত্রিসভায় ঠাঁই হবে না। সম্মানে আঘাত লাগায় জোট থেকে বেরিয়ে এ বার সিপিআই প্রথম পর্যায়ে একতরফা ১৯ প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে দেয়। এমনকী দুর্নীতির অভিযোগে বর্তমান চার বিধায়কের একজন, ইউ দেবেনকে সিপিআই নেতৃত্ব টিকিটও দেননি। দেবেনকে দলবিরোধী কাজ ও বিধায়ক তহবিলের টাকা নয়ছয় করার অভিযোগে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সিপিআই-এর রাজ্য সম্পাদক এম নর জানান, প্রাক নির্বাচনী আঁতাত না করলেও যারাই সরকার গড়বে সিপিআই তাদেরই সমর্থন করে সরকারের অংশ হবে।
মুখ্যমন্ত্রী ইবোবি ও কংগ্রেস সভাপতি গাইখাংগাম অবশ্য দাবি করছেন, কংগ্রেস এ বার একাই সরকার গড়তে পারবে। ইবোবি বলেন, “গত দু’দফায়, কংগ্রেস গণতান্ত্রিক সংগঠনগুলিকে শক্তিশালী করার দিকে মন দিয়েছে। স্বশাসিত জেলা পরিষদ, পুরসভা, নগর পঞ্চায়েতগুলি এখন অনেক শক্তিশালী। তৃতীয়বার
ক্ষমতায় এসে আমরা কর্মসংস্থান ও কৃষির বিকাশে মন দেব। অন্য কেউ আমাদের সমর্থন জানাতে চাইলে ভাল। না হলে কংগ্রেস একাই সরকার গড়তে চলেছে।”
তবে বিরোধীদল-মণিপুর পিপল্স পার্টি, এনসিপি, জনতা দল (ইউ) কংগ্রেস-বিরোধী জোট গড়ে ভোটযুদ্ধে নামায় কংগ্রেসের জয় ততটা সহজ হবে না। এমপিপি সভাপতি নিমাইচাঁদ লুয়াং, এনসিপি সভাপতি তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রাধাবিনোদ কৈজাম, জনতা দল (ইউ)-এর রাষ্ট্রীয় সাধারণ সম্পাদক অরুণকুমার শ্রীবাস্তব একজোট হয়ে জোট গড়ার সিদ্ধান্ত নেন। জোটে যোগ দিয়েছে আরজেডি-ও। বিরোধীদের দাবি, আসন্ন নির্বাচনে স্বেচ্ছাচারী, অকার্যকর কংগ্রেস সরকারকে তারা উৎখাত করবে। মণিপুরের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপির সাধারণ সম্পাদক তাপির গাও জানান, দিন দুয়েকের মধ্যেই বিজেপিও বিরোধী জোটে যোগ দিচ্ছে। এমপিপির হাতে এখন ৫ জন বিধায়ক রয়েছে। এনসিপির রয়েছে চার ও আরজেডির তিন বিধায়ক। বিজেপি ও জনতা দল (ইউ)-এর কোনও বিধায়ক এখন নেই। এক বিধায়ক নিয়ে রাজ্যে সবে মাথা তোলা তৃণমূল কংগ্রেস এখনও কোনও শিবিরে যোগ দেয়নি। তৃণমূল ও জনতা দল (এস) আপাতত প্রার্থী হওয়ার জন্য রাজ্য জুড়ে আবেদন পত্র সংগ্রহে ব্যস্ত। |