মুম্বইয়ে হঠাৎই ফিকে হয়ে গেল অণ্ণা হজারের আন্দোলন। দিল্লিতে শরিক তৃণমূলের জন্য রাজ্যসভায় লোকপাল নিয়ে কার্যত ভোটাভুটি থেকে মুখ লুকোল সরকার। উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনের আগে এই দু’টি ঘটনাই দলকে বাড়তি ফায়দা দেবে বলে মনে করছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
উত্তরপ্রদেশ ভোটে দুর্নীতি ও লোকপাল এই দু’টি বিষয়কে পুঁজি করেই প্রচারে নামছে প্রধান বিরোধী দল। উদ্দেশ্য একটাই, এত দিন যে লড়াইটা ছিল ‘অণ্ণা বনাম কংগ্রেস’, সেটা এ বারে ‘বিজেপি বনাম কংগ্রেসে’ পরিণত করা। মুম্বইয়ে অণ্ণার অনশনে তেমন সাড়া না পাওয়ায় বিজেপি কংগ্রেস-বিরোধিতার রাশটি এ বারে পুরোপুরি নিজেদের হাতে তুলে নিতে চাইছে। গত কাল রাজ্যসভায় নিজের শরিকের হাতে কংগ্রেসের ‘পরাস্ত’ হওয়ার ঘটনাও আরও অক্সিজেন জুগিয়েছে তাদের।
আজ সন্ধ্যায় সভাপতি নিতিন গডকড়ীর বাড়িতে দলের রণকৌশল স্থির করতে বৈঠকে বসেন লালকৃষ্ণ আডবাণী, অরুণ জেটলি, সুষমা স্বরাজরা। তাঁরা স্থির করেন, গত কাল মধ্যরাতে যে ভাবে রাজ্যসভা মুলতুবি করে দিয়েছে সরকার, তার প্রতিবাদে ৩ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়ে স্মারকলিপি জমা দেওয়া হবে। আর সে দিন থেকেই সপ্তাহ জুড়ে দেশের সব বড় শহরে ধর্নায় বসবেন বিজেপি নেতারা। আজ তার মহড়া হিসাবে দিল্লিতে তাঁরা দলের সদর দফতর থেকে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন পর্যন্ত প্রতিবাদ মিছিলও করেন।
বিজেপির এক শীর্ষ নেতার কথায়, অণ্ণা হজারের আন্দোলন ফিকে হলে বিজেপির রাজনৈতিক লোকসান নেই। বরং অণ্ণার আন্দোলন ঘিরে আরএসএস যে দাপট দেখানোর সুযোগ পেত, সেটি বিফল হওয়ায় বিজেপির উপর সঙ্ঘের প্রভাব কিছুটা কমবে। আডবাণী-সুষমা-জেটলিরা অনেক দিন ধরেই অণ্ণার কংগ্রেস-বিরোধিতার জায়গাটি দখল করতে চাইছেন। চাইছেন, অণ্ণা তাঁদের সহযোগীর ভূমিকা পালন করুন। এমনকী, রথযাত্রায় বেরিয়ে বারবার আডবাণী সেই কথাটিই প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছেন। মুম্বইয়ে অণ্ণার আন্দোলন ‘ব্যর্থ’ হওয়ায় আখেরে লাভই হয়েছে। এর পরেও অণ্ণা ভোটমুখী রাজ্যগুলিতে প্রচার করবেন। তাতেও বিজেপির কোনও ক্ষতি নেই। এখন সেই সুযোগই এসেছে বিজেপির কাছে।
এই কৌশলের অঙ্গ হিসাবে আজ থেকেই ময়দানে নেমে পড়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। এ দিন জেটলি ও সুষমা দলের সদর দফতরে সাংবাদিক সম্মেলন করেন। সেখানে মনমোহন সিংহকে তুলোধোনা করা হয়। তাঁদের মতে, গত কাল মধ্যরাতে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হল, অথচ প্রধানমন্ত্রী, প্রণব মুখোপাধ্যায় উপস্থিত থেকেও নীরব দর্শকের ভূমিকা নিলেন! সুষমার মতে, “দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের সময় ভীষ্ম পিতামহ ও দ্রোণাচার্য নীরব দর্শক ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী এবং প্রণববাবুও সেই ভূমিকা নিয়েছিলেন। তাঁদের ‘আশীর্বাদেই’ গত কাল গোটা ষড়যন্ত্রের চিত্রনাট্য রূপায়িত হয়েছিল।”
গত রাতেই মনমোহন সিংহের ইস্তফার দাবিতে সরব হয়েছিলেন জেটলি। এই পরিস্থিতিতে সংসদের পরবর্তী অধিবেশনে তাঁরা অনাস্থা প্রস্তাব আনবেন কি না, তা নিয়ে অবশ্য সরাসরি জবাব এড়িয়ে গিয়েছেন জেটলি বা তাঁর দলের নেতারা। সুষমা বলেন, “সেটি পরের অধিবেশনের সময় বিবেচনা করা হবে।” এখন পাঁচ রাজ্যে, বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশে তাঁরা দেখাতে চাইছেন, কংগ্রেস দুর্নীতি আটকাতে চায় না। তাই কঠোর লোকপাল তৈরি না করে পিছিয়ে এল। |