লোকসভায় সঙ্কটজনক মুহূর্তে দল পরিচালনায় ‘ব্যর্থতার’ জন্য তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মুখ্য আহ্বায়ক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর ক্ষুব্ধ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, রাজ্যসভায় যদি এত মসৃণ ভাবে তৃণমূল তার অবস্থান স্পষ্ট করে দিতে পারে, তা হলে লোকসভায় এমনটা হল না কেন? রাজ্যসভার তিন নেতা মুকুল রায়, সুখেন্দুশেখর রায় এবং ডেরেক ও ব্রায়ান নিজেদের মধ্যে সমন্বয় ঘটিয়ে সংশোধনী দিয়েছেন এবং অধিবেশন কক্ষে যে ভাবে তৃণমূলের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন তার প্রশংসা করেছেন মমতা। কিন্তু লোকসভায় সরকারের পক্ষে ভোট দিয়ে রাজ্যসভায় বিরুদ্ধে যাওয়া এই বৈপরীত্যের জন্য সুদীপ-কল্যাণকেই দায়ী করছেন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব।
মঙ্গলবার লোকসভার ভোট মিটে যাওয়ার পরেই মমতা তাঁর ক্ষোভের কথা জানান দলীয় নেতাদের। পরের দিন বিভিন্ন আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতারা। এমনকী, বিজেপি-র অরুণ জেটলির সঙ্গেও কথা হয় তাঁদের। মমতার স্পষ্ট নির্দেশ ছিল, কোনও ভাবেই রাজ্যের অধিকারের প্রশ্নে আঘাত হানতে দেওয়া চলবে না। সরকারকে বোঝাতে হবে যাতে তারা সংশোধনীগুলি মেনে নেয়। তা না হলে প্রয়োজনে বিরুদ্ধে ভোট দিয়েও কেন্দ্রকে রুখতে হবে। সেই অনুযায়ী দফায় দফায় বৈঠকের পাশাপাশি মমতার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে যান মুকুল রায়। এমনকী, রাজ্যসভায় বিতর্কের দিনও একটি মোবাইল আলাদা করে রেখে দেওয়া হয়। তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে যোগাযোগের হটলাইন হিসেবে যা ব্যবহার করা হয়েছে। মমতার বক্তব্য, লোকসভায় কল্যাণ যে বক্তৃতাটি দিয়েছিলেন, সেটিতে লোকপাল বিলের লোকায়ুক্ত সংক্রান্ত অংশের যথেষ্ট সমালোচনাই করা হয়েছে। তার পরও সরকারের পক্ষে ভোট দেওয়াটা হাস্যকর। যদি কোনও বিভ্রান্তি হয়েও থাকে সে ক্ষেত্রে বাইরে বেড়িয়ে এসে
মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়কে ফোন করে নিলেই তিনি অবস্থান স্পষ্ট করে দিতেন।
মমতার মতে, সংসদীয় রাজনীতিতে প্রতি মুহুর্তে রঙের বদল ঘটে। সে ভাবে নিজেকে টানটান রাখা উচিত নেতাদের। মমতা নিজেও চেষ্টা করেছিলেন তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করার। কিন্তু কোনও ভাবেই সম্ভব হয়নি তা।
এই ঘটনার পর লোকসভায় তৃণমূল নেতৃত্ব পরিবর্তন করা হবে কিনা, তা নিয়ে দলের অন্দরে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। পরিবর্ত নেতার কথাও ভাবা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। তবে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় পদত্যাগ করেছেন বলে যে খবরটি গত দু’দিন ধরে রাজনৈতিক অলিন্দে ঘোরাফেরা করছে সেটা যে সর্বৈব মিথ্যা, তা জানিয়েছেন কল্যাণ নিজেই। তিনি পুরী গিয়েছেন পুজো দিতে। জানালেন, “আমার সঙ্গে নেত্রীর কথা হয়েছে। পদত্যাগ করার মতো কোনও কারণ ঘটেনি।” সংসদীয় দলনেতা মুকুল রায়ও এই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন। |