লোকায়ুক্ত নিয়ে মমতা দৃঢ় অবস্থান নেওয়ায় খুবই খুশি ভর্তৃহরি মহতাব।
ভর্তৃহরি বিজেডি-র চতুর্থ বারের সাংসদ, ওড়িশার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হরেকৃষ্ণ মহতাবের পুত্র। গত মঙ্গলবার লোকসভায় লোকপাল এবং লোকায়ুক্ত নিয়ে বিতর্কের সময় এই ভর্তৃহরিই রাজ্যগুলির উপর বঞ্চনার প্রসঙ্গ
তুলে সরকারের সমালোচনা করেছিলেন। তাঁর বক্তব্য
ছিল, এই বিল এলে কেন্দ্র রাজ্যগুলির উপর কলকাঠি নাড়বে। ফলে আঞ্চলিক দলগুলির উচিত, নিজেদের স্বার্থে এই বিলের বিরুদ্ধে একজোট হওয়া।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরে ঘরোয়া মহলে জানিয়েছিলেন কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব তাঁকে যা বুঝিয়েছিলেন আর সংসদে প্রস্তাবিত বিলে যা ছিল, তা অনেক আলাদা। ভর্তৃহরি মহতাবের বক্তৃতা শুনেই বিষয়টি তাঁর কাছে স্পষ্ট হয়। তৎক্ষণাৎ তিনি যোগাযোগের চেষ্টা করেন লোকসভায় তৃণমূলের দুই নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। কিন্তু তখন তাঁদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। ফলে লোকসভায় বিলের পক্ষেই ভোট পড়ে যায় তৃণমূলের।
ভর্তৃহরি মহতাব |
কিন্তু রাজ্যসভায় মমতার দল বিলের বিরুদ্ধে সংশোধনী এনে যে অনড় অবস্থান নিয়েছে, তাতে মমতার প্রতি খুবই কৃতজ্ঞ ভর্তৃহরি! বললেন, “আমরা ছোট দল। আমাদের কথা কে শোনে? আঞ্চলিক দলগুলির হয়ে যে স্বর সে দিন সংসদে তুলেছিলাম, তা হারিয়েই যেত যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টিকে এতটা গুরুত্ব দিয়ে না দেখতেন! তিনি চাপ তৈরি করার ফলেই সরকার পিছিয়ে যেতে
বাধ্য হয়েছে।”
১৯৯৮ সাল থেকে মমতার সঙ্গে পরিচয় মহতাবের। মহতাব বলেন, “উনি আমার বড় দিদির মত। বিভিন্ন বিষয়ে সংসদে আমরা আলোচনা করেছি। একসঙ্গে কাজ করেছি। কিন্তু এই লোকায়ুক্ত নিয়ে যে ভাবে তাঁর সাহায্য পেলাম, তা অতুলনীয়। বিজেপিও আমাদের বক্তব্যকে সমর্থন করেছে ঠিকই। কিন্তু তারা তো বিরোধী দল। সরকারের শরিক কোনও দল যখন সরব হয়ে ওঠে, তখন তা সম্পূর্ণ ভিন্ন মাত্রা পায়।”
রাজনীতির পাশাপাশি সাংবাদিকতাও করেন ভর্তৃহরি! কটকের একটি স্থানীয় সংবাদপত্রের সম্পাদক তিনি। মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েকের বিশেষ শ্রদ্ধার পাত্রও বটে। ওড়িশার সরকারি নেতৃত্বের সঙ্গে কোনও কথা না বলেই মঙ্গলবার রাতে মহতাব লোকসভায় ঘোষণা করে দিয়েছিলেন, ওড়িশায় চার মাসের মধ্যে লোকায়ুক্ত আনা হবে। এবং তা আনা হবে রাজ্যের নিজস্ব আইন অনুযায়ীই। ভর্তৃহরি এ কথা বলেছেন শুনে তিন দিনের মধ্যে নবীন বিষয়টি আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করে দেন।
এ হেন ভর্তৃহরি আজ বলছেন, “আমি যেমন ওড়িশাকে ভালবাসি, তেমন এটাও চাই না ভারত দুর্বল হয়ে যাক। একই কথা প্রযোজ্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রেও। কিন্তু দিল্লির নেতাদেরও তো দায়িত্ব রয়েছে রাজ্যের মন বোঝার।” এই মন বোঝানোর লড়াইয়ে মমতাকে পাশে পেয়ে নিজেকে যথেষ্ট শক্তিশালী বলে মনে করছেন মহতাব। |