রাগ তো আসে আস্তে আস্তে, বলছেন রাজনীতি
সুপারি-কিলার!
গত কাল রাতের পর থেকে লালুপ্রসাদ যাদবকে রাজনৈতিক মহলে এ নামেই ডাকা হচ্ছে। কারণ একটাই। মনমোহন-সরকারকে সুবিধা করে দিতে কংগ্রেসের ‘অঙ্গুলিহেলনে’ লালুপ্রসাদের দলের সাংসদরাই রাজ্যসভায় হট্টগোল করেছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন বিরোধী দলের নেতারা। লালুপ্রসাদ নিজে অবশ্য এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর দাবি, তিনি মোটেই ‘সুপারি-কিলার’ নন। আর তাঁর দলের সাংসদ, এই মুহূর্তের সব থেকে আলোচিত চরিত্র রাজনীতি প্রসাদ জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি যা করেছেন, তার জন্য তিনি গর্বিত।
রাজধানীতে আজ সারা দিনই কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে চলেছে অভিযোগের চাপানউতোর। তাতে মুখ্যচরিত্র কিন্তু আরজেডি-প্রধান লালুপ্রসাদ আর তাঁর ঘনিষ্ঠ-সাংসদ রাজনীতি প্রসাদ। গত কাল ঘড়ির কাঁটা তখন রাত ১২টার দিকে এগোচ্ছে, অরুণ জেটলি, সীতারাম ইয়েচুরিরা রাজ্যসভায় সরকারকে চেপে ধরার চেষ্টা করছেন, তখনই হট্টগোল শুরু করে দেন আরজেডি সাংসদরা। হঠাৎ করেই অতিসক্রিয় হয়ে ওঠেন রাজনীতি প্রসাদ। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের প্রতিমন্ত্রী ভি নারায়ণস্বামীর সামনে চলে যান তিনি। তার পর তাঁর কাছে থেকে বিলের প্রতিলিপি ছিঁড়ে উড়িয়ে দেন। সেই হট্টগোল আর থামেনি। সমানে রাজ্যসভার কক্ষের মধ্যে ঘুরে ঘুরে স্লোগান দিতে থাকেন তিনি। সঙ্গে ছিলের আরজেডি-র অন্য তিন সাংসদও। ওই মধ্যরাতেও রাজ্যসভার গ্যালারিতে বসে গোটাটাই পর্যবেক্ষণ করে গিয়েছেন লালুপ্রসাদ।

গ্যালারিতে ছিলেন তিনি

ভন্ডুলের নায়ক রাজনীতি
বিজেপি নেতা অরুণ জেটলি বলেন, “শরিক এবং সমর্থনকারীরা বেঁকে বসার পরেই মনমোহন সরকার লালুপ্রসাদ যাদবকে দিয়ে হট্টগোল করাল।” বিরোধীদের অভিযোগ, এই হট্টগোলের অজুহাত দিয়েই অধিবেশন মুলতুবি করে দেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হামিদ আনসারি। জেটলি একে বলছেন ‘ইউপিএ-র কোরিওগ্রাফি’। আর সীতারাম ইয়েচুরি বলছেন, ‘সরকারি অর্কেস্ট্রা’।
রাজনীতি প্রসাদ এ সব অভিযোগ মানতে রাজি নন। তাঁর জবাব, “কংগ্রেস আর আরজেডি-র মধ্যে কোনও ম্যাচ-ফিক্সিং হয়নি।” প্রশ্ন উঠেছে, বিল নিয়ে যদি আপত্তিই থাকে, তা হলে প্রতিলিপি ছেঁড়ার জন্য রাত ১২টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হল কেন? রাজনীতির উত্তর, “যখন উচিত সময় এসেছে, তখনই ছিঁড়েছি।” তার মানে গোটাটাই পূর্ব-পরিকল্পিত? রাজনীতির দাবি, “কোনও পরিকল্পনা ছিল না। হঠাৎ করে রেগে গিয়ে আমি ওই কাজ করেছিলাম। তার জন্য কোনও অনুতাপ নেই।” হঠাৎ তখনই রেগে গেলেন কেন? রাজনীতি বলেন, “রাগ তো আস্তে আস্তে আসে।” আর এক আরজেডি-সাংসদ রামকৃপাল যাদব বলেন, “লোকপালে তফসিলি জাতি, সংখ্যালঘু সংরক্ষণ নিয়ে সরকারের কাছ থেকে কোনও ব্যাখ্যা না পেয়েই আমরা খেপে উঠেছিলাম।” তাঁরা যে কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মেলাননি, তা বোঝাতে আজ আরজেডি নেতারা মনমোহন সরকারকেও তুলোধনা করেছেন। রাজনীতি প্রসাদের অভিযোগ, “সরকার প্রশাসনিক জোরে চলে। কারও অনশনে মাথা নুইয়ে সরকার চলে না।’’
বিহারের রাজনীতিতে সেই পশুখাদ্য কেলেঙ্কারির সময় থেকেই লালুপ্রসাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ চরিত্র রাজনীতি প্রসাদ। সিবিআই কোর্টে মামলার গতিপ্রকৃতি নিয়ে তিনিই লালুকে সজাগ রাখতেন। তারই পুরস্কার হিসেবে লালুপ্রসাদ ২০০৬ সালে রাজনীতিকে রাজ্যসভার সাংসদ করেন। বিরোধীদের অভিযোগ, নিজের ঘনিষ্ঠ এই সাংসদকেই কাল দাবার ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার করেছেন লালু। কংগ্রেসের শিখিয়ে দেওয়া ছন্দেই পা ফেলেছেন তিনি। সে দিন বিকেলেই লালুপ্রসাদের সঙ্গে প্রণব মুখোপাধ্যায় বৈঠকে বসেছিলেন। লালুপ্রসাদ অবশ্য এসে জানিয়ে দেন, তিনি সরকারকে সমর্থন করবেন না। কিন্তু ভোটাভুটির সময় আরজেডি কী করবে, তা নিয়ে মুখ খোলেননি। বৈদ্যুতিন সাংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার সামনেও আসেননি। মুচকি হেসে বলেছেন, “মুখে পান আছে। কী করে বলি?”
দিনের শেষে লালুপ্রসাদের লাভ কী হল? রাজনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, আসলে কেন্দ্রে লালু ইউপিএ-র সঙ্গে আসতে চাইছেন। মন্ত্রী হতে চাইছেন। কিন্তু সংসদে আরজেডি-র শক্তি এতই কম যে কংগ্রেসের কাছে তিনি গুরুত্ব পাচ্ছেন না। আবার বিহারেও কংগ্রেসের সঙ্গে লালু জোট করতে চাইলেও রাহুল গাঁধী ‘একলা চলো’ নীতি নিয়েছেন। তাই যে কোনও উপায়ে লালু ইউপিএ-র ঘনিষ্ঠ হতে চাইছেন।
আর কী লাভ হল রাজনীতি প্রসাদের? আরজেডি-র নেতারাই বলছেন, কানাকড়িও নয়। অন্তত এই মুহূর্তে। আগামী বছরের এপ্রিলেই তাঁর রাজ্যসভার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। বিহার থেকে আরজেডি-র হাতে গোনা সাংসদ ও বিধায়কের জোরে পাজনীতি প্রসাদকে ফের রাজ্যসভায় ফেরানো মুশকিল লালুর পক্ষে। তাঁকে যে অন্য কোনও রাজনৈতিক পুরস্কার পাইয়ে দেবেন, তেমন সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না এই মুহূর্তে।
তবে? উত্তর জোগালেন এক রসিক আরজেডি সাংসদ, “লোকপাল বিল নিয়ে রাজনীতির ইতিহাসেই অমর হয়ে থাকবেন রাজনীতি প্রসাদ!”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.