রাস্তা থেকে ভূগর্ভ দুর্ভোগ সর্বত্রই। রাস্তায় মিছিল আর ভূগর্ভে মেট্রোবিভ্রাট দুয়ের জেরে শুক্রবার দীর্ঘ সময় ভুগতে হল শহরবাসীকে। বিশেষত মধ্য কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকায় রুদ্ধ হয়েছে যানের গতি। দীর্ঘক্ষণ বাসে-গাড়িতে আটকে থেকে নাজেহাল হয়েছেন মানুষ। সেইসঙ্গে সকাল থেকেই ছোটখাটো গোলমালের জেরে বিভিন্ন সময়ে ধাক্কা খেয়েছে মেট্রো-পরিষেবা। এরই মধ্যে বিকেলে পার্ক স্ট্রিট স্টেশনে চলন্ত মেট্রোর সামনে এক কিশোরী পড়ে যাওয়ায় ব্যাহত হয় ট্রেন চলাচল। যানজট থেকে বাঁচতে যাঁরা মেট্রোর ভরসায় ছিলেন, এর জেরে তুমুল নাকাল হন তাঁরাও।
পুলিশ জানায়, এ দিন দুপুর সওয়া দু’টো নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে কলেজ স্কোয়ার থেকে শুরু হয় মিছিল। চোলাইয়ের বিরুদ্ধে ডাকা ওই মিছিলে মমতা ছাড়াও ছিলেন অন্য নেতা-মন্ত্রীরা। কলেজ স্ট্রিট, নির্মলচন্দ্র দে স্ট্রিট হয়ে মিছিল গিয়ে পড়ে এস এন ব্যানার্জি রোডে। সেখান থেকে ডোরিনা ক্রসিং হয়ে সওয়া তিনটে নাগাদ মিছিল শেষ হয় মেট্রো চ্যানেলে। পুলিশ সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে তৃণমূলের তরফে জানানো হয়েছিল, গাঁধী মূর্তির পাদদেশে গিয়ে শেষ হবে মিছিল।
পরে সেই সিদ্ধান্ত বদলানো হয়। সে কারণেই মেট্রো চ্যানেল পর্যন্ত গিয়ে শেষ হয় মিছিল।
এ দিন নির্মলচন্দ্র স্ট্রিট থেকে মিছিল যতই এস এন ব্যানার্জি রোডের দিকে এগিয়েছে, ততই সংলগ্ন এলাকার বিভিন্ন ছোট-বড় রাস্তায় বেড়েছে যানজটের চাপ। সূর্য সেন স্ট্রিট, বিপিনবিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রিট, ক্রিক রো-সহ অন্যান্য রাস্তায় ধীরে ধীরে শ্লথ হয়েছে গাড়ির গতি। প্রভাব পড়ে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের যান-চলাচলের উপরেও। |
দীর্ঘক্ষণ যানজটে আটকে থাকতে হয় অগুনতি সাধারণ মানুষকে। তবে কোনও রাস্তা থেকেই গাড়ি ঘোরাতে হয়নি বলে ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
শহরের প্রাণকেন্দ্রের গতি যখন ধীরে ধীরে শ্লথ হতে শুরু করেছে, তখনই সাড়ে তিনটে নাগাদ পার্ক স্ট্রিট মেট্রো স্টেশনে কবি সুভাষগামী চলন্ত ট্রেনের সামনে পড়ে যায় এক কিশোরী। মেট্রোর তরফে জানানো হয়েছে, মোটরম্যানের তৎপরতায় সতেরো বছরের ওই কিশোরী বেঁচে গেলেও তাকে পিজি-তে নিয়ে যাওয়া হয়।
পুলিশের দাবি, জিজ্ঞাসাবাদে ওই কিশোরী জানিয়েছে, প্ল্যাটফর্মের ধার ঘেঁষে দাঁড়িয়েছিল সে। তখনই ট্রেন এসে পড়ায় আচমকা টাল খেয়ে পড়ে যায়। মেট্রো কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ট্রেনের অপেক্ষায় প্ল্যাটফর্মে ঠিক কোথায় দাঁড়াতে হবে, তা হলুদ রং দিয়ে দাগ টেনে স্পষ্ট ভাবেই চিহ্নিত করা থাকে। ওই দাগের বাইরে না গেলে লাইনে পড়ে যাওয়ার কথা নয়। তবে শেক্সপিয়র সরণি থানার পুলিশকে ওই কিশোরী যা-ই বলুক, মেট্রো কর্তৃপক্ষের অনুমান, ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়েছিল সে। মেট্রোর তরফে দাবি করা হয়, ওই ট্রেনটির মোটরম্যান জানিয়েছেন, কিশোরীটি যে ঝাঁপ দিচ্ছেন, তা বুঝেই তিনি তড়িঘড়ি ইমার্জেন্সি ব্রেক কষেন। চটজলদি থেমেও যায় ট্রেন। তাই অল্প ধাক্কা খেয়ে ওই কিশোরী লাইনের পাশে নালায় পড়ে যান। তার পরে তৃতীয় লাইনে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে মেয়েটিকে উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনার জেরে প্রায় ১০ মিনিট ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয় বলে মেট্রো সূত্রে খবর। |