লাভে টান, কেক-পার্বণে তবু মেতেছেন শহরের কারবারিরা
ড়দিনের প্লাম কেকের বাজার এখনও গরম। বর্ষশেষের ওয়ালনাট কেক বা ঘরোয়া চকোলেট কেকও স্বমহিমায়। এ সব মরসুমি কেকের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মধ্যবিত্ত বাঙালির প্রিয় টিফিন খুদে ‘কাপ কেক’দেরও জয়জয়কার। শহরের মেজ-সেজ কেক-কারবারিরা তবু ঘোর দুশ্চিন্তায়।
কয়লার সেকেলে আভেন থেকে সদ্যোজাত কেকের গন্ধেও দাড়িওলা রোগাটে প্রৌঢ়ের গোমড়া মুখে তাই হাসির লেশটুকু নেই। “এ ভাবে হয় না! এত টাকা খেসারত দিয়ে কেক বানাতে বসে ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াচ্ছি। চিনি-মাখনের দাম যে হারে বাড়ছে, তাতে পরের বছর কী হবে, ভাবলে গায়ে জ্বর আসে!”
বৌবাজারের ঘিঞ্জি গলি ওয়েস্টন স্ট্রিটের ওই ছোট্ট বেকারি আজমিরি স্রেফ বড়দিনের মরসুমেই কেকের সম্ভার সাজায়। নয়তো বছরভর পাঁউরুটি-বিস্কুট-বাখরখানির কারবার।
উৎসবের মরসুমে কেকের বাজার। নিউ মার্কেটে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
অন্যতম অংশীদার শেখ সানোয়ারের কথায়, “বড় দোকানগুলোর হয়তো পরতায় পোষাবে। কিন্তু আমাদের মতো ছোট দোকানের এই বাজারে টিকে থাকাই ভার।” তিন পুরুষের পুরনো বেকারির কর্তা হিসেব কষেন, এক বছরে চিনির দাম ২৩-২৪ টাকা থেকে হয়েছে ৩৬ টাকা, ৫০০ গ্রাম মাখন ১৩০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা। ডিমেরও দাম বেড়েছে। আর কেক তৈরির জন্য আলাদা মজুরির খরচ তো বেড়ে দ্বিগুণ। অথচ, কেকের দাম ১০ টাকার বেশি বাড়ানো যায়নি।
অফিসপাড়া, লালবাজারের ‘বাবু’রা অনেকেই এই বেকারির খদ্দের। সানোয়ার বলেন, “পুরনো খদ্দেরদের মুখ চেয়ে কেকে শুকনো ফল, চিনির ভাগ কমিয়ে আপস করতে পারছি না। আবার ১০ টাকার বেশি দাম বাড়ানোও সম্ভব নয়। একসঙ্গে বড় বরাত না-পেলে নতুন বছরে আর কেক-টেকে হাত দেব না।”
কাছেই বো স্ট্রিটে মন্টু বড়ুয়ার কেকের দোকানও স্রেফ বছরের এই সময়টায় ঝাঁপ খোলে। লাগোয়া অ্যাংলো ইন্ডিয়ান মহল্লা বো ব্যারাকের ‘আন্টি’রাও এই সময়ে নিজেরাই বাড়িতে কেক-ওয়াইন তৈরি করেন। কিন্তু তাতে বড়ুয়াদের কেকের পসার কমার লক্ষণ নেই। ছোট্ট মাফিন বা বাটারহার্ট থেকে শুরু করে ফ্রুট কেক, প্লাম কেকে অনায়াসে নিউ মার্কেট-পার্ক স্ট্রিটের সঙ্গে পাল্লা দেবেন তাঁরা। এ সব কেকের রূপকার মন্টুবাবুর স্বীকারোক্তি, “নানা গোত্রের কেক-ভক্তদের কথা মাথায় রেখেই এ বারও দাম কিছুটা কম রেখেছি। ২০ টাকা করে দাম বেড়েছে আমাদের বেশির ভাগ বড় কেকেরই। লাভের ভাগটা এর ফলে খানিক কমই হচ্ছে।”
শহরের পুরনো কেকের দোকান নিউ মার্কেটের শতাব্দীপ্রাচীন ‘নাহুম’ বা পার্ক স্ট্রিটের ‘ফ্লুরিজ’-এর অবশ্য ‘ভক্তের’ অভাব দেখা দেয়নি। দাম বাড়লেও ‘কেক-পার্বণে’ ঘুরেফিরে এই নামগুলো মনে পড়ে কলকাতার। অল্পবিত্ত ক্রেতাদের ঘরে কেক পৌঁছতে শহরের কয়েকটি দোকানের তবু নির্দিষ্ট স্ট্র্যাটেজি রয়েছে। কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় আউটলেট ছড়িয়ে দেওয়া ‘সুগার অ্যান্ড স্পাইস’-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুপ্রিয়া রায়ের কথায়, “তিন টাকার খুদে কেকের দামে কিন্তু আমরা হাত দিচ্ছি না। দাম বাড়ানো হচ্ছে বড়সড় প্লাম কেক বা ফ্রুট কেকের।” ‘মনজিনিস’-এর মার্কেটিং সুপারভাইজার দেবাশিস দাসও বলছেন, “শো-কেসে চোখ টানার ছোট কেকগুলোর দামে নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্তদেরও শখ মিটবে। লাভের জন্য বড় কেকগুলো আছে।”
ছোট বেকারিগুলোর অবশ্য এই সুযোগ নেই। তবু অগ্নিমূল্যের বাজারে টিকে থাকতে কোনও কোনও কেক-বিক্রেতা আত্মবিশ্বাসী। রফি আহমেদ কিদোয়াই রোডের সালদানহা পরিবার তিন প্রজন্ম ধরে কেক-কুকিজের কারবার চালাচ্ছে। নতুন বছরের কোকোনাট ম্যাক্রুন বা ওয়ালনাট কেকে রসিক জন তাদের রীতিমতো সমীহই করেন। দোকানের কর্ত্রী ডেবরা সালদানহার কথায়, “কেকের দাম মোটে পাঁচ শতাংশ বাড়িয়েও কিন্তু আমরা দিব্যি টিকে আছি। কেকের মান বজায় রাখাটাই আসল কথা। তা হলে ক্রেতারা ঠিকই সঙ্গে থাকবেন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.