শুক্রবার ছিল ২০১১ সালের লেনদেনের শেষ পর্ব।দুঃস্বপ্নের এক বছর শেষ হল শেয়ার বাজারে। দিনের শেষে সেনসেক্স ৮৯ পয়েন্ট পড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫,৪৫৪.৯২ অঙ্কে। শেয়ার বাজারে লগ্নিকারীরা বছরে মোট সম্পদ খুইয়েছেন ১৯ লক্ষ ৪৬ হাজার কোটি টাকা। বছরে সূচকের মোট পতন ৫০০০ পয়েন্টেরও বেশি। পাশাপাশি, ডলারের তুলনায় টাকার দামও ২০১১ সালে পড়ল প্রায় ১৯%। শুক্রবার অবশ্য তা পড়েছে মাত্র ৩ পয়সা। বাজার বন্ধের সময়ে ১ ডলারের দাম ছিল ৫৩.১০/১১ টাকা। লগ্নিকারীদের এখন চিন্তা, ২০১২ সাল কেমন যাবে তা নিয়েই।
২০০৮ সালে বিশ্ব-মন্দার পর শেয়ার বাজার বা বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনে এতটা খারাপ সময় আসেনি। ২০০৮-এ লগ্নিকারীরা সম্পদ খুইয়েছিলেন ৪০ লক্ষ কোটি টাকা। তার পর থেকে বাজারের অবস্থা ক্রমশ ভাল হচ্ছিল। ২০০৯-এ বাজারে লগ্নিকারীদের মোট সম্পদ (মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন) বেড়েছিল ৩০ লক্ষ কোটি। ২০১০-এ ১২ লক্ষ কোটি। অর্থাৎ এই দুই সালে বাজারে যতটা অতিরিক্ত সম্পদ সৃষ্টি হয়েছিল, ২০১১-এ তার প্রায় অর্ধেকই মুছে গেল।
ভারতের বাজারের হাল অবশ্য খারাপ হওয়া শুরু হয় ইউরোপের ঋণ মেটানোর সমস্যার বিরূপ প্রতিক্রিয়া দিয়েই। ২০০৮-এ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আর্থিক সমস্যা থাকলেও দেশের আর্থিক অবস্থার ভিত ছিল মজবুত। কিন্তু ২০১১-এ সেই ভিতটাই কিছুটা নড়বড়ে বলে বাজার সূত্রের খবর। এ জন্য লগ্নিকারীরা বিশেষ করে কেন্দ্রকেই দায়ী করছেন। পাশাপাশি তাঁদের অভিযোগ, নিছক রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে বিরোধী দলগুলিও আর্থিক সংস্কারের পথে বাধা সৃষ্টি করে চলেছে। |
বিদেশি আর্থিক সংস্থাগুলি ভারতের বাজারে ক্রমাগত শেয়ার বিক্রি করতে থাকায় এ বছর ডলারের চাহিদা বেড়ে যায়। নিরাপদ লগ্নির মাধ্যম হিসেবে ডলারকেই গুরুত্ব দিতে থাকেন তাঁরা। অন্য দিকে, আমদানিকারী সংস্থাগুলিও ডলারের চাহিদা বাড়িয়ে দেয়। এই দুইয়ের প্রভাবই টাকার এত বেশি পতন ডেকে আনে। যা ইন্ধন জোগায় সূচকের আরও পতনে।
২০০৮ সালে বিশ্ব জোড়া মন্দা ভারতের আর্থিক অবস্থাকে দুর্বল করতে পারেনি। আন্তর্জাতিক ব্যাঙ্কিং ব্যবসার ক্ষেত্রে লেম্যান ব্রাদার্সের মতো মহীরুহের পতনের পর একের পর এক বড় ব্যাঙ্ক, বিমা সংস্থা-সহ বহু আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান দেউলিয়ার খাতায় নাম লেখালেও দেশে সরকারি বা বেসরকারি ব্যাঙ্ক বা অন্য আর্থিক সংস্থার পতন হয়নি।
ভারতের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থাকে অক্ষত রাখার এই কৃতিত্বের প্রধান দাবিদার সে সময়ে ছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। কিন্তু বর্তমানে যে আর্থিক সমস্যা দেখা দিয়েছে, বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অনেকেই এখন তার জন্য রিজার্ভ ব্যাঙ্ককেই দায়ী করছেন। তাঁদের মতে, মূল্যবৃদ্ধি রুখতে শীষর্র্ ব্যাঙ্কের গতানুগতিক সুদ বাড়ানোর পথে হাঁটাই আজ শিল্প ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি করেছে।
সুদ বৃদ্ধির ফলে ঋণ নেওয়ার খরচ বাড়ায় শিল্প সংস্থাগুলির হাল খারাপ হওয়াই শেয়ার বাজারের পতনের অন্যতম কারণ বলেও মনে করছেন অনেকে। আর, বাজারের হাল খারাপ হওয়ায় কেন্দ্র তার বিলগ্নিকরণ কর্মসূচি রূপায়ণ করতে পারেনি। রাজকোষ ঘাটতির মোকাবিলায় এই বিলগ্নিকরণকেই অন্যতম হাতিয়ার করেছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। এই অবস্থায় ২০১২-এ বাজারের হাল ফেরার ব্যাপারে আদৌ আশাবাদী নন বিশেষজ্ঞরা। উল্টে তাঁদের মতে, মার্কিন বাজারের অবস্থা ভাল হতে শুরু করলে বিদেশি আর্থিক সংস্থাগুলি ভারত থেকে লগ্নি আমেরিকায় সরিয়ে নিতে পারে। |