বর্তমান সরকারের শিল্প ও জমি- নীতির জন্যই রাজ্য থেকে শিল্পপতিরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করলেন প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেন। তাঁর মতে, “শিল্পায়ন নিয়ে অনেক বড় বড় কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবের সঙ্গে তার আদৌ মিল নেই!”
সিপিএমের বর্ধমান জেলা সম্মেলনের শেষ দিন, শুক্রবার দুর্গাপুরের গাঁধী মোড় ময়দানে দলীয় সমাবেশে হাজির ছিলেন দলের দুই পলিটব্যুরো সদস্য, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও নিরুপমবাবু। সেখানেই নতুন সরকারের শিল্পনীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে নিরুপমবাবু বলেন, “বলা হচ্ছে, নতুন সরকার আসার পরে বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৬ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু রাজ্যে নতুন শিল্প স্থাপনের কথা আমার জানা নেই!”
প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রীর দাবি, পূর্বতন বাম সরকার ‘সুশৃঙ্খল নীতি’ নিয়েছিল। বাইরে থেকে শিল্পপতিরা এসেছিলেন বিনিয়োগ করতে। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পরে সেই পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে। নিরুপমবাবুর টিপ্পনী, “শিল্পায়ন ত্বরান্বিত করতে রাজ্য সরকার ‘এক জানালা’ নীতি নিয়েছে। দুঃখের বিষয়, জানলায় দাঁড়ানোর লোক নেই!”
ভিড়ে-ঠাসা ময়দানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের শিল্প ও জমি-নীতির সমালোচনায় মুখর ছিলেন বুদ্ধবাবুও। তাঁর বক্তব্য, ২০০১ থেকে রাজ্যে নতুন করে শিল্পায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। কিন্তু বিরোধীরা মানুষকে ‘ভুল বুঝিয়ে’ তা স্তব্ধ করে দেয়। বুদ্ধবাবুর কথায়, “আমাদের জমি নেওয়ার পদ্ধতিতে কিছু ত্রুটি ছিল। দ্রুত তা শুধরে নিয়েছিলাম। কিন্তু তার পরেও সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম নিয়ে গোলমাল পাকায় বিরোধীরা।” বিগত সরকারের দুই প্রাক্তন কর্ণধারই দাবি করেন, শিল্পায়নের যে সব প্রকল্পের কথা শোনা যাচ্ছে, সেগুলির সূত্রপাত হয়েছিল তাঁদের আমলেই। বর্ধমান জেলাতেই পানাগড়ে সার কারখানা, অন্ডালে বিমাননগরী, কাটোয়ায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। তাঁদের বক্তব্য, তাঁরা আগেই জমি অধিগ্রহণ করে দেওয়ায় বাকি দু’টির কাজ চললেও কাটোয়ায় বিদ্যুৎকেন্দ্রের জমি আদৌ জোগাড় হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
ক্ষমতায় এসেই মমতা জানিয়েছেন, শিল্প সংস্থাকেই সরাসরি জমি কিনতে হবে। সরকার অধিগ্রহণ করে দেবে না। কিন্তু বুদ্ধবাবু মনে করছেন, “মানুষকে বুঝিয়ে সরকার জমির ব্যবস্থা করে না-দিলে শিল্পপতিদের পক্ষে এক লপ্তে উপযুক্ত জমি জোগাড় করা দুরূহ ব্যাপার! রাজ্যে শিল্প হবে না।” প্রসঙ্গত, এ বারের সম্মেলনে ফের বর্ধমানের জেলা সম্পাদক হয়েছেন অমল হালদারই। |