স্মৃতিমেদুর প্রাক্তনীরা
সার্ধশতবর্ষের সমাপ্তিতে পুনর্মিলন জেনকিন্সে
কেউ স্কুলে ঢোকার পরে সোজা ঢুকে পড়লেন ক্লাস রুমে। কয়েক দশক আগে ঠিক যে বেঞ্চে বসতেন তিনি, অনুমান করে সেখানে গিয়ে বসে রইলেন দীর্ঘক্ষণ। কেউ স্কুলে ঢুকেই ব্যস্ত হয়ে পড়লেন স্কুল জীবনের বন্ধুদের খোঁজে। কেউ বা ব্যস্ত হয়ে পড়লেন স্কুলের এখনকার ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলার জন্য। বুধবার কোচবিহার জেনকিন্স স্কুলে প্রাক্তনীদের পুনর্মিলন উৎসব এমনই স্মৃতিভারাক্রান্ত দৃশ্যের সাক্ষী হয়ে রইল। কোচবিহার রাজ পরিবারের আমলে তৈরি এই স্কুলটির দেড়শো বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের সমাপ্তি উৎসবে প্রাক্তনীদের মিলনমেলার আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে সুদূর আমেরিকা, ইংল্যান্ড, জার্মানি, আফ্রিকা থেকে হাজির হয়েছেন প্রাক্তন ছাত্ররা। এসেছেন ভাইজাগ থেকে শুরু করে দেশের নানা প্রান্তের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রাক্তন ছাত্ররাও। সকলেই স্কুল চত্বরে ঘুরে ঘুরে খুঁজে বার করার চেষ্টা করেছেন ফেলে যাওয়া স্মৃতি। আমেরিকার নিউইয়র্কের বাসিন্দা কমলেন্দু সরকার যেমন। প্রায় আড়াই দশক ধরে আমেরিকায় রয়েছেন। স্কুলের গণ্ডি পেরিয়েছেন তারও অনেক বছর আগে ১৯৬৯ সালে। আমেরিকার নিউইয়র্কে মেট্টো রেলের প্রিন্টিং সুপারভাইজার হিসাবে কর্মরত কমলেন্দু সরকার কয়েক হাজার মাইল পেরিয়ে বুধবার সাতসকালে কোচবিহারের জেনকিন্স স্কুলে হাজির।
ছবিটি তুলেছেন হিমাংশুরঞ্জন দেব।
তিনি বললেন, “স্রেফ ছাত্র জীবনের স্মৃতির টানে এতদূর থেকে এসেছি। বহু পুরানো বন্ধুর দেখা পেলাম। ওঁরাই আমাকে আসতে বলেছিল। না এলে অনেক কিছু মিস হয়ে যেত।” সুদূর দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে এসেছেন সত্তরের দশকে স্কুলের গণ্ডি পেরনো কল্লোল দাস। যিনি প্রায় চার বছর ধরে সেখানে একটি বহুজাতিক সংস্থার সিনিয়র মানেজ্যার হিসাবে ওই দেশে কর্মরত। কল্লোল দাস বলেন, “বাবার চাকরি সূত্রে কোচবিহারে থাকায় এই স্কুলে পড়েছি। দারুণ লাগছে।’’ ইংল্যান্ড থেকে চলে এসেছেন ওই দেশের নাগরিত্ব পেয়ে যাওয়া প্রবীণ শ্যামল সেনগুপ্ত। ১৯৫৫ সালে এই স্কুল থেকে পাস করেন তিনি। এখন ছেলের সঙ্গে ইংলন্ডেই রয়েছেন। নাগরিকত্বও পেয়েছেন। এত দূর থেকে ছুটে আসার একটাই ব্যাখ্যা তাঁর, “পুরানো শেকড়ের টান এড়াতে পারিনি।” দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা জেনকিন্সের প্রাক্তন ছাত্রদের মধ্যে ভাইজাগ থেকে রবিন ঘোষ, দূর্গাপুর থেকে দিলীপ দাস, কলকাতার মিলন দত্ত, শিলিগুড়ির বিভাস দাসের মতো কয়েকশো প্রাক্তনীও ছুটে এসেছেন স্রেফ পুরানো শেকড়ের টানে। তাদের কেউ দিনভর আড্ডায় মাতলেন। কেউ আবার শুরুতেই পুরানো ক্লাসঘরে ঢ়ুকে নস্টালজিক হয়ে পড়লেন। অনেকে আবার হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি টাটকা করতে বেশ কিছুক্ষণ ক্লাস রুমের বেঞ্চেও বসে থাকলেন। সব মিলিয়ে দেশবিদেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা প্রাক্তনীদের উপস্থিতিতে জমজমাট ফ্রেমে বাঁধা পড়ল কোচবিহারের রাজইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা জেনকিন্স স্কুলের সার্ধ শতবর্ষের সমাপ্তি পর্বের পুনর্মিলন উৎসব। ২৬ ডিসেম্বর থেকে জেনকিন্স স্কুলের ১৫০ বছর পূর্তি সমাপ্তি অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। ২৬ ডিসেম্বর রাজ্যপাল এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানের অঙ্গ হিসাবেই বুধবার স্কুল চত্বরে পুনর্মিলন উৎসবের আয়োজন করেন উদ্যোক্তারা। উৎসব কমিটির সম্পাদক তথা জেনকিন্স স্কুলের প্রধান শিক্ষক কার্তিকচন্দ্র পাত্র বলেন, “সত্যিই দারুণ অনুভূতি। সব মিলিয়ে সাত শতাধিক প্রাক্তন ছাত্র বিকেল পর্যন্ত উপস্থিতি রেজিস্ট্রেশন করিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বিদেশের অনেকে রয়েছেন। সংখ্যাটা আরও বাড়বে মনে হচ্ছে।” ভাইজাগ থেকে আসা ব্যবসায়ী রবিন ঘোষ পুরানো ক্লাস ঘর ঘুরে দেখেন। ফ্লোরিডার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জ্ঞানদা ভট্টাচার্য এদিনও ফোন করে অনুষ্ঠানের খোঁজ নিয়েছেন। চিকিৎসক মিলন দত্ত যেমন নস্টালজিক হয়ে বললেন, “আমাদের শিক্ষকরা খুব ভাল পড়াতেন। বিশেষ করে কালীপদ মুখোপাধ্যায়ের কথা আজ মনে পড়ছে।” এসবের পাশাপাশি অন্য ছবিও দেখা গিয়েছে। যুযুধান দুই শিক্ষক সংগঠন শিবিরের নেতা বকুল দত্ত (এবিটিএ) ও বাণীকান্ত ভট্টাচার্য (এসটিইএ) হাসিমুখে আড্ডায় ব্যস্ত। সব মিলিয়ে আক্ষরিক অর্থেও পুনর্মিলন উৎসব নজির তৈরি করল। প্রসঙ্গত, ১৮৬১ সালে জেনকিন্স স্কুল প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। ওই স্কুলের সঙ্গে মহারাজ নরেন্দ্রনারায়ণ ও ব্রিটিশ সরকারের তরফে কোচবিহার রাজ্য দেখভালের দ্বায়িত্বে থাকা মেজর ফ্রান্সিস জেনকিন্সের স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.