ঘরে-বাইরে চাপের মুখে পড়ে অবশেষে আন্দোলন স্থগিত রাখার কথা ঘোষণা করল উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সমিতি। বুধবার কলকাতায় শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর উপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আন্দোলনকারী সংগঠনের বৈঠকের পরে ওই সিদ্ধান্তের কথা জানান সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেবীপ্রসাদ বুট। তিনি জানান, সকলের আর্জির কথা মাথায় রেখেই উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অরুণাভ বসুমজুমদারের অফিসের সামনে থেকে অবস্থান তুলে নেওয়া হবে।
ওই বৈঠকে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব, রাজ্য উচ্চশিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান সুগত মারজিৎ, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সেখানকার শিক্ষক সংসদের সচিব ও উচ্চশিক্ষা দফতরের কর্তারা ছিলেন। সরকারি সূত্রের খবর, ওই বৈঠকের গোড়াতেই ব্রাত্যবাবু ও গৌতমবাবু স্পষ্ট জানান, উপাচার্যকে অফিসে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে যে আন্দোলন দিনের পর দিন চলছে তা তুলে নিতেই হবে। তা নিয়ে প্রায় সকলেই সহমত হন। কিন্তু, উচ্চ শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান জানুয়ারি মাস পর্যন্ত কাজ করার পরে উপাচার্যকে ছুটিতে পাঠানোর প্রস্তাব দিলে তাতে আপত্তি করেন উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী-সহ অনেকেই। শেষ পর্যন্ত ওই প্রস্তাব গৃহীত হয়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা ব্যাপারে যে সব অভিযোগ রয়েছে তা খতিয়ে দেখার জন্য তিন সদস্যের কমিটি গঠনের সিদ্ধান্তে সকলেই একমত হন। বৈঠকের পরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “সুগত মারজিতের নেতৃত্বে তিন সদস্যের পরিদর্শক দল গড়া হচ্ছে। ওই দল শীঘ্রই বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনে যাবে। কর্মচারী সমিতি আপাতত আন্দোলন স্থগিত রাখার আশ্বাস দিয়েছে। আশা করি, দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।”
ওই বৈঠকে ছিলেন টিচার্স কাউন্সিলের সদস্য তথা তৃণমূল কংগ্রেসের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক রথীন বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, আচার্য তথা রাজ্যপাল যাঁর মেয়াদ তিন মাসের জন্য বাড়িয়েছেন, তাঁকে ছুটিতে যেতে বলার প্রস্তাব মানা যে সম্ভব নয়, সে কথা উচ্চ শিক্ষামন্ত্রীও স্বীকার করেছেন।
আন্দোলন স্থগিত হওয়ায় ছাত্রছাত্রীরাও স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন। কারণ, নভেম্বরের গোড়া থেকে অফিসের সামনে সমিতির অবস্থান-বিক্ষোভ চলতে থাকায় উপাচার্য ঢুকতে পারছেন না। তার উপরে উপাচার্যের মেয়াদ (যা ফুরোনোর কথা ছিল ৩১ ডিসেম্বর) বৃদ্ধি হওয়ায় আন্দোলন তীব্র করে সমিতি। এ দিন বৈঠকের পরে কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জানান, কোনও চাপের মুখে নয়, উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গড়া হবে বলে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করায় আন্দোলন স্থগিত রাখা হচ্ছে। তাঁর দাবি, “কর্মচারী সমিতির আন্দোলনের জেরে আদৌ অচলাবস্থা তৈরি হয়নি বিশ্ববিদ্যালয়ে।”
আন্দোলন স্থগিত হওয়ায় বৃহস্পতিবার থেকেই স্বাভাবিক কাজকর্ম হবে বলে উপাচার্যের আশা। তিনি বলেন, “এখন এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল এবং কোর্ট গঠন করাই আমার প্রথম কাজ। না হলে সার্চ কমিটি গড়া যাবে না। আশা করি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জড়িত সকলে এই কাজে সাহায্য করবেন।” পাশাপাশি, তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ নিয়ে তদন্তের দাবির প্রসঙ্গেও উপাচার্য খোলাখুলি মত প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “আমি উচ্চ শিক্ষামন্ত্রীকে অনুরোধ করেছি, ২০০০ থেকে ২০১২ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কাজকর্মের তদন্ত করা হোক। তা হলে বোঝা যাবে কোথায় কী গরমিল রয়েছে।” |