ভাঙাচোরা মাটির কুঁড়ে ঘরে পলিথিনের ছাউনিতে অর্ধাহারে দিন কাটছে মাধবপাড়া গ্রামের আদিবাসীদের। কনকনে ঠাণ্ডায় তাঁদের ভরসা খড়ের বিচালি, ছেঁড়া কাপড়ে খড় ঢুকিয়ে তৈরি বালিশ। কাঁথায় বাচ্চাকাচ্চাদের ঢেকে শীতের সঙ্গে যুঝতে হচ্ছে তাঁদের। বালুরঘাট শহর থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে ডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের আদিবাসী অধ্যুষিত ওই মাধবপাড়া গ্রামটি আইটিডিপি মৌজার অন্তর্ভুক্ত। সরকারি খাতায় মাধবপাড়ায় প্রায় ৮৫ শতাংশ তফসিলি উপজাতি শ্রেণির মানুষের বসবাসের উল্লেখ রয়েছে। নথিতে ওই গ্রামের আওতাভুক্তির (জেএল নম্বর ১৪৯) খতিয়ানও রয়েছে আছে। রয়েছে সুসংহত আদিবাসী উন্নয়ন প্রকল্পের ফিরিস্তি। অথচ বালুরঘাটের বিডিও পঙ্কজ তামাং জানেনই না মাধবপাড়া আইটিডিপি মৌজাভুক্ত গ্রাম। যেমন ওই গ্রামের উন্নতি ও আদিবাসী পরিবার গুলির দূরবস্থার কথা জানেন না দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক তথা সদর মহকুমাশাসক দেবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “মাধবপাড়া কেন ওই প্রকল্পের আওতায় আসেনি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।” বিডিও পঙ্কজবাবুর বক্তব্য, “গ্রামের লোকেরা আমার কাছে এসে সমস্যার কথা বলতে পারতেন।” |
হতদরিদ্র গ্রামের বাসিন্দারা যাকে বলার সেই গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তাদের কাছে তাঁদের করুণ অবস্থার কথা বারবার জানিয়েছেন। মুখ ফিরিয়ে থেকেছে পঞ্চায়েত। না-হলে গ্রামের একমাত্র মেয়ে দশম শ্রেণীর পড়ুয়া সঞ্চালি মার্ডিকে স্কুল যাওয়া বন্ধ রেখে দু’মুঠো ভাত জোগাড় করতে পরিবারের সঙ্গে বাঁশের ডালি-কুলো তৈরি করতে হত না। অপুষ্টিতে শীর্ণ সঞ্চালির কথায়, “অনেক স্বপ্ন ছিল নিজের পায়ে দাঁড়াব। ঘরে চাল নেই। বাবা বলেন স্কুলে যেতে হবে না, কাজ কর। বই নেই। পঞ্চায়েত প্রধানের কাছে দরবার করেও কিছু হয়নি।” আরএসপি পরিচালিত ডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান টুকটুকি বর্মন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “গ্রামবাসীরা আমাকে কিছু জানাননি। খোঁজ নিয়ে দেখব।” বালুরঘাট বিডিও অফিস থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দূরে মাধবপাড়া গ্রামে ২০ ঘর মাহালি সম্প্রদায়ের আদিবাসী পরিবারের বাস। সব মিলিয়ে লোকসংখ্যা প্রায় ১০০ জন। এদের জীবিকা বলতে বাঁশের ডালি, ঝুড়ি তৈরি করে হাটে ঘুরে বিক্রি। সারাদিনের উপার্জন বলতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। গ্রামের শরৎ মার্ডি, সুধীর মার্ডিরা বলেন, “একটি বাঁশের দাম প্রায় ৮০ টাকা। ওই বাঁশ চেঁছে ৪ টি ডালি তৈরি হয়। ২৫ টাকায় বিক্রি একটি ডালিও যেদিন বিক্রি হয় না, সেদিন পরিবার নিয়ে না-খেয়ে থাকতে হয়।” অধিকাংশের বিপিএল কার্ড নেই। ভাঙাচোরা ইট সোলিং রাস্তা। গ্রামে নেই সুষ্ঠু পানীয় জলের ব্যবস্থা। বিদ্যুৎ পৌঁছলেও বাসিন্দাদের কারও ভাগ্যে জোটেনি ইন্দিরা আবাসের ঘর। অথচ আইটিডিপি মৌজাভুক্ত গ্রামে সরকারি প্রকল্প থেকে স্কুল বাড়ি, পানীয় জলের মার্ক টিউবয়েল, গৃহ নির্মাণ-সহ বাসিন্দাদের আর্থসামাজিক উন্নয়ণ প্রকল্প রূপায়ণের কথা। এসব উন্নয়নের ছিটেফোঁটা তো দূরের কথা, এলাকায় ১০০ দিনের কাজ পর্যন্ত হয়নি বলে অভিযোগ। এদিন মাধবপাড়ায় গিয়ে দেখা গেল পরিবারগুলির করুণ দশা। ছেঁড়া পলিথিন শিটের নিচে মাটিতে খড়ের বিছানায় শীত কাটছে। তাঁদের গ্রামের আদিবাসী মহিলা পুষ্প মাহালি বলেন, “ছেলেমেয়ের লেখাপড়া দূরের কথা, পেট ভরে দুবেলা ভাত খেতে দিতে পারি না। লেপ, কম্বল পাব কোথায়?” কনকনে শীতের রাতে আগুন জ্বেলে প্রায়শই রাত জাগছেন আইটিডিপি মৌজার বাসিন্দারা। |