ভবঘুরেরা রাতে থাকবেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। এমনই ব্যবস্থা করেছেন আসানসোল পুর কর্তৃপক্ষ।
এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বিরোধী বাম এবং জোটসঙ্গী কংগ্রেস। কিন্তু তাঁদের এই দাবি মানতে নারাজ পুরসভার মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিতর্কের কেন্দ্রে আসানসোলের ২০ নম্বর ওয়ার্ডে নিউ ঘুষিক এলাকার একটি প্রজনন ও শিশুস্বাস্থ্য (আরসিএইচ) কেন্দ্র। সেখানেই শহরের ভবঘুরেদের রাত্রিবাসের ব্যবস্থা করেছেন আসানসোলের মেয়র। বুধবার এই রাত্রিনিবাসটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তিনি এবং পুর কমিশনার তথা আসানসোলের অতিরিক্ত জেলাশাসক বিশ্বজিৎ দত্ত। রাত্রিনিবাস পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে। তাপসবাবুর দাবি, ওই সংস্থার সদস্যেরা শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে ভবঘুরেদের একটি তালিকা বানাবেন এবং পুরসভার মাধ্যমে তাঁদের পরিচয়পত্র দিয়ে রাতে ওই কেন্দ্রে থাকার ব্যবস্থা করবেন। |
পুরসভার এই উদ্যোগেরই বিরোধিতায় সামিল হয়েছেন বিরোধী বামফ্রন্ট ও জোটসঙ্গী কংগ্রেসের কয়েক জন কাউন্সিলর। পুরসভার বিরোধী নেতা তথা প্রাক্তন মেয়র সিপিএমের তাপস রায়ের অভিযোগ, “একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা সংক্রান্ত উন্নত পরিষেবার ব্যবস্থা করা উচিত ছিল। ভবঘুরেদের রাতে থাকার জন্য এই ভবনটি ব্যবহার করা উচিত হয়নি। ওদের জন্য পৃথক কোনও আচ্ছাদনের ব্যবস্থা করলে ভাল হত। পরবর্তী বোর্ড-সভায় মেয়রের কাছে এ’নিয়ে বিস্তারিত জানতে চাইব। প্রয়োজনে আন্দোলন-ও হবে।”
পুরসভার প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র সিপিআইয়ের জেলা নেতা বিনোদ সিংহের কথায়, “একটি সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রাত্রিনিবাস চালানোর জন্য কোনও এনজিওকে দায়িত্ব দেওয়া অনুচিত। আসলে পিছনের দরজা দিয়ে ওই এনজিওকে সরকারি অনুদান পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে পুরসভা।এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সব কাউন্সিলরদের জানিয়ে আলোচনা করা উচিত ছিল।”
বাম কাউন্সিলরদের দাবি, অতীতে এলাকার নিম্নবিত্ত ডায়েরিয়া আক্রান্ত বাসিন্দাদের এই ভবনটিতে রেখেই চিকিৎসা করানো হয়েছে। ভবঘুরেদের রাত্রিবাস চালু হওয়ার পরে আবার যদি তেমন কোনও পরিস্থিতি তৈরি হয় সেক্ষেত্রে বিপাকে পড়বেন রোগীরাই।
পুরসভার এই উদ্যোগের বিরোধিতা করেছেন মেয়র পারিষদ তথা জোটসঙ্গী কংগ্রেসের জেলা সম্পাদক রবিউল ইসলাম-ও। তাঁর অভিযোগ, তাঁদের সঙ্গে কোনও রকম আলোচনা না করেই এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। রবিউলবাবুর প্রশ্ন, “একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কেন ভবঘুরেদের রাত্রিবাসের ব্যবস্থা হবে?” তাঁর অভিযোগ, একটি এনজিওকে সরকারি অনুদানের টাকা পাইয়ে দেওয়ার জন্য পুরসভার স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি তাদের কাজের জন্য দেওয়া হয়েছে।
এ দিকে, প্রজনন ও শিশুস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মীরা নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কায় ভুগছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, সেন্টারের বহু সম্পত্তি ওই ভবনে থাকে। অপরিচিত লোকেরা সেখানে রাতে থাকলে সম্পত্তির নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে। পুরসভার চিকিৎসক উজ্জ্বলমণি মুখোপাধ্যায় কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে পুর কমিশনার বিশ্বজিৎ দত্ত বলেন, “আরসিএইচ সেন্টার চলে সকাল ৭টা থেকে দুপুর তিনটে পর্যন্ত। ভবঘুরেরা থাকবেন সন্ধ্যা সাতটা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত। নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার কোনও কারণ তো নেই।” জোটসঙ্গী কংগ্রেস কাউন্সিলর ও বিরোধী বামফ্রন্টের অভিযোগ প্রসঙ্গে মেয়র তাপসবাবুর জবাব, “ওঁরা উদ্দেশ্যহীন রাজনীতিতে নেমেছেন। আমরা মানুষের স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” তাঁর দাবি, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তাঁরা একটি আদর্শ কাজ করেছেন।
তবে অন্য কোথাও কেন ভবঘুরেদের থাকার ব্যবস্থা করা যায়নি, সেই প্রশ্নের সরাসরি কোনও জবাব মেলেনি। বিশ্বজিৎবাবুর দাবি, “আমরা আপাতত এই কেন্দ্র দিয়ে শুরু করছি। পরে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।” |