কোথাও ঝোপঝাড়ে ভর্তি। আগাছা পরিষ্কার হয়নি অন্তত দশ বছর। কোথাও বা সংস্কারের অভাবে দরজা জানলা খুলে পড়ছে। আবার কোনও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জলের সংস্থান নেই। শুধু তাই নয়, বিদ্যুতের অভাবে সন্ধ্যা নামলেই স্বাস্থ্যকেন্দ্র ভুতুড়ে ঘরে পরিণত হয়।
বান্দোয়ানের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির এমনই দশা। বাসিন্দাদের অভিযোগ, দিনের বেলা চিকিৎসকেরা থাকেন। কিন্তু দু’তিন ঘণ্টার বেশি স্বাস্থ্য পরিষেবা মেলে। চিকিৎসক চলে গেলে সামান্য জ্বর, পেটব্যথার জন্য বান্দোয়ান ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে হয়।
বান্দোয়ানের ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অধীনে তিনটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। লতাপাড়া, চিরুডি ও গুরুড় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। বান্দোয়ান বাজার থেকে স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলির দূরত্ব কমবেশি দশ কিলোমিটার।
সম্প্রতি, লতাপাড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেল, চারিদিকে ঝোপ। আগাছার জঙ্গল সর্বত্র। চিকিৎসক ধনেশ্বর মাণ্ডি ছিলেন না। ফার্মাসিস্ট তারাপদ ভুঁইয়া বলেন, “ডাক্তারবাবু রাজগ্রামের শিবিরে রোগী দেখতে গিয়েছেন।” বাসিন্দা অরুণ দত্ত, উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, দুর্গাপদ দত্ত বলেন, “শুনেছি সকাল ন’টা থেকে দুপুর ২টো পর্যন্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্র খুলে রাখা নিয়ম। বেশির ভাগ দিন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা ১২টার মধ্যে চলে যান।” দুর্গাপদবাবু বলেন, “এখানে অন্তর্বিভাগ নেই। ফলে সামান্য জ্বর মাথাব্যথা হলে দশ কিমি দূরে বান্দোয়ান যেতে হয়।” |
অনিয়মিত হাজিরা ও তাড়াতাড়ি স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে তারাপদবাবু বলেন, “এই ধরনের অভিযোগ ঠিক নয়। স্বাস্থ্যকর্মীরা জানিয়েছেন, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জলের সংস্থান নেই। গভীর নলকূপ খোঁড়া হয়েছিল। দুষ্কৃতীরা পাম্পসেট চুরি করে নিয়ে গিয়েছে।”
ধাদকা, কুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত প্রায় ১৫টি গ্রামের বাসিন্দা ওই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ওপর নির্ভরশীল। গুরুড় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি গুরুড় গ্রাম পঞ্চায়েতের তুলসীডি গ্রামে স্থিত। দেখা গেল, সর্বত্র পুটুস ঝোপে ভর্তি। দীর্ঘকাল সাফাই হয়নি। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বসবাসের জন্য কক্ষ নির্মাণ হয়েছিল। সেই সব কক্ষ এখন ধুলো আবর্জনায় ভর্তি। দরজা জানলার পাল্লা উইয়ে খেয়েছে। বিপজ্জনক ভাবে হেলে পড়েছে। বাতিস্তম্ভ থাকলেও বিদ্যুৎ নেই। ফলে বাসিন্দারা সন্ধ্যার পরে এই চত্বর মাড়ান না। তুলসীডি গ্রামের বাসিন্দা গোপাল মাহাতো বলেন, “গুরুড় গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে অন্তত দশটি গ্রামের বাসিন্দা ছাড়াও, লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের গ্রাম কুলডি রাহেরডি প্রভৃতি গ্রাম থেকেও রোগীরা আসেন।” বান্দোয়ানের শালবনি গ্রামের বাসিন্দা চক্রধর মাহাতোর ক্ষোভ, “সামান্য অসুখবিসুখে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসতেই হয়। দুপুরের পর কারও দেখা মেলে না। গাড়ি ভাড়া করে বান্দোয়ানে যেতে হয়।”
তুলনামূলক ভাবে চিরুডি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির অবস্থা খানিকটা ভাল। বান্দোয়ান কুইলাপাল রাস্তার ওপর স্থিত চিরুডি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে অন্তর্বিভাগ রয়েছে। দশটি শয্যা রয়েছে। দুই চিকিৎসক, চার জন নার্স রয়েছেন।
বান্দোয়ানের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক অবিনাশ বেসরা বলেন, “লতাপাড়া এবং গুরুড় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অন্তর্বিভাগ নেই। একজন চিকিৎসক, একজন ফার্মাসিস্ট ও একজন নার্স স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালান। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী না পেলে ওই দুই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিষেবার মান বাড়ানো সম্ভব নয়। তবে চিকিৎসকদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অনিয়মিত আসার অভিযোগ ঠিক নয়। বান্দোয়ানের প্রত্যন্ত এলাকা রাজগ্রাম, কাঁটাগোড়া, কুচিয়া প্রভৃতি এলাকায় শিবিরে ওই চিকিৎসকরা রোগী দেখতে যান। এ ছাড়া ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসা কেন্দ্রের দায়িত্বও সামাল দিতে হয় তাঁদের।”
অবিনাশবাবুর কথায়, “বান্দোয়ানের ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শয্যা রয়েছে ৩০টি অথচ এর দ্বিগুণ রোগী ভর্তি থাকে। বহির্বিভাগে রোগীর সংখ্যা গড়ে ৩০০ জন। প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে ফোন পেলে এখান থেকে অ্যাম্বুল্যান্স পাঠানো হয়। স্ত্রী রোগ ও শিশু বিশেষজ্ঞ-সহ আরও তিন জন ডাক্তার এবং পাঁচজন নার্স প্রয়োজন। এখন মাত্র তিন জন চিকিৎসক রয়েছেন। ব্লাড ব্যাঙ্ক নেই। ছোটখাটো অস্ত্রোপচারের জন্য রোগীকে রেফার করতে হয়। প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির অন্তর্বিভাগ চালু হলে চিকিৎসক ও নার্স ওখানে থাকবেন।” জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিশিকান্ত হালদার বলেন, “সমস্যার কথা জানি। জেলা জুড়ে এই সমস্যা রয়েছে। চিকিৎসক পেলে গুরুত্ব অনুযায়ী প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তাঁদের পাঠানো হবে।” |