‘শিবঠাকুরের আপন দেশেই’ চলছে অনিয়মের রাজত্ব!
আমরি-কাণ্ডের পরে অগ্নি-নিরাপত্তা নিয়ে অন্যান্য হাসপাতালের কাছে যারা দৃষ্টান্ত হতে পারত, রাজ্যের সেই সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল এসএসকেএম-ই যে এই বিষয়ে কতটা উদাসীন, মঙ্গলবার রাতের আগুন তা চোখে আঙুল গিয়ে দেখিয়ে দিল।
আমরি-কাণ্ডের তদন্তে জানা গিয়েছিল, হাসপাতালের বেসমেন্টে অবাধে ধূমপান চলত। সেই সিগারেট থেকেই তুলোর স্তূপে আগুন লেগেছিল বলে তদন্তকারীদের অনুমান। মঙ্গলবার রাতে ঠিক একই ভাবে জ্বলন্ত বিড়ি-সিগারেট থেকে আগুন লাগে এসএসকেএম হাসপাতাল চত্বরের জমে থাকা আবর্জনায়। দমকলের তদন্তে জানা গিয়েছে এই খবর।
দমকল জানায়, মঙ্গলবার রাত আটটা নাগাদ হাসপাতালের ম্যাকেঞ্জি ওয়ার্ডের একটি শৌচাগারের জানলার ধারের শেডের উপরে আগুন লাগে। ঘটনাস্থলে যায় দমকলের দু’টি ইঞ্জিন। পরিস্থিতি হাতের বাইরে যাওয়ার আগেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। দমকলের এক অফিসার বলেন, “ওই শেডের উপরে কাগজ, প্লাস্টিক-সহ আবর্জনা ডাঁই করা ছিল। সেখানে জ্বলন্ত বিড়ি-সিগারেটের টুকরো পড়েই আগুন লাগে।” ঘটনার কথা কবুল করেছেন এসএসকেএম হাসপাতালের সুপার প্রভাস চক্রবর্তীও। তিনি বলেন, “শৌচাগারে ধূমপান করে কেউ জ্বলন্ত টুকরোটি ফেলে দিয়েছিলেন। তা থেকেই আগুন লাগে।” |
হাসপাতাল সূত্রের খবর, এসএসকেএমের বিভিন্ন ওয়ার্ডের শৌচাগারে ধূমপান চলে অবাধে। শুধু রোগী বা তাঁদের আত্মীয়েরা নন, ধূমপান করেন কর্মীদের একাংশও। কেউ আপত্তি করলেও তাতে বিশেষ আমল দেওয়া হয় না। বিষয়টি হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষের অজানা নয়।
প্রশ্ন উঠেছে, এসএসকেএমের মতো হাসপাতালে এ ভাবে স্তূপীকৃত আবর্জনা ও দাহ্য পদার্থ থাকবে কেন? দিনের পর দিন সব জেনেও কর্তৃপক্ষ কেন ব্যবস্থা নেন না? হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ অবশ্য আবর্জনা জমে থাকার কারণ হিসেবে সাফাইকর্মীর অভাবের যুক্তি খাড়া করতে চেয়েছেন। সুপার প্রভাসবাবু বলেন, “হাসপাতালে চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর ঘাটতি আছে। যত কর্মী থাকার কথা, তার চেয়ে ৫৮০ জন কর্মী কম।” হাসপাতাল সূত্রের খবর, বুধবার সকাল থেকেই হাসপাতালের বেশ কয়েকটি জায়গায় আবর্জনা সাফাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে।
আমরি-কাণ্ডের পরেও হাসপাতালে অগ্নি-সুরক্ষা নিয়ে নজরদারির এই হাল কেন? কর্তৃপক্ষের দাবি, শৌচাগারে পাহারা দিয়ে ধূমপান আটকানো যাবে না। একমাত্র ‘স্মোক অ্যালার্ম’ ছাড়া এ ধরনের ঘটনা বন্ধ করা সম্ভব নয়। দমকল জানিয়েছে, শহরের কোনও সরকারি হাসপাতালে ‘স্মোক অ্যালার্ম’ কেন, ন্যূনতম অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থাও দেখা যায় না। কবে সেই ব্যবস্থা হবে, সে বিষয়েও কারও কাছে কোনও উত্তর নেই। দমকলের এক আধিকারিকের মতে, এই ঘটনা শুধু এসএসকেএম নয়, শহরের যে কোনও সরকারি হাসপাতালেই ঘটতে পারে। সে ক্ষেত্রে আগুন নেভাতে কী করা হবে, সেই চিন্তা কপালে ভাঁজ ফেলেছে তাঁদের। |