শহরের বিভিন্ন বাজারগুলিতে পুরসভার সাফাই ফি সংগ্রহের বরাত দিতে গিয়ে চমকে গেলেন শিলিগুড়ি পুর কর্তৃপক্ষ। গত কয়েক বছর ধরে যে বাজার থেকে ১৭ হাজার টাকা সংগ্রহ হত সেখানে ৮০ হাজারেরও বেশি টাকার বিনিময়ে বরাত নিতে চেয়ে দরপত্র জমা দেওয়ায় অবাক পুর কর্তারা। এতদিন ঘনিষ্ঠ লোকদের সুযোগ পাইয়ে দেওয়া হত কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। গত মঙ্গলবার শহরের ১২ টি বাজারের সাফাই সংগ্রহের বরাত দিতে টেন্ডার করা হয়। এত দিন অধিকাংশ বাজারগুলির ক্ষেত্রে ব্যবসায়ী সমিতিগুলির সঙ্গে কথা বলে তাঁদের লোকদের দিয়েই ফি সংগ্রহ করানো হত। ফি সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি পুরসভা থেকে কুপন কিনে ফি সংগ্রহ করতেন। বিনিময়ে তাঁদের মোট কুপনের দামের উপর ১০-১৫ শতাংশ কমিশন দেওয়া হত। পুরসভার সাফাই বিভাগের মেয়র পারিষদ দুলাল দত্ত বলেন, “গত ৫-৬ বছর ধরে পুরসভা বিভিন্ন বাজারগুলি থেকে যে সাফাই ফি আদায় করত তা খুবই সামান্য। অথচ এখানে পুরসভার আয়বৃদ্ধির ভাল সুযোগ রয়েছে। এত দিন কেন এ ভাবে ফি সংগ্রহ করা হত তা বুঝতে পারছি না।” সাফাই বিভাগ সূত্রেই জানা গিয়েছে, ২০০৯-১০ সালে ওই ১২টি বাজারের সাফাই ফি সংগ্রহ হয় ৩ লক্ষ ৩৬ হাজার টাকা। ২০১১ সালে তা কমে দাঁড়ায় ২ লক্ষ ২৫ হাজারে। অথচ এ বার টেন্ডারে ২০১২ সালের জন্য ৮ টি বাজার থেকেই পুরসভা সাড়ে ৭ লক্ষ টাকা আদায় করবে। দরপত্র ৩টির কম জমা পড়ায় ৪টি বাজারের ক্ষেত্রে নতুন করে আবার টেন্ডার করা হবে। গত বছর টেন্ডারের মাধ্যমে ফি সংগ্রহের ব্যবস্থা করতে উদ্যোগী হয়েছিল প্রাক্তন মেয়র পারিষদ সুজয় ঘটক। তবে তিনি নানা জটিলতায় তা চালু করতে পারেননি। বাম জমানায় পুরসভার সাফাই বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন মুকুল সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, “ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে কথা বলে ফি সংগ্রহ করা হত। তাতে ভাল সাড়া মেলেনি।” পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, গত মঙ্গলবার পুরসভায় হায়দরপাড়া মার্কেট, রথখোলা বাজার, ভক্তিনগর মার্কেটের মতো ১২ টি বাজারের সাফাই ফি সংগ্রহের জন্য বরাত দিতে টেন্ডার হয়। তাতে রথখোলা বাজারের ফি সংগ্রহের বরাত দেওয়া হয়েছে ৮১ হাজার টাকার বিনিময়ে। গত বছর ব্যবসায়ী সমিতির লোকের মাধ্যমে আদায় হয় ১৭৪০০ টাকা। ভক্তিনগর মার্কেট ৫০৩০০ টাকায় বরাত দেওয়া হয়েছে। গত বছর আদায় হয়েছিল ১৪ ১০০ টাকা। শালুগাড়া বাজার, আম্বেদকর মার্কেটের বরাত দেওয়া হয়েছে ১ লক্ষ ৪০ হাজার এবং ৫৫১০১ টাকার বিনিময়ে। গত বছর এই বাজারগুলির সাফাই ফি সংগ্রহ হয় ৬১৩০০ এবং ২৪২০০ টাকা। গেট বাজার, হায়দরপাড়া মার্কেটের ফি সংগ্রহ গত বছর ৬৭ হাজার এবং ৫৮৮০০ টাকা। টেন্ডার প্রক্রিয়ায় ওই বরাত পেতে এ বার সর্বোচ্চ দর উঠেছে ১ লক্ষ ১৯৯ টাকা এবং ৮১ হাজার ৩৯৯ টাকা। বিধান মার্কেটের রাস্তায় বসে থাকা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সাফাই ফি সংগ্রহের জন্য ৭৫ ২৯৯ টাকায় বরাত নিতে রাজি হয়েছে এক সংস্থা। গত বছর ৫০ হাজার টাকা আয় হয়েছিল। ঘোঘোমালি বাজার, শান্তিনগর বাজার, জলপাই মোড়, তিনবাতি মোড় বাজারের ক্ষেত্রে ন্যূনতম সংখ্যার দরপত্র জমা না পড়ায় ফের টেন্ডার ডাকা হবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। |