দু’মাসের মধ্যে ফের একটি রাস্তার মনোন্নয়নের জন্য প্রায় ১ কোটি টাকার দরপত্র ডেকে বিতর্কের মুখে পড়েছে শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ। গত ৮ ডিসেম্বর মহকুমা পরিষদ কর্তৃপক্ষ মাটিগাড়া ব্লকের আঠারোখাই গ্রাম পঞ্চায়েতের খড়গসিংহ মৌজা থেকে তারাবাড়ি পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ওই রাস্তা ফের মেরামতির জন্য দরপত্র (এনআইটি-৪) চূড়ান্ত করেন। নাবার্ডের গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়ন তহবিল থেকে এ বার ওই রাস্তা মেরামতির জন্য এ বার বরাদ্দ করা হয়েছে প্রায় ৯৬ লক্ষ ৫৩ ৮৮৭ টাকা। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত সেপ্টেম্বর মাসেই ত্রয়োদশ অর্থ কমিশনের বরাদ্দ ৫০ লক্ষ টাকায় রাস্তাটি মেরামত করা হয়। এখনও রাস্তাটি ঠিকই আছে। হাতে গোনা কয়েকটি গর্ত নতুন করে তৈরি হলেও তা মেরামত করতে এক লক্ষের বেশি টাকা খরচ করার দরকারই পড়বে না। সেখানে প্রায় ৯৬ লক্ষ টাকা ব্যয় কেন করা হবে সেই প্রশ্ন তুলেছেন বাসিন্দারা। তৃণমূলের মাটিগাড়া ব্লক কমিটির সভাপতি বিশ্বজিৎ ঘোষ এই ঘটনার পিছনে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন। বিষয়টি রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে জানিয়ে মহকুমা পরিষদের বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি জানানো হবে বলেও হুমকি দিয়েছেন তিনি।
পাশাপাশি, মহকুমা পরিষদের বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের আইনুল হক বলেন, “অভিযোগ গুরুতর। কোনমতেই বেআইনি কাজ হতে দেব না। যা করার করছি।” তৃণমূল কংগ্রেসের মাটিগাড়ার নেতা বিশ্বজিৎবাবু ইতিমধ্যেই আন্দোলনের প্রস্তুতি নিয়েছেন। তিনি বলেন, “দীর্ঘদিন ধরেই মহকুমা পরিষদের বিরুদ্ধে রাস্তা তৈরি নিয়ে নানা দুর্নীতির অভিযোগ পাচ্ছি। এ বার সেপ্টেম্বর মাসে মেরামত করা রাস্তার জন্য ফের অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। সভাধিপতিকে এর ব্যাখ্যা দিতে হবে। তদন্ত চেয়ে পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে ঘটনাটি জানানো হবে। আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।” মহকুমা পরিষদের সভাধিপতি পাসকেল মিনজ দাবি করেছেন, সেপ্টেম্বরে রাস্তাটি মেরামত করা হলেও ভারী ট্রাক চলাচলের জন্য ফের বেহাল হয়ে পড়ায় নতুন করে মেরামতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় তৈরি ওই রাস্তা দিয়ে ২০ টনের বেশি ভারী গাড়ি চলাচল করা উচিত নয়। ওই রাস্তায় ৪০-৫০ টনের ভারী যাতায়াত করায় বার বার বেহাল হয়ে পড়ছে। সেই জন্যই ফের রাস্তাটি মেরামতি করা জরুরি হয়ে পড়েছে।” মহকুমা পরিষদের জেলা ইঞ্জিনিয়র সুব্রত মিত্র জানান, ওই এলাকায় তারাবাড়ি থেকে ধিমাল বস্তি পর্যন্ত রাস্তাটিও বেহাল। বরাদ্দ টাকায় খড়গসিংহ থেকে তারাবাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামতি ছাড়াও ধিমাল বস্তির রাস্তাও মেরামত করা হবে বলে তিনি দাবি করেছেন। তিনি বলেন, “এই ব্যাপারে মহকুমা পরিষদের কর্তারা বৈঠক করে রাজ্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। রাজ্য সরকার অনুমতি দেবে।” মহকুমা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, দরপত্রে খড়গসিংহ থেকে তারাবাড়ি পর্যন্ত রাস্তার গুণমান বাড়ানোর জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। ওই টাকায় তারাবাড়ি থেকে ধিমালবস্তি যাওয়ার রাস্তা সংস্কার করা ঠিক হবে কি না সেই প্রশ্নও উঠেছে। যে ঠিকাদার কাজটি পেয়েছেন তিনি ওই প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়ে আদালতে গেলে পুরো টাকাই আটকে যেতে পারে বলেও তাঁদের আশঙ্কা। সুব্রতবাবুর বক্তব্য, “সেই জন্যই তো রাজ্য সরকারের অনুমতি চাওয়া হয়েছে।” মহকুমা পরিষদের সহকারী কার্যনির্বাহী আধিকারিক সুবল রায় জানান, কোথায়, কোনও কা জ করা হবে সেটা সদস্যরাই ঠিক করেন। এ ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে। তাঁর দাবি, “বাসিন্দারা কোনও অভিযোগ জানাননি। তেমন অভিযোগ পেলে বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে।” কিন্তু যে রাস্তা মেরামত করা হয়েছে সেটি ফের মেরামতির জন্য গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়ন তহবিল থেকে অর্থ বরাদ্দ কী করে হল? মহকুমা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৯ সালে মহকুমা পরিষদ কর্তৃপক্ষ ওই রাস্তা মেরামতির জন্য অর্থ চেয়ে প্রস্তাব পাঠায়। ইতিমধ্যেই বর্ষায় রাস্তাটি বেহাল হয়ে পড়লে গত সেপ্টেম্বরে প্রয়োদশ অর্থ কমিশনের বরাদ্দে মেরামত করা হয়। একই সময়ে গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়ন তহবিল থেকেও অর্থ বরাদ্দ হয়। |