পারদের লাফটা জব্বর। এক দিনে লাফ পাঁচ ডিগ্রির। সেই লাফ নীচের দিকে হলে শীতের কামড় জোরদার হত আর বাড়ত কলকাতার বিলেত-বিলাস। কিন্তু লাফটা উপরের দিকে এবং তার জেরে সোয়েটার গায়ে রাখব কি রাখব না, সেই দোটনায় দক্ষিণবঙ্গবাসী।
কারণ পারদের ওই বিশাল লাফে মাঝ-পৌষেই শীত উধাও। খলনায়ক বঙ্গোপসাগরের প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘থানে’। ওই ঝড় বাংলায় আসছে না। দুর্যোগের আশঙ্কা নেই। প্রাকৃতিক বিপর্যয় দফতরকে প্রস্তুত থাকতে হচ্ছে না। কিন্তু বায়ুপ্রবাহের আকস্মিক পরিবর্তন শীতটাকেই নিল কেড়ে!
মঙ্গলবারের ১২.৬ ডিগ্রির সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বুধবার পৌঁছে গেল ১৭.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, আগামী কয়েক দিনে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আরও বাড়বে। এবং এ বারের বর্ষবরণ হবে উষ্ণতায়।
আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, ওই ঘূর্ণিঝড় স্থলভূমিতে প্রবেশ না-করা পর্যন্ত বঙ্গোপসাগর থেকে মেঘ ঢুকতেই থাকবে দক্ষিণবঙ্গে। আর যত মেঘ ঢুকবে, ততই বাড়বে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। নতুন বছরের আগে দক্ষিণবঙ্গে আকাশ পরিষ্কার হওয়ার কোনও সম্ভাবনা দেখছে না দিল্লির মৌসম ভবন। আজ, বৃহস্পতিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন আবহবিদেরা।
তীব্র উত্তুরে হাওয়ার প্রভাবে বহু দিন পরে এ তল্লাটে জমিয়ে শীত পড়তে শুরু করেছিল। ১১ ডিগ্রির নীচে নেমে গিয়েছিল তাপমাত্রা। কনকনে শীত কালিম্পং তো বটেই, আলোচনায় টেনে এনেছিল বিলেতকেও। এতটাই যে, নতুন বছরে শীত রেকর্ড ভাঙবে কি না, আবহবিদেরা তা নিয়ে গবেষণা শুরু করে দিয়েছিলেন। কিন্তু বড়দিনের মুখে শীতের দফারফা ঘটাতে বঙ্গোপসাগরে হাজির হল নিম্নচাপ। আবহবিদেরা অনেকেই ভেবেছিলেন, আন্দামান থেকে ৬০০ কিলোমিটার দূরে থাকা ওই নিম্নচাপ তেমন কিছু ক্ষতি করতে পারবে না শীতের।
কিন্তু কোথায় কী! ওই নিম্নচাপ দুর্বল তো হলই না। বরং শক্তি বাড়িয়ে বুধবার তা পরিণত হল প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে। সেই ঝড় এ দিন আন্দামান থেকে অনেকটা দূরে চলে গিয়েছে ঠিকই। কিন্তু সরে এসেছে তামিলনাড়ু-অন্ধ্রপ্রদেশের দিকে। কাল, শুক্রবার সকাল নাগাদ অন্ধ্র ও তামিলনাড়ু উপকূলের মাঝামাঝি কোনও এলাকা দিয়ে তা স্থলভূমিতে ঢুকতে পারে বলে মনে করছেন আবহবিদেরা। ওই দুই রাজ্যকে সতর্ক করে দিয়েছে মৌসম ভবন। ইতিমধ্যেই অন্ধ্র ও তামিলনাড়ুর উপকূলবর্তী এলাকায় বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছে। বইতে শুরু করেছে ঝোড়ো হাওয়া। ওই দুই রাজ্যে মৎস্যজীবীদের গভীর সুমদ্রে মাছ ধরতে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। আবহবিদদের আশঙ্কা, বৃহস্পতিবার রাত থেকে অন্ধ্রপ্রদেশ-তামিলনাড়ুতে আবহাওয়ার আরও অবনতি হবে।
পশ্চিমবঙ্গের জন্য অবশ্য কোনও সতর্কবার্তা নেই। তবে আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বুধবার বলেন, “বঙ্গোপসাগরের ওই ঘূর্ণিঝড় বায়ুপ্রবাহের আমূল পরিবর্তন ঘটিয়ে দিয়েছে। যে-সব প্রাকৃতিক অনুষঙ্গ শীত ডেকে আনার পক্ষে অনুকূল, বিপরীত বায়ুপ্রবাহের জন্য এই মুহূর্তে সেগুলি চাপা পড়ে গিয়েছে। নতুন বছরটা মনে হয় উষ্ণতা দিয়েই বরণ করতে হবে।” |
উত্তরবঙ্গে অবশ্য তুলনামূলক ভাবে আকাশ পরিষ্কার থাকছে। কিন্তু শীতের দাপট তেমন নেই। উল্টে সেখানে অনেক এলাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা দক্ষিণবঙ্গকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। রাতেও তাপমাত্রা তেমন নামছে না। এমনটা হচ্ছে কেন? আবহবিদেরা বলছেন, দক্ষিণবঙ্গের আবহাওয়ার কিছুটা প্রভাব উত্তরবঙ্গেও পড়েছে বলে মনে হচ্ছে।
দক্ষিণবঙ্গে মেঘ ঢুকে আকাশ আরও মেঘলা হলেও আন্দামানে ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে আবহাওয়ার। সেখানে মেঘ কেটে গিয়েছে। সমুদ্র গত তিন দিনের তুলনায় অনেক শান্ত। বিভিন্ন দ্বীপে আটকে থাকা পর্যটকদের পোর্ট ব্লেয়ারে ফিরিয়ে আনার কাজ এ দিন সকালেই শুরু হয়েছে বলে আন্দামান প্রশাসন সূত্রের খবর। বিভিন্ন দ্বীপে খাবার এবং পানীয় জল পাঠানো হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় যত অন্ধ্র-তামিলনাড়ু উপকূলের দিকে সরবে, ততই আন্দামানে আবহাওয়ার উন্নতি হবে বলে জানাচ্ছে হাওয়া অফিস।
আর বাংলার শীতের কী হবে?
হাওয়া অফিস বলছে, ঘূর্ণিঝড় দ্রুত অন্ধ্র বা তামিলনাড়ুর দিকে সরে গেলে কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গের শীত-ভাগ্য প্রসন্ন হতে পারে। ওই দু’টি রাজ্য যত তাড়াতাড়ি ঘূর্ণিঝড়কে টেনে নিতে পারবে, ততই পরিষ্কার হতে শুরু করবে দক্ষিণবঙ্গের আকাশ। আর তাতে শীতের ফের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা বাড়বে। |