সিপিএমের সম্মেলন
‘অভিযুক্ত’ ব্যক্তিরাই ফের লোকাল, জোনালের নেতা
রিবর্তনের আওয়াজ তুলে সফল হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু দলকে ‘শুদ্ধ’ করতে আওয়াজ তুলেও ব্যর্থ হলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য-বিমান বসুরা!
সিপিএমের সম্মেলন প্রক্রিয়া শুরুর আগে ফতোয়া দেওয়া হয়েছিল, ঠিকাদারি-প্রোমোটিংয়ের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি বা যার বিরুদ্ধে দলীয় স্তরে অভিযোগ আছে, এমন কেউ যাতে কোনও কমিটিতে না যায়। লিখিত নির্দেশের পাশাপাশিই প্রতিটি জেলা কমিটির বৈঠকে গিয়েও এ কথা বলেছিলেন বিমানবাবুরা। কিন্তু আপাতত দেখা যাচ্ছে, বহু ক্ষেত্রেই ওই নির্দেশ পালিত হয়নি। যে সব ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, এলাকায় যাদের ‘ভাবমূর্তি’ ভাল নয়, যাদের বিরুদ্ধে অতীতে কমিশন বসানো হয়েছে, শাস্তি দেওয়া হয়েছে, এমন ব্যক্তিরাই আবার বিভিন্ন লোকাল বা জোনাল কমিটির নেতৃত্বে ফিরে এসেছে।
এতে যেমন একদিকে নিচুতলার কর্মীদের একাংশ হতাশ, তেমনই হতাশ রাজ্য কমিটির সদস্যদের একাংশও। দলীয় গঠনতন্ত্রে ‘ফাঁকফোকরের’ সুযোগ নিয়েই ওই স্থানীয় নেতারা আবার দলে নিজেদের ‘প্রতিষ্ঠা’ করছেন বলে ওই নেতারা মনে করেন। বস্তুত, তাঁদের মধ্যে একাংশ বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সম্মেলনে আলোচনার দাবিও তুলতে পারেন।
একদা বুদ্ধবাবুর ঘনিষ্ঠ যাদবপুরের নেতা খোকন ঘোষ দস্তিদারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের ভিত্তিতে কয়েক মাস আগেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। আরেক জেলা নেতা স্বপন রায়ের সঙ্গেই দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা কমিটি থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই খোকনবাবুই ‘গরিষ্ঠতার’ জেরে আবার যাদবপুরের একটি জোনাল কমিটির সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন! তাঁকে আটকাতে জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী বার বার আলিমুদ্দিনে দরবার করেও ‘ব্যর্থ’। দলের গঠনতন্ত্রে নাকি খোকনবাবুকে আবার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হওয়া থেকে আটকানোর কোনও ব্যবস্থাই নেই!
প্রায় একই ঘটনা ঘটেছে উত্তর ২৪ পরগনাতেও। দুর্নীতি ও দলবিরোধী কাজের জন্য প্রাক্তন সাংসদ অমিতাভ নন্দীর একদা ঘনিষ্ঠ জেলা কমিটির সদস্য বরানগরের রঞ্জিত দাসের এক বছর আগেই ‘পদাবনতি’ হয়। কমিশন গঠন করে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা মেলার পর তাঁকে জেলা কমিটি ও জোনাল কমিটি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। বিধানসভা ভোটেও রঞ্জিতবাবুকে ‘ব্রাত্য’ করেই রাখা হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি বরানগরের একটি লোকাল কমিটিতে আবার সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। লোকাল সম্পাদকরা যেহেতু জোনাল কমিটির সদস্য হন, তাই এ বার রঞ্জিতবাবু জোনাল সদস্যও হবেন। দলীয় সূত্রের খবর, নানা ভাবে তাঁর ব্যবসায়ী ভাইকে আর্থিক সাহায্য পাইয়ে দেওয়া-সহ দলীয় পদের অপব্যবহার, পুরভোটে দলীয় প্রার্থীকে হারাতে অন্তর্ঘাতের অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে।
খড়দহ ও দমদমেও প্রমোটিং-ঠিকাদারির সঙ্গে যুক্ত একাধিক ব্যক্তি লোকাল কমিটির সদস্য হয়েছেন। নিজের ঠিকাদার ভাইকে সব রকম সাহায্য করেছেন, দমদমের এমন এক নেতাও বহাল তবিয়তে জোনাল কমিটিতে রয়ে গিয়েছেন। যা দেখে এক ক্ষুব্ধ জেলা নেতার মন্তব্য, “লোক দেখানো শাস্তির কী অর্থ ছিল?” তিনি আরও বলেন, “কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা গৌতম দেব সম্মেলনের ব্যাপারে বরানগর, কামারহাটির বৈঠকে যা বলেছিলেন, সম্মেলন প্রক্রিয়ার সঙ্গে তার কোনও সঙ্গতি নেই!”
খোদ কলকাতায় শ্যামপুকুর-বাগবাজারের যে সব নেতার বিরুদ্ধে তদন্ত করার জন্য কমিশন গঠন করা হয়েছিল, তাঁরাও জেলা নেতৃত্বকে ‘বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ’ দেখিয়ে নেতৃত্বে ফিরে এসেছেন। শ্যামপুকুর লোকাল কমিটির সম্পাদক কুণাল বসুর বিরুদ্ধে স্বয়ং বুদ্ধবাবুর আছে অভিযোগ জমা পড়েছিল! যার প্রেক্ষিতে তাঁর বিরুদ্ধে কমিশন গঠিত হয়েছিল। ফলে তাঁর সম্পাদক থেকে সাধারণ সদস্যপদে ‘অবনতি’ হয়েছিল। সম্মেলন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাওয়ায় কমিশনের রিপোর্ট এখনও মেলেনি। কিন্তু কলকাতা জেলার দুই প্রভাবশালী নেতার ‘তৎপরতায়’ কুণালবাবুই আবার ওই লোকাল কমিটির সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন! ওই নেতাদের একজন প্রাক্তন মন্ত্রী। অন্যজন প্রাক্তন যুবনেতা। তাঁরা জেলা নেতৃত্বকে গিয়ে বলেন, কুণাল বসুকে যখন দল থেকে বাদ দেওয়া হয়নি, তখন আবার লোকাল কমিটির সম্পাদক করতে আপত্তির কী আছে? একই ভাবে, পার্টিগত ভাবে ‘সতর্কিত’ সত্তরোর্ধ শ্যামল নন্দী আবার বাগবাজার লোকাল কমিটির সম্পাক হয়েছেন।
তবে সবচেয়ে বেশি আলোড়ন উঠেছে সিঁথি নিয়ে। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত যে দুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে সিঁথি-দমদমের সিপিএমের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি একসময় উত্তাল হয়েছিল, সেই দুলাল-ঘনিষ্ঠরাই সিঁথি এলাকার দু’টি লোকাল কমিটির নেতৃত্বে এসেছেন। দুলাল-ঘনিষ্ঠ সত্তরোর্ধ কিরণশঙ্কর রায় একটি লোকাল কমিটির সম্পাদক পদে পুর্ননির্বাচিত হয়েছেন। ঠিকাদারির সঙ্গে যুক্ত দুলালের ভাই বাবিন বন্দ্যোপাধ্যায় লোকাল কমিটির সদস্য হয়েছেন। দলে সিদ্ধান্ত হয়েছে, পরবর্তী কালে কিরণবাবু জোনালে চলে যাবেন। বাবিন হবেন লোকাল কমিটির সম্পাদক। অপর দুলাল-ঘনিষ্ঠ বিমল সরকার সিঁথির অন্য একটি লোকাল কমিটির সদস্য হয়েছেন। তিনিও পরবর্তী কালে লোকাল কমিটির সম্পাদক হবেন। দলের অন্দরে এই নেতারা প্রত্যেকেই কলকাতা জেলার অন্যতম নেতা রাজদেও গোয়ালার ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত। দলের একাংশের মতে, রাজদেওবাবুর ‘সমর্থনেই’ তাঁরা বিভিন্ন কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। তা নিয়ে সম্মেলনে বিতন্ডা থেকে বচসাও হয়েছে। টালিগঞ্জ এলাকার এক নেতার বিরুদ্ধেও দলে একাধিক অভিযোগে কমিশন হয়েছিল। সম্মেলন প্রক্রিয়ার জন্য সেই রিপোর্টও জমা পড়েনি। কিন্তু ওই নেতা এবারও জোনাল কমিটিতে রয়েছেন।
আলিমুদ্দিন কেন ব্যর্থ? রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, “দলের গঠনতন্ত্রেই আছে, কারও বিরুদ্ধে যাই অভিযোগ থাক, সম্মেলন-প্রক্রিয়ার সময়ে দলে গরিষ্ঠতা থাকলে কোনও বৈধ সদস্য কেন্দ্রীয় কমিটিরও সদস্য হতে পারেন!” ওই নেতা আরও বলেন, “স্থানীয় স্তরে দলের সদস্যদের সমর্থন বা গরিষ্ঠতার জেরেই এরা নেতৃত্বে থাকছে।” পাশাপাশিই অবশ্য তাঁর দাবি, “এমন উদাহরণ বেশি নেই। ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন আছে, এমন ব্যক্তিদের বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.