কুয়াশায় দ্বীপের মতো ডুবে থাকে ধাবা

হর ছাড়িয়ে অনেকটা চলে আসার পরে ঘন অন্ধকারের মধ্যে হঠাৎই একটা দু’টো টিনের চাল ঘেরা ঘরের সামনে আলো চোখে পড়ে। রাস্তাতেও আলো ঠিকরে পড়ে। কিন্তু সেই আলো যেন অন্ধকারকে আরও গভীর করে তোলে।
কেউ কেউ বলেন, এই আলো-আঁধারি পরিবেশটাই রাতের ধাবার প্রধান আকর্ষণ।
ছোট ছোট চার চাকার গাড়ি, কয়েকটা মোটরসাইকেল, বড় লরি বা ট্রাক দাঁড়িয়ে একপাশে। সামনে পাতা নারকেল দড়ির খাটিয়া। তাতে বসে আছেন যাঁরা, তাঁদের মুখ পর্যন্ত অনেক সময় শীতের রাতে দেখা যায় না। আপাদমস্তক ঢেকে কে আসে, কে যায়, জানে কেবল তাঁর পরিচিতেরাই। তড়কা থেকে কষা মাংস আর রুটি থেকে ভাতের সঙ্গেই কারও কারও সামনে দেশি-বিদেশি মদের বোতল। কারও গ্লাসে চা। নীচু স্বরে কথা। কেউ একা, কেউ এসেছেন দল বেঁধে। কেউ লরি চালক। আসছেন হয়তো বহু দূরের কোনও রাজ্য থেকে। কেউ স্থানীয় যুবক, এসেছেন বন্ধুদের সঙ্গে। ধাবার রান্নার স্বাদ আলাদা। আশেপাশের গ্রাম থেকেও কেউ আসতে পারেন, রাতের খাবারটা সঙ্গে করে নিয়ে যাবেন।
ধাবার স্বাদই যে আলাদা। কিন্তু, ধাবার পরিবেশটাও তো একেবারে আলাদা। কী রকম সেই পরিবেশ? ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশের ধাবাগুলোর আশপাশের গ্রামগুলোর বাসিন্দারা অনুযোগ করেন, ধাবার এই রহস্যময় পরিবেশকে ঘিরেই শুরু হয়ে যায় নানা অপকর্ম। নাকাশিপাড়ার বিধায়ক কল্লোল খাঁ বলেন, “ধাবাগুলো ক্রমশ সব ধরনের অপকর্মের আখড়া হয়ে উঠছে। বিভিন্ন ধরনের সমাজবিরোধীরা এখানে সক্রিয় থাকে।”
তার প্রধান কারণগুলি কী? স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, ধাবাগুলো শহর থেকে দূরে। পুলিশের নিয়ন্ত্রণ কম। সেখানে কারা আসছে, কারা যাচ্ছে তা কেউই খবর রাখেন না। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, মাঝে মধ্যে ধাবাতে পুলিশের গাড়ি আসে ঠিকই, কিন্তু অপকর্ম যাঁদের পেশা, তাঁরা খুব ভালই খবর রাখেন পুলিশের গাড়ি কখন কোথায় রয়েছে। অনেক দূর পর্যন্ত তাদের চর ছড়ানো থাকে। এ ছাড়া, এখন কুয়াশার ফলে রাতের পরেই প্রায় অগম্য হয়ে পড়ছে জাতীয় সড়ককে ঘিরে থাকা স্থানীয় রাস্তাগুলি। আশপাশের গ্রামের লোকজন আর সে ভাবে রাস্তায় বা ধাবায় যাতায়াত করেন না। তাই জাতীয় সড়কের ধারে ধারে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো এই ধাবাগুলো ডুবে থাকে রহস্যের কুয়াশাতেই।
সেই কুয়াশার আড়ালে লরি-ট্রাকের যাতায়াতের শব্দের মধ্যে কখনও দেখা যায় কোনও কোনও মহিলাকে। আর তাতেই শুরু হয় আর এক সমস্যার। বিধায়ক কল্লোলবাবু বলেন, “রাতের অন্ধকারে শুধু দেহ ব্যবসাই নয়, অন্যান্য অপরাধমূলক কাজকর্মও হয়।” যেমন ধরুন, চোখের সামনে দেখা গেল, আপাদমস্তক ঢাকা দিয়ে শীতের রাতে লরিতে উঠে পড়লেন কোনও মহিলা। খানিক পরে তাঁকে নিয়েই চলে গেল লরিটা। ধাবাতে নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে এমন লোকজন কিন্তু জানাচ্ছেন, মহিলার পোশাক পরে ওই লরিতে যিনি উঠলেন, তিনি মহিলাই কি না, তা কে বলবে। এমন তো হতে পারে, রাতের অন্ধকারে লরিতে করে দূরে কোথাও চলে গেল কোনও অপরাধ জগতের পাণ্ডা। সাধারণ ভাবে রেল বা বাসে যেতে গেলে ধরা পড়ে যাওয়ার যে ঝুঁকিটা থাকে, এ ক্ষেত্রে তা নেই। বিভিন্ন এলাকার ধাবায় লরি বদলে বদলে তিনি চলে যেতে পারেন নির্দিষ্ট গন্তব্যে ।
(চলবে)



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.