এ যেন কেঁচো খুঁড়তে বেরিয়ে এল সাপ। কৃষ্ণনগর ১ ব্লকের ভাণ্ডারখোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের একশো দিনের কাজের প্রকল্পের ব্যর্থতার কারণ খুঁজতে গিয়ে রীতিমতো অবাক মহকুমা প্রশাসন।
চলতি আর্থিক বছরে ওই গ্রাম পঞ্চায়েত মাত্র ৬০ হাজার টাকার কাজ করাতে পেরেছে। কেন এত কম কাজ করানো গিয়েছে, তা খতিয়ে দেখতেই মঙ্গলবার সেখানে গিয়েছিলেন বিডিও শর্মিষ্ঠা চট্টোপাধ্যায়। আর তা করতে গিয়েই জানতে পারলেন, প্রকাশ্যে দিনে দুপুরে জলঙ্গি নদীর তীর কেটে মাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ইটভাটাগুলিতে। হাতেনাতে তিনি একটি মাটি বোঝাই ট্রলার, দু’টি ট্রাক্টর আটক করেন। ধরা হয় দু’জনকে। শুধু তাই নয়, ইটভাটাগুলিতে যে পরিমাণ জমি ব্যবহার করার কথা, তার চেয়ে বেশি জমি তারা অধিকার করে রেখেছে। যে পরিমাণ মাটি কাটার অনুমতি দেওয়া রয়েছে, তার থেকে অনেক বেশি মাটি কাটা হচ্ছে। শর্মিষ্ঠাদেবী বলেন, “ওই পঞ্চায়েতের একশো দিনের কাজের অবস্থা ভাল নয়। খোঁজখবর করতে গিয়ে জানতে পারি, এলাকার ইটভাটাগুলি মোটা দামে মাটি কেনার ফলে এলাকার মানুষ একশো দিনের প্রকল্পে মাটি দিতে চান না। জানতে পারি যে, সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে চলছে ইটভাটাগুলির ওই মাটি কাটার কাজ। এরপরেই প্রধানকে নিয়ে আচমকা হানা দিয়েছিলাম।” জলঙ্গি নদীর তীরে যাওয়ার পরে বিডিও দেখতে পান, সেখানে অবাধে মাটি কাটার কাজ চলছে। বড় বড় ট্রলারে করে সেই মাটি নিয়ে গিয়ে তুলে দেওয়া হচ্ছে ট্রাক্টরে। ট্রাক্টর বোঝাই করে চলে যাচ্ছে ইটভাটায়। তখন যোগাযোগ করা হয় মহকুমাশাসকের সঙ্গে। কৃষ্ণনগর সদর মহকুমাশাসকের নির্দেশে ঘটনাস্থলে চলে যান মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিক কমলকান্তি ঘোষ। তিনি ১১টি ইটভাটা ঘুরে দেখেন। কমলকান্তিবাবু বলেন, “একটি ভাটার লাইসেন্স নেই। সব ইটভাটাতেই যা অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তার চেয়ে বেশি মাটি কাটা হচ্ছে। জমিও তারা বেশি ব্যবহার করছে।” তবে তিনি জানান, “যে ট্রলার ও ট্রাক্টর আটক করা হয়েছিল, তা ধরে রাখা যায়নি। আমরা ইটভাটাগুলো দেখতে গেলে তারা পালিয়ে যায়।” ভাণ্ডারখোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের গৌতম বিশ্বাস বলেন, “বহু দিন ধরেই আমরা প্রশাসনকে এই কথা জানাচ্ছি। অথচ কেউ কিছু করেন না। বিডিও হাতেনাতে ধরে ফেলার পরে যদি কিছু হয়। তবে তিনি আটক কারর পরেও কী করে ট্রাক্টর ও ট্রলার পালিয়ে গেল, তা বোধগম্য হচ্ছে না।” নদিয়া জেলা ব্রিক ফিল্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অসীম সাহা বলেন, “আমরাও চাই যারা বেআইনি ভাবে মাটি কাটছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। কিন্তু প্রশাসন তা করে না। বরং যারা ঠিকঠাক ভাবে আইন মেনে কাজ করছেন, তাঁদেরই প্রশাসন হয়রান করে।” কৃষ্ণনগর সদর মহকুমাশাসক পূর্ণেন্দু মাঝি বলেন, “আমরা কিন্তু বিভিন্ন স্তরে প্রতি নিয়ত ইটভাটাগুলিতে আচমকা অভিযান করছি। মঙ্গলবারের ঘটনা নিয়ে আমি বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছি। রিপোর্ট হাতে পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |