তৃণমূল এবং সিপিএম সমর্থিত মুর্শিদাবাদ শহর টাঙা ইউনিয়ন ও মুর্শিদাবাদ টাঙা চালক ইউনিয়নের সদস্যদের সংঘর্ষের ঘটনায় মঙ্গলবার রাতেই সাত জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার মধ্যে সিটুর পাঁচ জন এবং আইএনটিটিইউসি টাঙা ইউনিয়নের দুজন সদস্য রয়েছেন। ধৃতদের এদিন লালবাগ এসিজেএম আদালতে হাজির করানো হলে সিটুর পাঁচ জনের জামিন খারিজ করে বিচারক অনিলকুমার প্রসাদ ১৪ দিনের জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। অন্য দিকে তৃণমূলের টাঙা ইউনিয়নের দুজনকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়। সরকারি কৌঁসুলি বিথীনবিকাশ ঘোষ বলেন, “ওই ঘটনায় দুটি পৃথক মামলা হয়েছে। তার মধ্যে একটি মামলায় ৫ জনের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার অভিযোগের মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। বাকি দুজনের ক্ষেত্রে জামিনযোগ্য ধারায় মামলা হওয়ায় বিচারক তাঁদের জামিনে মুক্তি দেন।”
গত মঙ্গলবার সকালে হাজারদুয়ারি চত্বর থেকে যাত্রী তোলাকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের টাঙা ইউনিয়নের সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। ওই ঘটনায় জখম হন মোট আট জন। তাঁদের মধ্যে তৃণমূলের ইউনয়নের ৬ জন লালবাগ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি হন। এর পরেই তৃণমূলের তরফে ৬ জনের বিরুদ্ধে এবং সিটুর তরফে দুজন-সহ আরও অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগ দায়ের হয় মুর্শিদাবাদ থানায়। ওই রাতেই পুলিশ দু’পক্ষের সাত জনকে গ্রেফতার করে এদিন আদালতে হাজির করে। ধৃতদের মধ্যে সিটু অনুমোদিত মুর্শিদাবাদ টাঙা চালক ইউনিয়নের সম্পাদক মনু শেখ যেমন রয়েছেন, তেমনি রয়েছেন তৃণমূল সমর্থিত আইএনটিটিইউসি-র মুর্শিদাবাদ ব্লক সভাপতি তপন রায়।
এ দিন অবশ্য পাঁচ জন সদস্যকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে থানা চত্বরে বিক্ষোভ দেখায় সিটু অনুমোদিত মুর্শিদাবাদ টাঙা চালক ইউনিয়ন। মুর্শিদাবাদ থানার আইসি ইন্দ্রজিৎ কুণ্ডুর কাছে একটি স্মারকলিপিও জমা দেয় তারা। পরে পথসভা শেষে পুর-এলাকায় মিছিলও বের হয়। এতে কিছু ক্ষণের জন্য টাঙা চলাচল ব্যাহত হয়। সিটুর জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা মুর্শিদাবাদ টাঙা চালক ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত দীপঙ্কর চক্রবর্তীর দাবি, “লালবাগে আমাদের ইউনিয়ন ছাড়া অন্য কোনও ইউনিয়নের রেজিস্ট্রেশন নেই। পর্যটন মরসুমের মুখে আচমকা কয়েক জন নিজেদের টাঙা চালক পরিচয় দিয়ে সুষ্ঠু ভাবে চলা ব্যবসা ভণ্ডুল করে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। ক্ষমতায় থাকার সুবাদে প্রশাসনের একাংশকে সঙ্গে নিয়ে জোরজবরদস্তি টাঙা চালানোর চেষ্টা করে। আমরা তা মানতে পারিনি।” দীপঙ্করবাবু বলেন, “সব ইউনিয়নের সদস্যরা মিলেমিশে টাঙা ব্যবসা করুক আমরা চাই। এজন্য প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে বসে খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মেটানোর পক্ষে আমরা।”
তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র মুর্শিদাবাদ ব্লক সভাপতি তপন রায় বলেন, “গত ৩৫ বছর ধরে শাসন ক্ষমতায় থাকায় সিটু ছাড়া অন্য ইউনিয়নের টাঙা চালকদের হুমকি দিয়ে ব্যবসা থেকে হাত গুটিয়ে নিতে বাধ্য করে। এমনকী হাজারদুয়ারি চত্বর থেকে যাত্রী তোলার ক্ষেত্রেও অন্য ইউনিয়নের টাঙা চালকরা সুযোগ পেত না। গত ২১ নভেম্বর প্রশাসনিক স্তরে বৈঠক হলে সেখানেও হাজারজুয়ারি চত্বর থেকে সমস্ত ইউনিয়নের টাঙা চালকরা যাত্রী তুলতে পারবে বলে জানানো হয়। কিন্তু সিটুর বাধায় তা আমরা পারিনি।”
ওই সমস্যা মেটাতে অবশ্য লালবাগ মহকুমা প্রশাসন তড়িঘড়ি বৈঠক ডেকে সমাধানসূত্র বের করার কথা জানায়। আজ, বৃহস্পতিবার সব পক্ষকে নিয়ে লালবাগ মহকুমা কার্যালয়ে ওই বৈঠক হবে। লালবাগ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, “রুজির প্রশ্নে লালবাগের যে কোনও জায়গা যে কোনও টাঙা চালকের যাত্রী তোলার অধিকার রয়েছে এবং তা আলোচনার মাধ্যমে ওই বৈঠকে বিষয়টি সুনিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে টাঙার সুনির্দিষ্ট ভাড়ার তালিকা তৈরি করা এবং সেই ভাড়ার তালিকা জনবহুল এলাকায় প্রকাশ্যে টাঙানোর বিষয়েও প্রশাসনের গুরুত্ব দেওয়া উচিত। সুনির্দিষ্ট ভাড়ার তালিকা না থাকায় পর্যটকদের অনেক সময়ে হেনস্থা হতে হচ্ছে।” |