সহকর্মীর স্ত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগে গ্রেফতার করা হল বহরমপুর রেলপুলিশের ওসি বিশ্বজিৎ সাউকে। তাঁর ওই সহকর্মী রেলপুলিশের কনস্টেবল বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়কেও গ্রেফতার করা হয়েছে। কনস্টেবল বিশ্বজিৎবাবু ওসি’কে মারধর করেছেন বলে অভিযোগ। রেল পুলিশের এডিজি দিলীপ মিত্র জানিয়েছেন, ওই ওসি এবং কনস্টেবলকে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
বুধবার বহরমপুর লাগোয়া কাশিমবাজারের একটি মাঠে পিকনিক করতে গিয়েছিলেন ওই ওসি এবং তাঁর ওই সহকর্মীর পরিবার। সেখানেই মদ্যপ অবস্থায় দুপুরে ওই ওসি কনস্টেবল বিশ্বজিৎবাবুর স্ত্রীকে জোর করে মদ খাওয়াতে যান বলে অভিযোগ।
|
অভিযুক্ত বিশ্বজিৎ সাউ।
নিজস্ব চিত্র |
মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার ভরতলাল মিনা বলেন, “রেলপুলিশের এক কনস্টেবল বহরমপুর থানায় অভিযোগ করেছেন যে, তাঁর স্ত্রীর শ্লীলতাহানি করেছেন ওই ওসি। ওই ওসিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই ওসি’কে মারধর করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে ওই কনস্টেবলকেও।” রেলের শিয়ালদহ শাখার এসআরপি তাপসরঞ্জন ঘোষ বলেন, “রেলের ডেপুটি পুলিশ সুপার ও ইন্সপেক্টর মর্যাদার দুই অফিসারকে দিয়ে গোটা ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রিপোর্ট হাতে পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” ওই ওসি’র স্ত্রী মনিকা সাউয়ের অবশ্য দাবি, “আমার স্বামীকে পরিকল্পনা করে ফাঁসানো হয়েছে।” তিনি ওই কনস্টেবল ও গাড়ির চালকের বিরুদ্ধে তাঁর স্বামীকে মারধরের পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেন থানায়।
ওসি বিশ্বজিৎবাবু বহরমপুর নিউ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই দিন ওই দু’টি পরিবার রেলপুলিশেরই একটি গাড়ি নিয়ে কাশিমবাজারে পিকনিক করতে গিয়েছিল। সেখানে ওই ওসি, তাঁর স্ত্রী এবং ওই কনস্টেবল মদ্যপান করেছিলেন। কিন্তু কনস্টেবলের স্ত্রী মদ্যপান করতে চাননি। দুপুরে বাচ্চাদের খাওয়া হয়ে যাওয়ার পরে নিজেরা খেতে বসার মুখে ওই ওসি তাঁর সহকর্মীর স্ত্রীকে বারবার মদ খেতে অনুরোধ করেন। তিনি তা অস্বীকার করলে ওসি জোর করে তাঁকে মদ খাওয়াতে যান বলে অভিযোগ। কনস্টেবল বিশ্বজিৎবাবু তার প্রতিবাদ করেন। কিন্তু তাতে কর্ণপাত করতে চাননি ওসি। তখন দু’জনের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়ে যায়। গাড়ির চালকও তখন ওসিকে মারধর করেন বলে অভিযোগ।
এই দু’জনের মধ্যে হাতাহাতি দেখতে পেয়ে যান আশপাশের কয়েকজন বাসিন্দা। তাঁরা গিয়ে দেখতে পান ওই কনস্টেবলের স্ত্রী কাঁদছেন। এর পরে তাঁরাও ওই ওসিকে চড়-ঘুসি মেরেছেন। স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকেই খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় খাগড়া থানার পুলিশ। তারপরে সবাইকে নিয়ে যাওয়া বহরমপুর থানায়।
কনস্টেবল বিশ্বজিৎবাবু বলেন, “অনেকক্ষণ সহ্য করার পরেই আমি ওসি’কে বাধা দিয়েছি। কিন্তু তারপরেও তিনি কিছুতেই কোনও কথা শুনতে চাইছিলেন না।” তাঁর অভিযোগ, “আমার স্ত্রীকে জোর করে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করেছেন ওসি বিশ্বজিৎবাবু। তার পরে আমার স্ত্রীকে তিনি কুপ্রস্তাবও দিয়েছেন।” তিনি জানান, তখন ওই ওসি’র স্ত্রী এবং তাঁদের দুই দম্পতির ছেলেমেয়েরাও সামনেই ছিল। তিনি বলেন, “তবু ওসি অসভ্যতা করে যাচ্ছিলেন। কিছুতেই থামানো যাচ্ছিল না। আমি বাধা দেওয়ায় তিনি আমাকে মারধরও করেন। তখন বাধ্য হয়েই তাঁকে নিরস্ত করতে হাত তুলতে হয়।”তবে মনিকাদেবীর দাবি, “সাধারণ ভাবে হাসিঠাট্টাই হচ্ছিল। আমার স্বামীকে ফাঁসানোর জন্য সেই হাসিঠাট্টাকেই শ্লীলতাহানি বলে চালানোর চেষ্টা হচ্ছে।” |