কী টেস্ট ম্যাচটাই না দেখছি। মেলবোর্নে তিন দিন খেলা হয়ে গেল অথচ কেউ বলতে পারবে না দুটো টিমের কেউ ম্যাচটায় একটু এগিয়ে আছে। টেস্ট ক্রিকেটকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য এ রকম একটা পিচ করার সব কৃতিত্ব কিউরেটরের প্রাপ্য। বাকি বিশ্বের অন্য কিউরেটরদের কাছে এই উইকেট একটা দৃষ্টান্ত যে, কেন টেস্ট ম্যাচে ফলাফল হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। ম্যাচ দেখতে হাজার হাজার দর্শক আসছেন এবং চতুর্থ দিন সবচেয়ে বেশি লোক হলে আমি অবাক হব না।
এমসিজি-র কমেন্ট্রি বক্সে বসে অস্ট্রেলীয় ব্যাটিং নিয়ে কথা বলছিলাম। অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের গ্রেটদের কথা মনে পড়ছিল। ভারতীয় দলের হয়ে ১৭ বছর বয়সে প্রথমবার এ দেশে আসি। সেই সিরিজে খুব বেশি সুযোগ পাইনি, কিন্তু অ্যালান বর্ডার, ডেভিড বুন এবং আরও কিছু গ্রেটকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ পাওয়াটা খুব বড় শিক্ষা ছিল। যা পরবর্তীকালে ক্রিকেটার হিসেবে আমাকে দারুণ সাহায্য করেছিল। টেস্ট ক্রিকেট জিনিসটা কী বুঝতে পারছিলাম, শিখছিলাম এই পর্যায়ে সফল হতে গেলে কতটা শারীরিক ও মানসিক চাপ নিতে হয়। অস্ট্রেলিয়ার মতো বিশাল দেশে ঘোরা, এসসিজি এবং এমসিজি-র মতো ক্রিকেটীয় ঐতিহ্যে ঠাসা মাঠ আমার চোখ খুলে দিয়েছিল। তারপর থেকে এ দেশে আমি চারবার এসেছি এবং প্রতিটা সফরই আমার কেরিয়ারে সাহায্য করেছে। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজে সেঞ্চুরি না পেলে উপমহাদেশে কোনও ব্যাটসম্যান কল্কে পায় না এবং এটা আমি বরাবর মাথায় রেখেছিলাম।
১৯৯৬ থেকে ২০০৭, বিভিন্ন অধিনায়কের নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়া বিশ্ব ক্রিকেট শাসন করেছে। ওয়ার্ন, ম্যাকগ্রা, ওয় ভাইয়েরা, লি, পন্টিং, হেডেন, গিলক্রিস্ট কে নয়? আপনার মনে হতে পারে, কী করে এ দেশে একটা টেস্ট জেতা সম্ভব? এখন কমেন্ট্রি বক্সে থাকতে গিয়ে উপলব্ধি করছি সেই অপ্রতিরোধ্য টিম আর নেই। সেটা বোঝা যায়, কারণ একটা দেশ সব সময় চ্যাম্পিয়ন তৈরি করতে পারে না। আমি বিশ্বাস করি খেলাধুলোয় আপনি যদি চ্যাম্পিয়ন তৈরি করতে পারেন, তা হলে সেই চ্যাম্পিয়নের উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণ করতেও জানতে হয়। সিরিজ শুরুর আগে হাসি আর পন্টিংকে বাদ দিয়ে নতুনদের নেওয়ার কথা হচ্ছিল। সবাই ভুলে গিয়েছিল একটা টিম সব সময় জিততে পারে না। যখন হাসি আর পন্টিংয়ের জুটিটা হচ্ছিল, তখন মনে হয়েছিল তা হলে উপরে কোথাও একটা বিচার হয়। যে উইকেটে বোলাররা সাহায্য পাচ্ছে, সেখানে দু’জন সিনিয়র চাপের মুখে দাঁড়িয়ে ১১৫ রান যোগ করল, যা এই ম্যাচে সবচেয়ে বড় জুটি। শুধু রানটা নয়, যে ভাবে খেলল সেটাও শিক্ষণীয়। হাসি এখনও ৭৯ ব্যাটিং এবং আর ৪০ রান যোগ করে দিতে পারলে অস্ট্রেলিয়াকে জেতার অবস্থায় পৌঁছে দেবে।
আমরা জানি অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের ইতিহাস বলে, বয়স হয়ে গেলেই বাতিল করে নতুনদের ঢোকাও। প্রাক্তনদের সঙ্গে কথা বলছিলাম। অনেকেই কিন্তু এই মতে বিশ্বাসী নন। সে জন্যই পন্টিং বা হাসিকে খুব সতর্কতার সঙ্গে কাজে লাগানো উচিত। নতুনদের এমন পরিস্থিতিতে ফেলা উচিত নয়, যেখানে হারাটাই স্বাভাবিক। তাতে মানসিক ভাবে বড় ক্ষতি হয়ে যায়। ম্যাথু হেডেন কম বয়সে নয়, অনেক পরে টেস্ট ক্রিকেটে এসে ৩০টা সেঞ্চুরি করেছিল। আমাদের ক্ষেত্রে সেরা উদাহরণ রাহুল দ্রাবিড়। কী অসাধারণ ক্রিকেটার আর এই বছরটায় কী অবিশ্বাস্যই না খেলেছে! বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, এই বছরের আগে শেষ তিন বছর ভাল টিমের বিরুদ্ধে মুশকিলে পড়তে হয়েছে দ্রাবিড়কে। কখনও কখনও বয়স্কদের কাছ থেকে সেরাটা বের করে নিতে হয় এবং সেটা অস্ট্রেলীয় নির্বাচকদের বুঝতে হবে। বড় নামগুলোয় বিশ্বাস রাখুন। ক্লাস বা জাত কখনও এত সহজে যায় না। পন্টিং ও হাসির এই সিরিজ ও অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটকে আরও দেওয়ার আছে। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটকে অতীত ঐতিহ্য থেকে সরে বর্তমান পরিস্থিতিটা বুঝতে হবে। আর তা ছাড়া হাতের সামনে বিপক্ষ শিবিরে তো দ্রাবিড় আর তেন্ডুলকরের উদাহরণ আছেই। |