কুড়ি মিনিটের ওডাফা-ঝড়ে ভেঙে পড়ল বিমান!
শুধুমাত্র একক প্রতিভার স্ফুলিঙ্গে মোহনবাগানের ঘুমপাড়ানি, ধ্যাড়ধ্যাড়ানি ফুটবলকে সিধে টেনে দাঁড় করিয়ে দিলেন ওডাফা ওকোলি। ঘাড়ের পাশে নিঃশ্বাস পড়ছে বিপক্ষের চার ডিফেন্ডারের। তবু কালু, তাম্বা, রয়স্টন, রাহুলের মতো ফুটবলাররা ওডাফার ‘উইথ দ্য বল’ দৌড়ের সঙ্গে টক্কর দিতে পারলেন না। আর চারজনকে কাটিয়ে জালে বল জড়িয়েই বাগানের গোলমেশিনের সেই অতিপরিচিত ছবি আকাশের দিকে দু’হাত তুলে ঊর্ধ্বশ্বাস দৌড়। ঈশ্বরকে খোঁজার আপ্রাণ চেষ্টা। চোখের নিমেষের মধ্যে যেন কেটে গেল আগের দু’ম্যাচে গোল না পাওয়ার তীব্র হতাশা! যা চব্বিশ ঘণ্টা আগে ক্লাব তাঁবুতে দু’কোটির স্ট্রাইকারের মুখে কুলুপ লাগিয়ে দিয়েছিল। এ দিন বোঝা গেল, সেটা ছিল অগ্ন্যুৎপাতের আগের মুহূর্ত মাত্র!
বুধবারের যুবভারতীতে ওডাফা-ম্যাজিক শুরু বিরতির আগেই। হাদসন লিমা-র একটা নিরামিষ চিপ থেকে নিজের এবং দলের প্রথম গোলের ঠিকানা খুঁজতে ভুল করেননি ‘ঈশ্বরের পা’। যদিও সেই গোলের উচ্ছ্বাসে যে সবুজ-মেরুন সমর্থকেরা ভেসে যাবেন তার উপায় নেই। সুব্রত ভট্টাচার্যের ডিফেন্ডারদের দোষে বিরতির পরপরই মহম্মদ সফির গোলে ১-১ এয়ার ইন্ডিয়া-র। কোথায় তখন কিংশুক দেবনাথ আর আনোয়ার? ব্যারেটোকে অনেকটা নেমে এসে সামলাতে হচ্ছে মাঝমাঠ দিয়ে সফির বিদ্যুৎ দৌড়গুলো। তাতেও অবশ্য শেষরক্ষা হয়নি। সফির একটা জোরাল শট সংগ্রামকে দর্শক বানিয়ে গোলে ঢুকে যায়। |
কিন্তু নাইজিরিয়ান-ইঞ্জিন চললে আর চিন্তা কী? সাঁ সাঁ করে ছুটছে পালতোলা নৌকা। আর যেদিন ওডাফা নামের লাইফবোট থাকবে না, সেদিন শ্যাওলা, কচুরিপানায় আটকে পড়া! বুধবার অঘটনের শিকার হতে হতেও হলেন না ব্যারেটোরা। রক্ষণের অজস্র ফাঁকফোকর আর মাঝমাঠের উদ্দেশ্যহীন ফুটবল চোখে দেখা যাচ্ছে না। ওডাফার পাশাপাশি আগুনের ফুলকি বেরোচ্ছে একমাত্র ব্যারেটোর পা থেকে। এই বয়সেও সবুজ তোতার লড়াই বাকিদের জন্য শিক্ষণীয়।
বিমান মাটিতে নামাতে দু’টো ভূমিকায় দেখা গেল ব্যারেটোকে। ওডাফাকে বল জোগান দিতে কখনও তিনি মিডফিল্ডার। কখনও আবার ঘর সামলাতে স্টপারদের সামনে ডিফেন্সিভ ব্লকার। সুব্রত বলছিলেন, “বাষট্টির এশিয়ান গেমস ফাইনালে জার্নেল সিংহ স্ট্রাইকারে খেলে গোল করেছিলেন। ব্যারেটো স্ট্রাইকার থেকে স্টপারে খেলতে পারবে না কেন? দলের প্রয়োজনে যে কোনও ফুটবলার যে কোনও জায়গায় খেলতে পারে। ভবিষ্যতেও এরকম করব।” তবে সুব্রতর জন্য খারাপ খবর, সদ্য ফিট হয়ে ওঠা ব্যারেটো এ দিন কোমরে চোট পেলেন। তবে চোট গুরুতর নয় বলে দাবি মোহন টিডি-র। এ দিন না খেললেও চোটের জন্য দুই মিডফিল্ডার মণীশ মৈথানি ও শৌভিক চক্রবর্তী এক মাস মাঠের বাইরে চলে গেলেন। আর সুব্রতর জন্য সুখবর, দুই বিদেশি মহাতারকা ব্যা-ও জুটির সঙ্গে জ্বলজ্বল করতে দেখা গেল এক বঙ্গসন্তানকে অসীম বিশ্বাস। গোলের অসীম খিদে এখনও কমেনি। নব্বই মিনিট নজরকাড়া ফুটবল খেলতে না পারুন, কাজের কাজটা করলেন। বিমানকর্মীরা সমতা ফেরানোর পর অসীমের গোলেই যে আবার ২-১ এগনো বাগানের! |