করলা নদী নিয়ে ফের বৈঠকে বসতে চলেছে প্রশাসন। আগামী ৩১ ডিসেম্বর জলপাইগুড়ি সার্কিট হাউসে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হবে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব-সহ পদস্থ সরকারি আধিকারিকরা এবং বিশেষজ্ঞরা বৈঠকে থাকবেন। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রতিনিধিরাও থাকবেন বলে জানা গিয়েছে। গত ২৮ নভেম্বর জলপাইগুড়ির করলা নদীতে প্রচুর মাছ মরে ভেসে ওঠে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হস্তক্ষেপ করেন। ঘটনার পরেই উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী সরকারি আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। এক মাসের ব্যবধানে ফের বৈঠক বসতে চলেছে। ইতিমধ্যেই করলা নিয়ে গঠিত সরকারি কমিটির কয়েকজন বিশেষজ্ঞ সমীক্ষা চালিয়েছেন। শনিবারের বৈঠকের আগে তাঁরা প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাননি। তবে বিশেষজ্ঞদের সমীক্ষায় করলা নদীর নাব্যতা ফেরাতে তিস্তা ও করলার পুরানো মোহনা ফিরিয়ে দেওয়ার কথাই উঠে এসেছে। ১৯৬৮ সালের বন্যার পরে আড়াআড়ি ভাবে বাঁধ তৈরি করে তিস্তা নদীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার সিদ্ধান্তই করলা নদীর নাব্যতা কেড়ে নিয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন। আটষট্টি সালে বন্যার পরে জলপাইগুড়ি শহরের অদূরে তিস্তা ও করলার মোহনায় আড়াআড়ি ভাবে বাঁধ তৈরি করে দুটি নদীকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। তার ফলে বর্তমানে করলা নদী জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া যে এলাকায় শেষ হয়ে মোহনা তৈরি করেছে সেখানে জল নেই। অন্য কোনও নদীতে না মিশে করলা শুখা এলাকায় গিয়ে মোহনা পেয়েছে। মোহনা থেকে তিস্তার দূরত্ব অনেকটাই বেশি। স্বাভাবিক নিয়মে মোহনা না-পাওয়ায় নদীতে জলের নিরবচ্ছিন্ন প্রবাহ নেই। পাহাড়ের প্রাকৃতিক জলাধার ফেটে যাওয়াই জলপাইগুড়ি শহরের বন্যার মূল কারণ, যা পরবর্তীতে সরকারি অনুসন্ধানে জানা গিয়েছে। বন্যা প্রতিরোধের পদক্ষেপ হিসেবে তিস্তা থেকে করলাকে বিছিন্ন করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক পদক্ষেপ ছিল না বলেই বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। করলা নদীর মজে যাওয়া দশা কাটাতে তিন দফা প্রস্তাবও সরকারের কাছে জমা পড়ছে বলে জানা গিয়েছে। যেখানে শহরের সব নিকাশি নালার পুনর্গঠন এবং শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া অন্যান্য ছোট নদীগুলিকে করলায় মিশিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এক বিশেষজ্ঞের কথায়, “প্রথমে তিস্তা ও করলা নদীর পুরোনো মিলনস্থল ফিরিয়ে দেওয়া দরকার। ১৯৬৮-র বন্যা প্রাকৃতিক কারণেই হয়েছিল। সেটা প্রতিরোধ করার কোনও উপায় মানুষের কাছে ছিল না। ফের পাহাড়ের প্রাকৃতিক জলাধার ফেটে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটলে শহরে বন্যার আশঙ্কা দেখা দেবে। তিস্তা থেকে করলাকে আলাদা করায় নাব্যতাই হারিয়ে গিয়েছে।” স্বাভাবিক নিয়মে যদি নদীর স্রোত থাকত তবে বিষক্রিয়ার ঘটনা এড়ানো যেত বলেই জানানো হয়েছে। মোহনায় নদীর জল আটকে যাওয়াতেই বিষ জল নদী থেকে বের হতে পারেনি বলে জলপাইগুড়ি পুরসভাও জানিয়েছে। পুর চেয়ারম্যান মোহন বসু বলেন, “তিস্তা ও করলার সংযুক্তি ঘটানো হলে বর্ষায় করলার জল তিস্তায় মিশে শহর জলবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবে। তিস্তার অতিরিক্ত জল করলায় ঢুকলে তিস্তার বাঁধও চাপমুক্ত হবে।” |