চাল খাওয়ার জন্য ঘরদোর ভেঙে ঢুকলেও বিছানায় ঘুমন্ত শিশুকে শুঁড়ে তুলে আলতো করে সরিয়ে দিয়েছে এক বুনো দাঁতাল। মঙ্গলবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে ডুয়ার্সের শামুকতলা থানার ডাঙ্গি এলাকায়। শিশুটি অক্ষত আছে। তবে হাতির হানায় ভেঙে যাওয়া ধরের বেড়া, টিন চাপা পড়ে শিশুটির মা, দাদা-দিদি সামান্য জখম হয়েছে। খবর পেয়ে বন বিভাগের অফিসার-কর্মীরা গিয়ে বুধবার সকালে সকলকেই আলিপুরদুয়ার মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসা করান। শিশুটি সুস্থই রয়েছে। বন দফতর জানিয়েছে, শিশুটির নাম প্রসেনজিৎ দেবনাথ। বয়স পাঁচ বছর। এই ঘটনার কথা চাউর হতেই শিশুটিকে দেখতে ওই বাড়িতে ভিড় উপচে পড়ছে। অবশ্য বন অফিসার ও হাতি বিশেষজ্ঞদের অনেকেই ঘটনাটি স্বাভাবিক বলে মনে করেন। কারণ, কিছুদিন আগেই শামুকতলা থানা এলাকার ত্রিপুরা বস্তিতে একটি চার বছরের ঘুমন্ত শিশু সামনে পড়লেও সেটির কোনও ক্ষতি করেনি এক বুনো দাঁতাল। চার পায়ের ফাঁকে রেখে ধান খেয়ে সে যাত্রায় হাতিটি চলে যায়। বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের দক্ষিণ রায়ডাকের রেঞ্জার উৎপল দত্ত বলেন, “বুনো হাতিরা সাধারণত শিশুদের ক্ষতি করে না। যতদূর শুনেছি, মঙ্গলবার রাতে ঘরের বেড়া ভাঙার পরে বুনোটি ঘুমন্ত শিশুকে দেখে। এর পরে ওকে আলতো করে তুলে নিরাপদ জায়গায় শুইয়ে রাখে। |
হাতিদের স্বাভাবিক আচরণের মধ্যে এটাও পড়ছে।” পরিবেশপ্রেমী সংগঠন ন্যাফের কর্তা অনিমেষ বসুও মনে করেন, ঘটনাটির মধ্যে কোনও অস্বাভাবিক কিছু নেই। তাঁর কথায়, “হাতি অত্যন্ত বুদ্ধিমান। ঘুমন্ত শিশুকে আলতো করে তুলে উঠোনে রেখে ঘর ভেঙে ধান খাওয়ার ঘটনা মাঝেমধ্যেই ঘটিয়ে থাকে। ডুয়ার্সে আগেও একইরকম ঘটনা ঘটেছে। মোদ্দা কথা হল, কেউ বিরক্ত না-করলে বুনো হাতি ক্ষিপ্ত হয় না। নিজের খাবার টুকু খেয়ে চলে যায়।” বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই রাতে রায়ডাক জঙ্গল থেকে একটি দলছুট দাঁতাল ধওলাঝোরা চা বাগান হয়ে ডাঙ্গি গ্রামে ঢোকে। সেখানে বরুণ দেবনাথ নামে এক ব্যক্তির বাড়ির বেড়া ভাঙে। তখন ঘরে ঘুমোচ্ছিলেন বরুণবাবুর স্ত্রী অনিতা দেবী, ছেলে প্রসেনজিৎ, মিঠুন ও দশ বছরের মেয়ে মঞ্জু। বেড়া ভাঙার শব্দে মঞ্জু দেবীর ঘুম ভাঙে। তিনি দেখেন বিরাট দাঁতালের শুঁড়ে প্রসেনজিৎ দুলছে। কি করবেন ভেবে না পেয়ে অন্য দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে ঘরের অন্য প্রান্তে আশ্রয় নেন। দাঁতালটি শুঁড়ে ধরে শিশুটিকে আলতো করে ঘরের এক দিকে রাখে। তার পরে লাথি মেরে কাঠের চৌকি গুড়িয়ে দেয়। এর পরে ঘরটিও হাতির ধাক্কায় একদিকে ভেঙে পড়ে। অনিতা দেবী বলেন, “ঘরের চালের টিন, বাটাম আমাদের উপরে ভেঙে পড়ে। কোনও মতে বাচ্চাদের নিয়ে ঘাপটি মেরে ছিলাম। প্রসেনজিৎকে দেখা যাচ্ছিল না। হঠাৎ দেখি দাঁতাল চাল, আটা, লবণ খেতে শুরু করেছে।” ততক্ষণে গ্রামের বাসিন্দারা টের পেয়ে মশাল জ্বেলে ‘মহাকাল’ বলে চিৎকার শুরু করেছে। এ দিকে অনিতা দেবী আতঙ্কের প্রহর গুনতে শুরু করেন। ভাবতে থাকেন এই বুঝি দাঁতাল প্রসেনজিৎকে তুলে আছড়ে মারল। কিন্তু না। বাসিন্দাদের তাড়া খেয়ে বুনোটি এলাকা ছাড়লে মা দেখেন ছেলে তখনও ঘুমোচ্ছে। তিনি ওকে বুকে জড়িয়ে অঝোরে কাঁদতে শুরু করেন। |