বাড়ি ফেরার পথে এক যুবককে গুলি করে পালালো দুষ্কৃতীরা। মঙ্গলবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে হুগলির মগরার শিমুলতলা এলাকায়। সমীরণ সেন নামে বছর তিরিশের ওই গুলিবিদ্ধ যুবক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঘটনার প্রতিবাদে এবং দোষীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে স্থানীয় বাসিন্দারা বুধবার সকালে দু’ঘণ্টা ব্যান্ডেল-কাটোয়া শাখায় রেল অবরোধ করে। তবে, ওই ঘটনায় জড়িত কাউকে এ দিন রাত পর্যন্ত গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শিল্পাঞ্চল) অমিতাভ বর্মা বলেন, ‘‘খুনের চেষ্টার মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। ঘটনায় জড়িতদের খোঁজ চলছে।’’
সমীরণবাবু মগরার স্বাধীন কলোনির বাসিন্দা। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, মঙ্গলবার রাত ১০টা নাগাদ বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করে তিনি বাড়িতে ফিরছিলেন। সে সময়ে বাড়ির অদূরে শিমূলতলায় কয়েক জন দুষ্কৃতী পিছন থেকে তাঁকে গুলি করে। রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ওই যুবক। অন্ধকার এবং নির্জনতার সুযোগে দুষ্কৃতীরা গা-ঢাকা দেয়। স্থানীয় বাসিন্দারা ছুটে আসেন। খবর দেওয়া হয় মগরা থানায়। সমীরণকে উদ্ধার করে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে তাঁকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।
একের পর এক দুষ্কৃতী হামলার ঘটনায় সাধারণ মানুষ তিতিবিরক্ত। এ দিনের রেল অবরোধ তারই বহিঃপ্রকাশ। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে তীব্র অসন্তোষ দানা বেঁধেছে হুগলির বিভিন্ন প্রান্তে।
বড়দিনের আগের রাতে ব্যান্ডেলের বলাগড় রোডে ওএনজিসি-র এক কর্তাকে বেধড়ক মারধর করে কিছু দুষ্কৃতী। তাঁর স্ত্রী-মেয়েকে কটূক্তি করে। জখম ওই ওএনজিসি কর্তার একটি চোখের দৃষ্টি হারানোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। চোখে অস্ত্রোপচার হয়েছে তাঁর। ওই ঘটনায় জড়িতদের এখনও হদিস করতে পারেনি পুলিশ। মঙ্গলবার ভরদুপুরে জেলা সদর চুঁচুড়ার তোলাফটকে এক ব্যবসায়ীর গায়ে অ্যাসিড ঢেলে পালায় তাঁরই বন্ধু। ওই ব্যবসায়ী হাসপাতালে ভর্তি। অভিযুক্ত এখনও ধরা পড়েনি।
মগরার ঘটনাটিতেও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষুব্ধ স্থানীয় মানুষ। ঘটনার প্রতিবাদে এ দিন সকাল ৭টা নাগাদ ব্যান্ডেল-কাটোয়া শাখার বাঁশবেড়িয়া ও ত্রিবেণী স্টেশনের মাঝে শিমুলতলার কাছে অবরোধ করে জনতা। দোষীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানায় তারা। অবরোধের ফলে ওই শাখায় ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। নিত্যযাত্রীরা অসুবিধায় পড়েন। রেল ও জেলা পুলিশের কর্তারা আসেন। তাঁদের আশ্বাসে সকাল ৯টা নাগাদ অবরোধ ওঠে। ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হতে আরও কয়েক ঘণ্টা কেটে যায়।
এ দিকে, সমীরণের উপরে দুষ্কৃতী হামলার তদন্তে নেমে পুলিশ এখনও বিশেষ এগোতে পারেনি। গুলিবিদ্ধ যুবকের মা সবিতাদেবী বলেন, ‘‘সমীরণের সঙ্গে কারও বিবাদ ছিল না। কোনও খারাপ কাজ সে করতে পারে না। কী কারণে দুষ্কৃতীরা ওকে গুলি করল, বুঝতে পারছি না।’’
পুলিশ ও সমীরণের পরিবার সূত্রের খবর, ২০০২ সালে সমীরণের কাকা প্রবোধ সেন খুন হন। সেই মামলার বিচার এখনও চলছে। সেই নিয়ে সমীরণ ইদানীং দৌড়ঝাঁপ করছিলেন। সমীরণকে আক্রমণের সঙ্গে ওই ঘটনার কোনও যোগ আছে কী না, পুলিশ তা তদন্ত করে দেখছে। তদন্তকারী অফিসারেরা জানিয়েছেন, এখনও সমীরণের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। একটু সুস্থ হলেই তাঁর কাছ থেকে ঘটনার বিবরণ নেওয়া হবে। প্রতিটি ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানান পুলিশ কর্তারা। |