ব্যাঙ্ক-ডাকঘর-সমবায়ের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ
অ্যাকাউন্ট না খোলায় শ্রমিকদের সমস্যা একশো দিনের কাজে
রামবাগ মহকুমার বেশ কিছু পঞ্চায়েত এলাকায় স্রেফ অ্যাকাউন্ট খুলতে না পারায় বিপুল সংখ্যক শ্রমিক একশো দিনের প্রকল্পে কাজ করতে পারছেন না। শ্রমিকদের ক্ষোভ-বিক্ষোভে জেরবার পঞ্চায়েতগুলি। বিডিওদের স্মরণাপন্ন হয়েছেন প্রধানেরা। বিডিওরা ব্যাঙ্ক, ডাকঘর, সমবায় সমিতিগুলিতে তদবির করছেন শ্রমিকদের অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য। কিন্তু বিশেষ সাড়া মিলছে না। বিডিওদের অভিযোগ, ব্যাঙ্ক, ডাকঘর, সমবায় সমিতিগুলির অ্যাকাউন্ট খোলা নিয়ে ‘অসহযোগিতায়’ একশো দিনের কাজের প্রকল্প-সহ দারিদ্র্য দূরীকরণের বেশ কিছু প্রকল্প মার খাচ্ছে। আরামবাগের মহকুমাশাসক অরিন্দম নিয়োগী বলেন, “ব্যাঙ্ক, ডাকঘর সর্বত্রই দ্রুত অ্যাকাউন্ট খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাতে এক দিনের মধ্যেই অ্যাকাউন্ট খোলা যায় সে বিষয়ে পঞ্চায়েতগুলিকেও সক্রিয় হতে বলা হয়েছে।” যদিও তাতে পরিস্থিতি বিশেষ বদলায়নি। পঞ্চায়েত এলাকায় গিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ, এমনকী ঘেরাওয়ের মুখে পড়ছেন বিডিওরাও।
মহকুমায় এখন একশো দিনের কাজ প্রকল্পের বিশেষ প্রচারাভিযান শুরু হয়েছে গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে। চলবে টানা এক মাস। প্রতিটি পঞ্চায়েতে গ্রাম ধরে ধরে বিশেষ এই প্রচারে লিফলেট ছড়ানো হচ্ছে। কোথাও শিবির হচ্ছে। কোথাও সুসজ্জিত গাড়িতে মাইক লাগিয়ে চলছে প্রচার। সেখান থেকেই বিলি করা হচ্ছে কাজ চাওয়ার আবেদনপত্র।
দিন চারেক আগে আরামবাগের মলয়পুর ২ পঞ্চায়েত এলাকায় এ রকমই প্রচারে বেড়িয়ে চকানল গ্রামে ঘেরাও হয়েছেন আরামবাগের বিডিও মৃণালকান্তি গুঁই। তিনি বলেন, “প্রায় ৩০০ শ্রমিকের জবকার্ড হয়েছে ওই গ্রামে। কিন্তু তাঁদের কাজ দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ, তাঁদের অ্যাকাউন্টই নেই কোথাও। স্থানীয় ব্যাঙ্ক, ডাকঘরগুলি অ্যাকাউন্ট খোলা নিয়ে অনীহা প্রকাশের ফলেই প্রকল্পটি বেশ কিছু জায়গায় মার খাচ্ছে।”
আরামবাগের মলয়পুর ২ এবং সালেপুর ১ পঞ্চায়েত এলাকায় পরিস্থিতি বেশ খারাপ। বাকি ১৩টি পঞ্চায়েত এলাকায় বিক্ষিপ্ত ভাবে বেশ কিছু গ্রামের শ্রমিকদের এই অসুবিধায় পড়তে হয়েছে। সালেপুর ১ পঞ্চায়েতের মানিকপাট গ্রামের শ্রমিকদের আবার গত আড়াই বছর ধরে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়নি। খানাকুল ১ বিডিও সুপ্রভাত চট্টোপাধ্যায়ের ক্ষোভ, “অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক, ডাকঘর প্রভৃতির সক্রিয়তার অভাবে বিপুল সংখ্যক মানুষকে কাজ দেওয়া যাচ্ছে না। অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে বিভিন্ন ভাতা প্রকল্পগুলি, স্বর্ণজয়ন্তী গ্রাম স্বরোজগার যোজনা প্রকল্প-সহ দারিদ্র্য দূরীকরণ কর্মসূচিকে।”
কেন্দ্রীয় সরকারের একশো দিনের কাজ প্রকল্পটি ২০০৫ সাল থেকে চলছে। হুগলি জেলায় তা শুরু হয়েছে বছর দেড়েক পর। প্রথম দিকে অ্যাকাউন্ট খোলার বালাই না থাকলেও গত আড়াই বছর আগে অ্যাকাউন্ট খোলা বাধ্যতামূলক হয়। এ দিকে, দৈনন্দিন প্রকল্পের কাজ থেকে কিছু না কিছু আবেদন আসছে।
সম্প্রতি বিশেষ প্রচারের জেরে সেই আবেদনের বহর ব্যাপক বৃদ্ধি পাবে বলে ব্লক প্রশাসনগুলির ধারণা। এই অবস্থায় আবেদনকারীদের জবকার্ড দিতে হবে অথচ তাদের অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থা না করতে পারলে ব্যাপক হামলার আশঙ্কা করছেন বিভিন্ন পঞ্চায়েত প্রধানেরা। আরামবাগের মলয়পুর ২ পঞ্চায়েত প্রধান সিপিএমের সহদেব সামন্তর অভিযোগ, “ব্যাঙ্ক ম্যানেজার, ডাকঘর, সমবায় সমিতিগুলির কাছে অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য আমরা প্রায় প্রতি দিনই তদবির করছি। কিন্তু ওঁদের কোনও হেলদোল নেই। শ্রমিকদের বিক্ষোভ সামলানো দায় হয়ে যাচ্ছে।” খানাকুল ১ পঞ্চায়েতের প্রধান সিপিএমের শঙ্কর দলুইয়ের অভিযোগ, “আমরা ২৩০০ শ্রমিককে জবকার্ড দিয়েছি। কিন্তু ১২০০ শ্রমিকের অ্যাকাউন্ট খোলা গিয়েছে। অ্যাকাউন্ট না থাকায় যাঁদের কাজ দেওয়া যাচ্ছে না, তাঁরা প্রায়ই খেপে উঠছেন।” একই কথা বলেছেন ওই ব্লকের অরুন্ডা পঞ্চায়েতের উপপ্রধান (বর্তমানে প্রধানের দায়িত্বে) যুধিষ্ঠির সাঁতরা। রামমোহন ২ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তপন ঘোষ, ঘোষপুরের প্রধান সুখদেব জানা প্রমুখ। পুড়শুড়া এবং খানাকুল ২ ব্লকের চিত্রটাও একই রকম। গোঘাট ১ এবং ২ ব্লকের ক্ষেত্রে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের শ্রমিকদের অ্যাকাউন্ট খোলার কাজ কিছুটা সফল হলেও অন্যান্য দারিদ্র্য দূরীকরণ প্রকল্পে অ্যাকাউন্ট খোলায় ব্যাঙ্ক, ডাকঘরের সহযোগিতার অভাব আছে বলে অভিযোগ।
এই অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন মহকুমার বিভিন্ন ব্যাঙ্ক, ডাকঘর ও সমবায় সমিতির কর্তৃপক্ষেরা। মহকুমার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির শাখা ম্যানেজারদের পক্ষ থেকে সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “আমাদের কর্মী সংখ্যা কম, তার উপরে পঞ্চায়েতগুলি নিয়ম মোতাবেক কাজ করে না। হঠাৎ শ’দেড়েক লোককে পাঠিয়ে দিয়ে বলে আজই অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। পূরণ করা ফর্মগুলি পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই হু হু করে অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া সম্ভব নয়। আমরা বারে বারে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষকে বলছি ফর্মগুলি অন্তত পরীক্ষা করে দিন। ওঁরা তা দেননি। পঞ্চায়েত বরং সহযোগিতার পর্যায়ে থাকলে বেশি কাজ হবে।” ডাকঘর বা সমবায়গুলির কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, “ব্যাপক চাপ নিতে পারার পরিকাঠামোই নেই আমাদের। সাধ্য অনুযায়ী অ্যাকাউন্ট খোলার কাজ চলছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.