তৃণমূল নেতাকে খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত এক ব্যক্তিকে গত ১৯ ডিসেম্বর মারধর করেছিল কিছু লোক। বুধবার কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে সত্য মালিক (৪৮) নামে ওই ব্যক্তির।
গোঘাটের গোয়ালপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সত্যবাবুর রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে টানাপোড়েন।
সিপিএম নেতৃত্ব আগে দাবি করেছিলেন, এক সময় তাঁদের দলের সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠতা’ থাকলেও ইদানীং সত্যবাবু সিপিএমের সঙ্গ ত্যাগ করেছেন। যদিও বুধবার সত্যবাবুর মৃত্যুর পরে তাঁকে নিজেদের ‘দলীয় কর্মী’ বলেই দাবি করেছেন তাঁরা। খুনের ঘটনায় অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সত্যবাবুর পরিবারের দাবি, ইদানীং তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গেই ওঠাবসা ছিল তাঁর। দলের নেতা মনোরঞ্জন পাল বলেন, “উনি কোন দলের ছিলেন, সেই বিতর্কে যেতে চাই না। পুলিশ তদন্ত করে ব্যবস্থা নিক।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৯ ডিসেম্বর শ্যাওড়া ইউনিয়ন হাইস্কুলের মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার সময়ে এক দল দুষ্কৃতী হামলা চালিয়ে পালায়। তাদের গুলিতে নিহত হন শেখ নঈমুদ্দিন নামে এক তৃণমূল নেতা। ওই ঘটনায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ ওঠে। তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য দাবি করেন, বামেরাই এই খুনের ঘটনায় জড়িত। যদিও তৃণমূলের তরফে যে ২৮ জনের নামে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়, তাঁদের ১৬ জনই তৃণমূলের। বাকি ১২ জন ফরওয়ার্ড ব্লক ও সিপিএম নেতা-কর্মী।
|
এফআইআর-এ নাম ছিল গ্রাম কমিটির সচিব সত্যবাবুরও। গত ১৯ ডিসেম্বর গোয়ালপাড়া গ্রাম-সংলগ্ন দলকার জলা সংস্কারের কাজ হচ্ছিল একশো দিনের প্রকল্পে। সেখানে কাজ করছিলেন সত্যবাবু। হঠাৎই কিছু লোক হামলা চালায়। শ্রমিকেরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। সত্যবাবুকে ধরে বেদম পেটায় কিছু লোক। পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে কামারপুকুর ব্লক প্রাথমিক হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখান থেকে তাঁকে পাঠানো হয় আরামবাগ মহকুমা হাসপাতাল এবং পরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় সত্যবাবুকে পাঠানো হয় কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে। সেখানেই বুধবার মৃত্যু হয় তাঁর।
সত্যবাবুর উপরে হামলার ঘটনায় অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সত্যবাবুর স্ত্রী দেবীরানি বলেন, “স্বামী আগে সিপিএমের সঙ্গে ছিলেন। এখন তো তৃণমূলের সঙ্গেই মেশামেশি ছিল। কিন্তু কেউ আমাদের পাশে দাঁড়ায়নি। মারধরের পরে কেউ খবরও নেয়নি।” সিপিএম ছেড়ে সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া রমণী সাঁতরা-সহ ২৪ জনের নামে আগেই এফআইআর করেছিলেন দেবীরানি। অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
নিহতের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে চাপানউতোর শুরু হয়েছে। সিপিএমের গোঘাট জোনাল কমিটির সম্পাদক অরুণ পাত্র সত্যবাবুকে মারধরের পরে বলেছিলেন, “উনি আমাদের দলে আগে ছিলেন। এখন তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান জানা নেই। তবে তৃণমূলের সন্ত্রাসের জেরে আমাদের কেউ ওই এলাকায় নেই।” সত্যবাবুর মৃত্যুর খবর পেয়ে এই অরুণবাবুই অবশ্য দাবি করেছেন, “উনি আমাদের লোক ছিলেন। অন্য দলে যাননি।” তৃণমূল নেতা মনোরঞ্জন পালের বক্তব্য, “যে কোনও মূল্যে রাজনৈতিক হানাহানি বন্ধ হওয়া দরকার।”
দু’পক্ষের চাপানউতোরের মাঝে পড়ে বিরক্ত সত্যবাবুর বাবা শিবপ্রসাদ। তিনি বলেন, “আমরা কোনও দলে নেই। আমাদের জন্য কাউকে চোখের জল ফেলতে হবে না। চাকরি, সাহায্য কিচ্ছু চাই না।” |