ভোটাভুটি হচ্ছিল লোকপালের জন্য সংবিধান সংশোধনী বিল নিয়ে। তার মধ্যেই বিবাদে জড়িয়ে পড়ল সিপিএম ও সিপিআই। বিবাদের মূলে সেই পুরনো কারণ, বিজেপি বড় ‘শ্রেণিশত্রু’ না কংগ্রেস!
সিপিএম নেতৃত্বের অভিযোগ, সিপিআই নেতা গুরুদাস দাশগুপ্ত বিজেপি-র ফাঁদে পা দিয়ে তাদের সহযোগিতার পথে চলে যাচ্ছেন। উল্টো দিকে সিপিআই মনে করছে, বিজেপি-কে নিয়ে সিপিএমের গোঁড়ামির ফলেই যাবতীয় সমস্যা হচ্ছে। সংসদে বিজেপি-র সঙ্গে কক্ষ-সমন্বয় মানে তাঁদের সঙ্গে রাজনৈতিক সন্ধি নয়। সিপিএমের অভিযোগ, সিপিআইয়ের সাংসদরা বিজেপি-র সুষমা স্বরাজের কথা শুনে লোকপাল বিলকে ফের স্থায়ী কমিটিতে ফেরত পাঠাতে সচেষ্ট হয়েছিলেন। কর্পোরেট সংস্থাকে লোকপালের আওতায় আনার দাবিকে সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সিপিআই-কে ধোঁকা দিতে চেয়েছিল বিজেপি। সিপিআই নেতারা বলছেন, সিপিএমের কাছে তাঁরা কোনও দলের শ্রেণিচরিত্র বুঝতে চান না।
গত কাল যখন লোকপাল বিল পাশ হচ্ছে, তখন কর্পোরেট সংস্থাকে লোকপালের আওতায় আনার দাবি তোলেন বামেরা। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আঘাত করার মতো নানা বিষয়েও আপত্তি ছিল তাঁদের। সরকার সে সব না মেনে নেওয়ায় ‘ওয়াক-আউট’ করেন বামেরা। কিন্তু এর পর সংবিধান সংশোধনী বিলে বামেরা কী রণকৌশল নেবে, তা নিয়ে শুরু হয় বিবাদ। সংবিধান সংশোধনী বিল ভোটাভুটির জন্য গ্রহণ করা হবে কি না, তাতে সিপিএম সায় জানিয়ে ভোট দেয়। কিন্তু বিলের অনুচ্ছেদ ধরে ধরে যখন ভোটাভুটি হচ্ছে, তখন সিপিএমের সকলে ভোটদানে বিরত ছিলেন। অন্য দিকে গুরুদাস দাশগুপ্তের নেতৃত্বে বাকি বাম-সাংসদরা বিজেপি-র সঙ্গেই বিলের অনুচ্ছেদগুলি পাশ হতে বাধা দেন। সিপিএমের বাসুদেব আচারিয়ার বক্তব্য, “আমরা লোকপালকে সাংবিধানিক মর্যাদা দেওয়ার বিরোধী নই। তাই একেবারে শেষে বিল পাশের সময় আমরা সমর্থন করতাম। কিন্তু ওই বিলের বিভিন্ন অনুচ্ছেদেই রাজ্যের অধিকারে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ করার বিষয় ছিল। সরকার আমাদের আপত্তি না মানায় সেই অনুচ্ছেদগুলি পাশের সময় ভোটদানে বিরত ছিলাম।” সিপিআই নেতারা মনে করছেন, আসলে সুষমা স্বরাজ বিভিন্ন অনুচ্ছেদে সংশোধনের দাবি তুলেছিলেন। বিজেপি-র সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখতেই সিপিএম ভোটদানে বিরত ছিল। বাসুদেববাবুর আবার যুক্তি, অনুচ্ছেদে সংশোধনের দাবি তাঁরাও তুলেছিলেন। সেখানে তাঁরা সুষমার সংশোধনের দাবিকে সমর্থন করে ভোটও দেন। সরকার তা না মানায় পরে আর ভোট দেননি। দুই শিবিরের বাদানুবাদ মেটাতে মধ্যরাত পর্যন্ত সেন্ট্রাল হলে বসে থাকতে হয়েছিল সীতারাম ইয়েচুরিকে। ভোটাভুটির সময় সাংসদরা বেরোতে না পারায়, তাঁরা লবি থেকেই ফোনে কথা বলেন তাঁর সঙ্গে। বাদানুবাদের জল গড়ায় সকালেও। পলিটব্যুরোর নেতারাও বাসুদেবের কাছে বুঝতে চান, কেন তাঁরা ভোটদানে বিরত ছিলেন। সিপিএম নেতারা অবশ্য মনে করছেন, তাঁরা যা করেছেন, ঠিকই করেছেন। আবার সিপিআই-নেতাদের দাবি, অন্য বাম-শরিকরা তাঁদের সঙ্গেই আছেন। |