উত্তরপ্রদেশে ভোটের আগে লোকপাল নিয়েই বিজেপি-র বিরুদ্ধে প্রচারে নামল কংগ্রেস। আর তা শুরু করলেন স্বয়ং সনিয়া গাঁধী। কংগ্রেস সভানেত্রী এ দিন নয়াদিল্লিতে যথেষ্ট কড়া সুরে জানিয়ে দেন, প্রধান বিরোধী দল যে ভাবে লোকপালকে ‘সাংবিধানিক মর্যাদা’ দিতে বাধা দিয়েছে, তাতে তাদের ‘আসল চেহারা’ বেরিয়ে পড়েছে।
সনিয়া-পুত্র রাহুলই প্রথম লোকপালকে ‘মজবুত’ করতে একে সাংবিধানিক মর্যাদা দেওয়ার কথা বলেছিলেন। আর আজ উত্তরপ্রদেশে নির্বাচনে প্রচারে গিয়ে সনিয়ার বেঁধে দেওয়া সুরেই রাহুল বিজেপি-কে আক্রমণ করেছেন। তাঁর অভিযোগ, নির্বাচন কমিশনের মতো স্বাধীন, শক্তিশালী লোকপাল তৈরি করতে চেয়েছিল কংগ্রেস। বিজেপি শক্তিশালী লোকপাল তৈরির পক্ষে নানা যুক্তি দিলেও আসল সময়ে সমর্থন করেনি। বিজেপি-র পাল্টা প্রশ্ন, এখন কেন যত দোষ, নন্দ ঘোষ? বিল পাশ করানোর জন্য সাংসদ জোগাড় করা কংগ্রেসের দায়িত্ব। বিজেপি-র নয়। বিজেপি-র বক্তব্য, তারা লোকপালকে সাংবিধানিক সংস্থা করায় আপত্তি করেনি। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিলের একটি ধারায় রাজ্যে লোকায়ুক্ত গঠনের প্রসঙ্গটি থাকায় তাঁরা সংশোধনী এনেছিলেন। এবং সব চেয়ে বড় কথা, ওই বিলের ৩টি ধারা ভোটে খারিজ হওয়ায় স্পিকারই বলেন, বিলটি অকার্যকর হয়ে গেল। |
লোকপালের জন্য কাল সংবিধান সংশোধনী বিল পাশ করাতে না পেরে বিড়ম্বনায় পড়েছে সরকার। সেই ধাক্কা কাটাতে বিজেপি-র বিরুদ্ধেই যে পাল্টা আক্রমণে যাওয়া হবে, গত কালই তা ঠিক করে দিয়েছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। সংসদেই বিজেপি নেতাদের হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘মানুষ নির্বাচনে আপনাদের শিক্ষা দেবে এ জন্য।’’ পাল্টা আক্রমণের কৌশল ঠিক করে দেওয়ার জন্য মধ্যরাতেই সনিয়া ফোনে প্রণববাবুকে অভিনন্দন জানান। পরে আজ সকালে দলীয় দফতরে এসে সনিয়া বলেন, “আমরা লোকপালকে মজবুত করতেই সাংবিধানিক মর্যাদা দিতে চেয়েছিলাম। বিজেপি-ও তা সমর্থন করবে বলে স্থায়ী কমিটিতে কথা দিয়েছিল। কিন্তু কাল তারা সেই সংশোধনীর পক্ষে ভোট দেয়নি। বিজেপি-র আসল চেহারাটা কাল আমরা দেখতে পেয়েছি।” কংগ্রেস নেতৃত্বের কাছে একটা বিষয় স্পষ্ট। তা হল, বিজেপি লোকপাল বিলে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো, সিবিআইয়ের স্বাধীনতা, লোকপালের নির্বাচনের মতো নানা খুঁটিনাটি বিষয়ে আপত্তি তুলেছে। কিন্তু এত খুঁটিনাটি বিষয় নির্বাচনী প্রচারে বোঝানো সম্ভব নয়। সাধারণ মানুষকে তাই বোঝাতে হবে, চার দশকে কোনও দল যা করতে পারেনি, লোকপাল বিল নিয়ে এসে কংগ্রেস তা করে দেখিয়েছে। উল্টো দিকে লোকপালকে আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা আটকে দিয়েছে বিজেপি। কংগ্রেসের অভিযোগ, কর্নাটক, উত্তরাখণ্ড, গুজরাতের মতো রাজ্যে বিজেপি সরকারে রয়েছে, সেখানে তারা দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিতে চায়। তাই কেন্দ্রে লোকপাল গঠনের কথা বললেও তারাই যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ধুয়ো তুলে রাজ্যে শক্তিশালী লোকায়ুক্ত গঠনে নারাজ।
কংগ্রেসের এই আক্রমণে বিজেপি কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে। অরুণ জেটলি বা সুষমা স্বরাজরা আজ বোঝাতে চেয়েছেন, সরকার এমন দুর্বল ও ত্রুটিপূর্ণ লোকপাল গঠন করতে চেয়েছিল, যার কোনও সাংবিধানিক বৈধতা নেই। সেই বিলে বাধা দেওয়া প্রধান বিরোধী দল হিসেবে বিজেপির নৈতিক দায়িত্ব। বিজেপি নেতাদের বক্তব্য, লোকপালকে সাংবিধানিক মর্যাদা দেওয়াকে রাহুল ‘গেমচেঞ্জার’ হিসেবে বর্ণনা করছেন। সনিয়া একে পথপ্রদর্শক বলে বর্ণনা করছেন। কিন্তু সনিয়া-রাহুলের স্বপ্নপূরণ করা, সংবিধান সংশোধনী বিল পাশ করানোর জন্য সংখ্যা জোগাড় করাটা বিজেপির কাজ নয়। দলের নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, “কংগ্রেসের অনেক সাংসদ কেন লোকসভায় উপস্থিত ছিলেন না? কংগ্রেস আগে নিজের ঘর গোছাক।”
কংগ্রেস নেতৃত্বের বক্তব্য, ইউপিএ-র ২৭৫ জন সদস্য নিয়েও সংবিধান সংশোধনী বিল পাশ করা সম্ভব নয়। কাজেই বিজেপি-র সমর্থন ছাড়া তা উপায় ছিল না। বিজেপি সব জেনেবুঝেই তা আটকে দিয়েছে। বিজেপির নেতাদের পাল্টা প্রশ্ন, ওই বিলে তাঁরা যে সব সংশোধনের দাবি করছেন, তা না মানলে তাঁরাই বা কী ভাবে সমর্থন করবেন? যশবন্ত সিন্হা আজ ফের দাবি করেন, সংবিধান সংশোধনী বিলের ভোটাভুটিতে হেরে গিয়ে সরকারের আর ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই। |