এক দিকে লোকায়ুক্ত-প্রশ্নে সংশোধনী আনতে মরিয়া শরিক তৃণমূল, অন্য দিকে সমর্থক লালু-মুলায়ম-মায়াবতীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন এহেন পরিস্থিতিতে আগামিকাল রাজ্যসভায় মূল লোকপাল বিল পাশ করানোই মনমোহন সিংহের সরকারের চ্যালেঞ্জ। সংখ্যা জোগাড়ের তাগিদে আজ রাজ্যসভায় লোকপাল বিল পেশই করেনি সরকার। আগামিকাল সংসদের বর্ধিত অধিবেশনের শেষ দিন। ফলে এই শীতকালীন অধিবেশনে লোকপাল বিল পাশ করাতে হলে হাতে আর খুব বেশি সময় নেই।
‘প্রত্যয়ী’ প্রধানমন্ত্রী যদিও আজ দাবি করেছেন যে রাজ্যসভাতেও লোকপাল বিল পাশ হয়ে যাবে। কিন্তু ঘটনা হল, ইউপিএ-র প্রথম জমানা থেকে আজ পর্যন্ত রাজ্যসভায় গরিষ্ঠতা নেই সরকারের। ফলে লোকসভায় বিরোধীরা এককাট্টা মনোভাব নেওয়ার পর শরিক এবং সমর্থক দলগুলি তো বটেই ছোট ছোট দল, নির্দল, এমনকী মনোনীত সাংসদদেরও দ্বারস্থ হতে হচ্ছে কংগ্রেসকে।
কাল কোনও কারণে যদি লোকপাল বিল আটকে যায়, তা হলে কী হবে?
কংগ্রেস সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, বিরোধীদের কারণে যদি বিল পাশ না হয়, তা হলে রাজনৈতিক ভাবে তাদের তেমন কোনও ক্ষতি নেই। সে ক্ষেত্রে বিজেপি-সহ বিরোধীদের দায়ী করে আক্রমণের তীব্রতা বাড়ানোর সুযোগ পাওয়া যাবে। কিন্তু শরিক ও সমর্থকদের কারণে যদি বিল পাশ না করা যায় তা হলে সরকারকে কোণঠাসা করার নতুন অস্ত্র হাতে পাবে বিজেপি। ঠিক যে ভাবে, মমতা খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির সিদ্ধান্ত আটকে দেওয়ার পর কংগ্রেসকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছিল তারা।
সরকারের আশঙ্কা, লালু-মুলায়ম-মায়াবতীর দল লোকসভার মতো রাজ্যসভাতেও কক্ষ ত্যাগের পথ নিতে পারে। সে ক্ষেত্রে কিন্তু বিল পাশ করানো কঠিন হবে। তাই তাদের বোঝানোর চেষ্টা চলছে। যদিও কংগ্রেসের একাংশের মতে, আরজেডি-সপা-বিএসপি ওয়াক আউট করলেও বিল পাশে সমস্যা হবে না। সেই পক্ষের প্রতিনিধি হিসেবে সংসদীয়মন্ত্রী পবন বনশল আজ দাবি করেন, লালু-মুলায়ম-মায়াবতীর দল কক্ষ ত্যাগ করলে রাজ্যসভায় ১০৯ জনের সমর্থন প্রয়োজন হবে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য। এর থেকে বেশি সংখ্যক সাংসদেরই সমর্থন আছে সরকারের পক্ষে। |
যার পাল্টা হিসেবে বিজেপি-র বক্তব্য, সব নির্দল ও মনোনীত সাংসদকে নিজেদের পক্ষে ধরে এই হিসেব কষছে সরকার। বাস্তবে সব নির্দল ও মনোনীত সাংসদ আদৌ সরকারের পক্ষে ভোট দেবেন না।
সরকারের তরফে চেষ্টা চলছে তৃণমূলকে বোঝানোরও। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মুকুল রায়ের সঙ্গে আজ আলোচনা করেছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। তবে তৃণমূলের সংশোধনী মানার কোনও ইঙ্গিত কংগ্রেসের তরফে এখনও পর্যন্ত নেই। অনড় তৃণমূলও।
তৃণমূলের বিরোধিতার আঁচ পেয়ে তাদের কাছে টানতে বিজেপি-ও ময়দানে নেমে পড়েছে।
লোকায়ুক্ত নিয়ে তৃণমূলের দেওয়া সংশোধনীর খসড়া তৈরিতে সাহায্য করেছেন রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা অরুণ জেটলিই। পাশাপাশি তিনি আজ প্রণব মুখোপাধ্যায়, কপিল সিব্বল, নায়ারণস্বামীর সঙ্গে বৈঠক করে জানিয়ে দিয়েছেন, লোকায়ুক্ত, সিবিআই এবং লোকপাল নিয়োগের পদ্ধতি নিয়ে তাঁদের সংশোধন মানা না-হলে বিজেপি-র পক্ষে বিলটিকে সমর্থন করা সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা হয়েছে জেটলির। |
লোকসভায় লোকপালকে সাংবিধানিক মর্যাদা দেওয়া সংক্রান্ত বিল আটকানোর সময় বিজেপি-সহ গোটা এনডিএ-র সঙ্গে বাম, বিজেডি, টিডিপি, এডিএমকে-ও ভোট দিয়েছিল সরকারের বিরুদ্ধে। সেই ‘জোট’ অটুট রাখার চেষ্টার পাশাপাশি আরও দলকে কাছে টানার প্রয়াস চালাচ্ছেন জেটলিরা। লালু-মুলায়ম-মায়াবতীর দল যাতে সরকারের বিরুদ্ধে ভোট দেয়, সেই বিষয়টিও উস্কে দিতে চাইছে বিজেপি।
জেটলির কথায়, “শুধু রণহুঙ্কার দিলেই হবে না, আঘাতও করতে হবে।” এই দলগুলিকে বিজেপি বোঝানোর চেষ্টা করছে, লোকপাল বিলে লোকায়ুক্ত গঠনের যে পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে, তাতে সব রাজ্যকেই খেসারত দিতে হবে। ফলে শিবির নির্বিশেষে সব দলেরই বিলের বিতর্কিত ধারার বিরুদ্ধে একজোট হওয়া দরকার। |