লোকায়ুক্ত-সংশোধনী মানতে নারাজ কেন্দ্র
লোকপাল বিলে লোকায়ুক্ত গঠনের বিষয়কে কেন্দ্র করে সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে তৃণমূলের সংঘাতমূলক পরিস্থিতি তৈরি হল।
গত কাল লোকসভায় লোকপাল বিলের তীব্র সমালোচনা করলেও সরকারের পক্ষেই ভোট দিয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু তার পর থেকে পরিস্থিতি ক্রমশ ঘোরালো হয়ে উঠেছে। আগামিকাল রাজ্যসভায় বিষয়টি নিয়ে ভোটাভুটির আগে অবস্থান আরও কঠোর করছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশে ওই বিলে সংশোধনী প্রস্তাব জমা দিয়েছে তৃণমূল। আজ তৃণমূলের রাজ্যসভার তিন সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়, ডেরেক ও’ব্রায়েন এবং দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যসভার অফিসে সংশোধনী প্রস্তাব জমা দিয়ে এসেছেন। তৃণমূলের সংসদীয় দলনেতা মুকুল রায়ের কথায়, “সংশোধনী সরকার মানবে কি না সেটা তাদের ব্যাপার। যদি না-মানে, তবে পরবর্তী পদক্ষেপের কথা ভাবা হবে।” তবে দলীয় সূত্রের খবর, কেন্দ্র তাদের প্রস্তাবিত সংশোধনী না-মানলে সরকারের বিরুদ্ধেই ভোট দেবে তৃণমূল।
তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের বক্তব্য, গত কাল যে বিলটি ধ্বনিভোটে পাশ করিয়েছে সরকার, তা আজ খতিয়ে দেখা হয়েছে। সেই বিলে আদৌ সন্তুষ্ট নন মমতা। দলীয় নেতৃত্বের অভিযোগ, লোকায়ুক্ত গঠনের সময়ে রাজ্যকে সম্পূর্ণ ক্ষমতা দেওয়ার প্রশ্নে তৃণমূলের দাবি মানা হয়নি। আর তাই আজ শরিক দল হয়েও সংশোধনী দিতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা।
কী রয়েছে তৃণমূলের সংশোধনী প্রস্তাবে?
প্রাথমিক ভাবে সংবিধানের ২৫৩ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুসারে কেন্দ্রীয় সরকার লোকপালের ধাঁচে রাজ্যে লোকায়ুক্ত গঠন বাধ্যতামূলক করতে চেয়েছিল। পরে বিরোধী এবং তৃণমূল-সহ শরিক দলের চাপে তা সংশোধন করে বলা হয় যে, রাজ্য অনুমতি দিলে তবেই লোকায়ুক্ত গঠন হবে। কিন্তু সেই লোকায়ুক্ত গঠন হবে কেন্দ্রের স্থির করে দেওয়া পথেই। এতেই প্রবল আপত্তি মমতার। তাঁর বক্তব্য, প্রয়োজন হলে রাজ্য নিজের মতো করে লোকায়ুক্ত তৈরি করবে। কেন্দ্রের খবরদারি চলবে না। কেন্দ্র খুব বেশি হলে তার লোকপাল বিলটিকে মডেল হিসেবে রাজ্যের সামনে তুলে ধরতে পারে। কিন্তু সেটা পুরোপুরি মেনে চলতে রাজ্য বাধ্য নয়। কারণ, তা হলে সেটা হবে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপর সরাসরি আঘাত হানার সামিল।
কী চায় তৃণমূল
রাজ্য নিজের মতো করে লোকায়ুক্ত গড়বে। কেন্দ্রের খবরদারি চলবে না।
লোকপাল বড়জোর মডেল হতে পারে।
তৃণমূলের সংশোধনীতে এ কথাই বলা হয়েছে। বলা হচ্ছে, সংবিধানের ২৪৬ ধারা অনুযায়ী রাজ্য তার নিজের লোকায়ুক্ত নিজেই তৈরি করে নিতে পারে। ফলে ‘লোকপাল এবং লোকায়ুক্ত বিল’ এই নামটি পাল্টে বিলের নাম রাখা হোক ‘লোকপাল বিল’। আর রাজ্যে লোকায়ুক্ত গঠন নিয়ে যে সব অনুচ্ছেদ রয়েছে, (অর্থাৎ, তিন নম্বর পর্বের ৬৯ থেকে ৯৩ অনুচ্ছেদ এবং ৬৪ নম্বর ধারার ৫ নম্বর উপধারা) সেগুলি বাদ দিয়ে দেওয়া হোক। আজ গোটা বিষয়টি নিয়ে ডিএমকে, এডিএমকে, বিজেডি-র সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করেছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদেরা। বিজেপি সূত্রের দাবি, তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে কথা হয়েছে অরুণ জেটলিরও।
অন্য দিকে সরকারের পক্ষ থেকেও তৃণমূলকে বোঝানোর চেষ্টা শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় আজ বৈঠক করেছেন মুকুল রায় ও তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। লালু বা মুলায়মের বিরোধিতায় রাজ্যসভায় এই বিল আটকে যাক বা না-যাক, কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব চাইছেন, বিষয়টি নিয়ে শরিক দলগুলির মধ্যে যেন কোনও ফাটল না ধরে। দুই তৃণমূল নেতাকে প্রণববাবু বুঝিয়েছেন, লোকপাল বিল বর্তমান অবস্থায় পাশ হলেও কেন লোকায়ুক্ত গঠনের বিষয়টি সম্পূর্ণ ভাবে রাজ্য সরকারের উপরে নির্ভর করবে। কেন রাজ্য সরকার না চাইলে লোকায়ুক্ত হবে না। মমতার বোঝার সুবিধার জন্য বিষয়টি লিখিত ভাবেও মুকুল, সুদীপকে দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, প্রয়োজনে কাল রাজ্যসভায় ফের বিষয়টি নিয়ে তিনি বিশদ ব্যাখ্যা দেবেন।
কিন্তু তাদের সংশোধনী প্রস্তাব মানতে এখনও পর্যন্ত কংগ্রেস রাজি নয়। সংশোধনী মানার ক্ষেত্রে একটা প্রক্রিয়াগত অসুবিধাও রয়েছে। কারণ, শুধু রাজ্যসভায় কোনও বিলের সংশোধনী পাশ করানো যায় না। তা হলে হয় তা ফের লোকসভায় তা পাশ করাতে হবে, না হয় সিলেক্ট কমিটিতে পাঠাতে হবে অথবা দুই কক্ষের যৌথ অধিবেশন ডেকে বিল পাশ করাতে হবে। যা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।
অন্য দিকে তৃণমূলও নিজেদের অবস্থানে অনড়। গত কাল গভীর রাত থেকেই তাদের তরফে এ ব্যাপারে তৎপরতা শুরু হয়। লোকসভায় ভোটাভুটি চলাকালীনই কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন মমতা। যে হেতু সরকার তাঁর কথা রাখেনি, তাই দলীয় সাংসদেরা  যাতে বিপক্ষে ভোট দেন, সেই বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু তখন তাঁরা লোকসভার ভিতরে। ফলে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তৃণমূল নেত্রীর বক্তব্য, বিজেডি সাংসদ ভর্তৃহরি মহতাব গত কাল তাঁর বক্তৃতায় যে ভাবে বিলের বিরোধিতা করার আহ্বান করেছেন, তাতে তৃণমূল সাংসদদেরও সাড়া দেওয়া উচিত ছিল। মহতাব গত কাল লোকসভায় বলেন, কংগ্রেস সরকার যেটা করছে, তাতে রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ হবে। এর বিরোধিতায় সমস্ত আঞ্চলিক দলের এক জোট হওয়া উচিত।
তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের আশঙ্কা, লোকায়ুক্ত গঠনের সময় যদি সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ না থাকে, তা হলে তার সুযোগ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে গদিচ্যুত পর্যন্ত করা যেতে পারে। তাঁদের আশঙ্কার কারণ হল, চলতি বছরে কর্নাটকে এই লোকায়ুক্তকে ব্যবহার করেই বিজেপি-র মুখ্যমন্ত্রী বি এস ইয়েদুরাপ্পাকে গদিচ্যুত করা হয়েছিল। মমতার আরও ক্ষোভের কারণ, কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে লোকায়ুক্ত নিয়ে যখন তাঁর প্রথম কথা হয়, তখন তিনি স্পষ্ট ভাবেই তাঁর মতামত জানিয়েছিলেন। প্রণববাবুর সঙ্গে গত রবিবারের বৈঠকেও মমতা বলেছিলেন, লোকায়ুক্ত গঠনের প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর কথা মাথায় রাখা হোক। সে সময় কংগ্রেসের পক্ষ থেকে তাঁকে এই দাবি মানার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে মূল বিলটিকে সংশোধন করে সংবিধানের ২৫২ নম্বর অনুচ্ছেদের আওতায় যে ভাবে লোকায়ুক্ত গঠনের কথা বলা হয়, তাতে কেন্দ্রের ভূমিকা অনিবার্য ভাবেই থেকে যাচ্ছে। আর তাই খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি, পেনশন বিলের পর লোকপাল নিয়ে ফের সম্মুখ সমরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.