|
|
|
|
|
ধানের রানি |
চাল, চিঁড়ে, গুড়— এই নিয়েই ছিল দিনাজপুর। দেশভাগের ফলে সুবিশাল শস্য-শ্যামলা দিনাজপুর ভেঙে হয় পশ্চিম দিনাজপুর। তারও পরে প্রশাসনিক কাজের সুবিধের জন্য আবার ভাঙে। হয় উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা। এক সময় এই দুই জেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে বহু নদী। নদীবিধৌত অঞ্চলের মাটি উর্বর। এ ছাড়া মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সম্পদের জন্য প্রাচীন কাল থেকেই রাজা এবং জমিদাররা এখানে বসতি করেন। দিঘি, পুকুর কাটান। জেলা সদর কর্ণজোড়ার পার্শ্ববর্তী এলাকায় আটচল্লিশটি পুকুর খনন করা হয়েছিল। দেশভাগের পরে প্রচুর উদ্বাস্তুও আসেন। ঝোপঝাড় পরিষ্কার করে তাঁরাও জমিকে আবাদি করে তোলেন। বনভূমির জন্য বৃষ্টিপাতও প্রচুর। তাপমাত্রা গরমে সর্বোচ্চ ৩৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড আর শীতে সর্বনিম্ন ৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। সব মিলিয়ে ধান চাষের উপযুক্ত পরিবেশ। অনেক রকম ধানই হয়। তবে উল্লেখযোগ্য তুলাইপাঞ্জি। ধানের রানি। পেঁজা তুলোর মতো নরম ও ধবধবে সাদা। মুখে দিলেই নিমেষে মিলিয়ে যায়। তাই বুঝি এর এমন নাম। কথিত আছে, এই ধানের চাল রান্না হলে তার সুগন্ধ আশপাশের চার থেকে পাঁচটি বাড়িতে পৌঁছে যায়। এই সুগন্ধ নির্ভর করে শীতের ওপর। যে বছর আশ্বিন-কার্তিক মাসে শীত বেশি পড়ে, সে বছর তুলাইপাঞ্জির সুগন্ধও বেশি হয়। এই উন্নত মানের মিহি দানার চালের ভাত সে আমলে কেবল রাজা-মহারাজারা ভোজন করতেন। কৃষকরা শুধুই চাষ করতেন। এর স্বাদ পাওয়ার সৌভাগ্য তাঁদের খুবই কম হত। এই ধানের বীজ কে, কোথা থেকে এবং কী ভাবে নিয়ে এসে প্রথম বপন করেন, জানা যায় না। মনে করা হয়, উন্নত সুগন্ধি কোনও প্রজাতির ধান গাছের ফুলের সঙ্গে সাধারণ প্রজাতির ধান গাছের ফুলের পরাগসংযোগের ফলে তুলাইপাঞ্জি ধানের উৎপত্তি। বহু পুরনো এই ধান। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার তুলাই নদীর দুই তীরে পলিবিধৌত অঞ্চলে প্রচুর তুলাই ধান উৎপন্ন হত। অধিকাংশ পাটের জমিতে এর চাষ হয়। পাটের ঝরা পাতা ও শিকড় জমির উর্বরতাকে বাড়িয়ে তোলে। চাষিদের বাড়িতে কোজাগরী পূর্ণিমার দিন তুলাইপাঞ্জির গাছ পূজিত হত। দিনাজপুর জেলায় প্রত্যেক পুজোয়, উৎসবে, পার্বণে এই চাল ব্যবহৃত হয়। ভাইফোঁটায় এই চালের পায়েস দিলে নাকি ভাই ও বোনের সম্পর্ক মধুর থাকে। তাই দুর্মূল্যের বাজারে কষ্ট করেও ওই দিন এই জেলার ঘরে ঘরে তুলাইপাঞ্জি চালের পায়েসের আয়োজন করা হয়। এ হেন তুলাইপাঞ্জির জন্মবৃত্তান্ত, প্রকৃতি, চাষের কথা এবং এর বিভিন্ন লোকাচার, লোককথা, কিংবদন্তি নিয়ে বৃন্দাবন ঘোষ তুলাইপাঞ্জি নামে একটি বই লিখেছেন। রয়েছে একে নিয়ে ছড়া-প্রবাদ-প্রবচন। বাহান্ন পাতার বইটিতে তুলাইপাঞ্জির সমস্যা ও সম্ভাবনার কথাও বলা হয়েছে। আর আছে তুলাইয়ের সবচয়ে বড় হাট মোহিনীগঞ্জের কথা। তুলাইয়ের বিষয়ে নানা প্রশ্নের হদিশও মিলবে এই বইতে।
|
কৃতিত্ব |
|
ছবি: শুভাশিস দাশ |
দিনহাটা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী দেবযানী সরকার। সবাইকে অবাক করে এ বার তার ঝুলিতে এল জাতীয় পুরস্কার। এই বছরের মাঝামাঝি হায়দরাবাদে অনুষ্ঠিত জাতীয় যোগ প্রতিযোগিতায় ১০ থেকে ১৫ বছর বিভাগে দেবযানী পঞ্চম স্থান অধিকার করে দিনহাটা তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ উজ্জ্বল করেছে। এই বিভাগে বাংলার হয়ে একমাত্র দেবযানীই জাতীয় পুরস্কার এনেছে। বাবা দেবেশকান্তি ও মা শেলি সরকারের উৎসাহে মাত্র ছ’বছর বয়স থেকে দেবযানীর যোগ-চর্চা শুরু। তার পর আর তাকে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। মহকুমা, জেলা, রাজ্য স্তর থেকে এ বার জাতীয় স্তরে পৌঁছে গিয়েছে দেবযানী। তার সাফল্যে দিনহাটাবাসী স্বাভাবিক ভাবেই খুশি। দেবযানী যোগ নিয়ে অনেক দূর যেতে চায়। তবে এই মুহূর্তে পড়াশুনো তাকে ব্যস্ত রেখেছে। দেবযানী সফল হোক, প্রত্যাশা রইল।
|
অন্ধ বাউল |
|
ছবি: শোভন দেব |
রাম সরেন। দক্ষিণ দিনাজপুরের চিঙ্গিশপুর গ্রামের বাসিন্দা। জন্ম থেকেই অন্ধ। পেটের তাগিদে ঘুরে বেড়ান নানা দিকে। গান সহায়। সঙ্গী একতারা এবং স্ত্রী। শিল্পীকে দেখা যায় কখনও বাসে, বাজারে, কখনও গ্রামের মেঠো পথে। শোনান নানা রকম গান। বাউল, ভাটিয়ালি, কীর্তন। যা-ই গান, চার পাশে জমে যায় শ্রোতার দল।
|
শিল্পী |
সুরকার ও গীতিকার হিসেবে তাঁর পরিচিতি ছড়িয়েছে জেলার বাইরেও। তাঁর লেখা ও সুরারোপিত গানগুলি শোনা যায় উত্তরের খ্যাত-অখ্যাত লোকশিল্পীদের কণ্ঠে। তিনি জলপাইগুড়ির বেরুবাড়ির ক্যামেলিয়া নগরের অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক আসনা রায়। গানে গানে লিখেছেন বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধের কথা জয় বাংলার ডাকে সাড়া দিল জনগণ/হাজার হাজার শহিদ হল বাঙালির জীবন। তাঁর গানে বাঁধা পড়েছে উত্তরবঙ্গের প্রধান নদী তিস্তা তিস্তা নদীরে ও নদী/তোর ও নদী প্রেমের টানে রে/ চরায় গিয়ে লোকে সংসার পাতে/ ঘোলা জলে তোর সোনার ফসল ফলে রে। এ পর্যন্ত লিখেছেন প্রায় ১৬০টি গান। সাক্ষরতা, কুসংস্কার দূরীকরণ, পণপ্রথা, শিশুশিক্ষা থেকে শুরু করে সমবায় কিংবা কৃষিজমিতে শিল্প হলে কী হয় সবই এসেছে তাঁর লেখা প্রচারমূলক গানে। শিল্পীর রচিত ‘নিদান চাউলিয়া মানষির কাথা’ নাটকটি তাঁকে প্রভূত খ্যাতি দিয়েছে। সে এক নিঃস্ব মানুষের কথা, দীনহীন হয়েও যাঁর মুখে লেগে থাকে হাসি। কিন্তু নিরক্ষর হওয়ার দরুণ জীবনের প্রতি পদে যাঁকে ঘা খেতে হয়। গ্রাম বাংলার ছেলেমেয়েদের নিয়ে আসনা তৈরি করেছেন নাট্যদল ক্যামেলিয়া।
|
শিকড়ের টান |
গাছের শিকড় দেখলেই শুরু হয়ে যায় ভাবনা-চিন্তা। সে’টিকে কোনও কিছুতে রূপ দেওয়া যায় কি না এ নিয়েই ভাবনার জালে মগ্ন হয়ে যাওয়া। তখনই বসে পড়েন হ্যাকস, বাটালি আর হাতুড়ি নিয়ে। যতক্ষণ পর্যন্ত সেটি শিল্পের ছোঁয়া মেখে নতুন রূপ পাচ্ছে, ততক্ষণ কাজে ডুবে থাকা। ঠিক পেশা নয়, নেশা। ডুয়ার্সের আলিপুরদুয়ার এক নম্বর সমষ্টির সবুজ ঘেরা ছায়া-শীতল প্রত্যন্ত গ্রাম শালকুমার হাটে বাড়ি। আশেপাশের সকলেই চেনেন। নাম নবকুমার রায় সরকার। অভাবের সংসার। কিন্তু থমকে যাননি। খুব ছোট থেকেই এই নেশা তাকে পেয়ে বসে। তাঁর হাতের স্পর্শে সব কিছুই যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে। পশুপাখি থেকে শুরু করে বর্তমান সমাজের বিভিন্ন বিষয় সবই আসে তাঁর শিল্পে। গামার কাঠ দিয়ে তৈরি করেন নানা মডেল। তাঁর মডেলগুলো দেখলে চক্ষুস্থির হয়ে যায়। শিল্পকে ভাল না বাসলে কখনও কি এত কিছু সম্ভব? নিজস্ব চিন্তাভাবনা ও একাগ্রতাকে সঙ্গী করেই পথ চলা। একক চেষ্টাতেই সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে ওঠা। স্বপ্ন একটাই, এই শিল্পকে নিয়েই আমরণ পথ চলা।
|
উত্তরের কড়চা বিভাগে ছবি ও লেখা দিলে পুরো নাম ও ঠিকানা উল্লেখ করবেন।
উত্তরের কড়চা
এ বি পি প্রাঃ লিমিটেড
১৩৬/৮৯ চার্চ রোড শিলিগুড়ি ৭৩৪৪০১ |
|
|
|
|
|
|