পশ্চিমবঙ্গের আট পুরসভার জন্য সুখবর ইংরেজি নববর্ষে । উত্তরবঙ্গের তিন এবং দক্ষিণবঙ্গের পাঁচটি পুরসভা এলাকায় পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহ ও নিকাশি ব্যবস্থার পরিকাঠামো গড়ে তোলার জন্য ২০০ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। নতুন বছরের শুরুতেই ওই শহরগুলিতে পরিকাঠামো নির্মাণের কাজে হাত দেওয়া হবে।
পানীয় জল সরবরাহের জন্য রাজ্যের নগরোন্নয়ন দফতরের তৈরি সবিস্তার প্রকল্প রিপোর্ট ২০০৯ সালেই পাঠানো হয়েছিল দিল্লিতে। জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আর্বান রিনিউয়াল মিশন বা জেএনএনইউআরএমের আওতায় পশ্চিমবঙ্গের ছোট ও মাঝারি পুরসভা এলাকার পরিকাঠামো উন্নয়ন কর্মসূচির জন্য বরাদ্দ টাকা চাওয়া হয়। কিন্তু সেই টাকা আসেনি। ওই টাকা না-পাওয়ার জন্য তখনকার বাম সরকারকেই দায়ী করেছে নতুন সরকার। রাজ্যের নগরোন্নয়ন দফতরের বক্তব্য, কেন্দ্রের টাকা পাওয়ার জন্য রাজ্য ‘ম্যাচিং গ্র্যান্ট’ দিতে অপারগ বলে আগেকার সরকার জানিয়ে দিয়েছিল। টাকা পাওয়া যায়নি সেই কারণেই। তার পরে, ২০১০-’১১ আর্থিক বছরে রাজ্যের ছোট শহরগুলির জন্য নতুন ভাবে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করে কেন্দ্র।
সুযোগ হাতছাড়া করেনি রাজ্যের নতুন সরকার। ওই প্রকল্পে ‘ম্যাচিং গ্র্যান্ট’ দিতে তারা রাজি বলে গত অক্টোবরেই কেন্দ্রকে জানিয়ে দেওয়া হয়। রাজ্যের প্রকল্পগুলি যাতে মঞ্জুর করা হয়, সেই জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই কথা বলেন কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রী কমল নাথের সঙ্গে। চিঠি লিখেও ছোট শহরগুলির পানীয় জল প্রকল্পের জন্য টাকা দাবি করেন মমতা। তার পরেই কমল নাথ এবং কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী সৌগত রায়ের সঙ্গে বৈঠক করেন রাজ্যের নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। চলতি মাসের গোড়ায় রাজ্যকে জানিয়ে দেওয়া হয়, আট পুরসভা এলাকার জন্য ২০০ কোটি টাকা মঞ্জুর করা হয়েছে।
আগের সরকার যেখানে ‘ম্যাচিং গ্র্যান্ট’ দিতে পারেনি, তীব্র অর্থসঙ্কটের মধ্যে রাজ্যের এখনকার সরকার ওই টাকা দেবে কী ভাবে? |
ফিরহাদ হাকিম বলেন, “রাজ্য বাজেটে আমাদের দফতরের জন্য যে-টাকা বরাদ্দ আছে, তার থেকেই ওই ‘ম্যাচিং গ্র্যান্ট’ দিচ্ছি আমরা। এই ব্যাপারে অর্থ দফতরের অনুমোদনও চলে এসেছে। জানুয়ারিতেই দরপত্র ডাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” এই প্রকল্পে আপাতত কাজ হবে কোচবিহার, বালুরঘাট, ইংরেজবাজার, এগরা, সাঁইথিয়া, বীরনগর, চন্দ্রকোনা এবং রামজীবনপুর পুরসভা এলাকায়।
কেন্দ্রের টাকায় কী কাজ হবে?
রাজ্য নগরোন্নয়ন সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ওই সব শহরে বহু দিন ধরেই পরিস্রুত পানীয় জলের অভাব রয়েছে। তা ছাড়া পুর এলাকা বলে পরিচিত হলেও সেখানকার নিকাশি ব্যবস্থা ভাল নয়। কেন্দ্রের টাকায় মূলত পানীয় জল আর নিকাশির কাজই হবে। তিনি বলেন, “এই কাজ দ্রুত শেষ করা গেলে প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষ উপকৃত হবেন।”
নগরোন্নয়ন সচিব আরও জানান, দার্জিলিং, মাল, আলিপুরদুয়ার, পুরুলিয়ার মতো আরও ১০টি পুরসভা এলাকায় একই ধরনের কাজ করার জন্য একই কেন্দ্রীয় কর্মসূচির আওতায় ৪০০ কোটি টাকার সবিস্তার প্রকল্প রিপোর্ট কেন্দ্রের কাছে জমা দেওয়া আছে। তাঁর আশা, আগামী বছর নেহরু মিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ে যে-কাজ শুরু হবে, সেই তহবিল থেকে ওই শহরগুলির জন্য জল সরবরাহ এবং নিকাশির পরিকাঠামো উন্নয়নের টাকা পাওয়া যাবে। |