‘পার্টি শুধু ক্ষমতার জন্য নয়’
সিপিএমের ‘গোপন’ কেশপুর সম্মেলন
যেন ‘গভর্নমেন্ট ইন এক্সাইল’নির্বাসিত সরকার। একদা ‘দুর্গ’ থেকে নির্বাসিত। গোপন আস্তানায় হয়েছে ঠাঁই। সেখান থেকেই পরিচালিত হচ্ছে ফিরে আসার লড়াই। তবে কেশপুর-দুর্গের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়াটা যে ‘সহজ নয়’, মেদিনীপুর শহরের কৃষকভবনে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত সিপিএমের কেশপুর জোনাল সম্মেলনে সে কথাই আলোচিত হল সবিস্তারে।
স্মরণকালের মধ্যে এই প্রথম সিপিএমের কেশপুর জোনাল কমিটির সম্মেলন হল বাইরে। দলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কার্যালয়ের লাগোয়াই ‘কৃষকভবন’। সেখানেই প্রায় শ’দেড়েক সদস্য-প্রতিনিধির উপস্থিতিতে সম্মেলন চলে বেলা এগারোটা থেকে দু’টো পর্যন্ত। প্রতিনিধিদের অনেকেই রাজ্যে পালাবদলের পর থেকে কেশপুর ছাড়া। ঠাঁই মূলত মেদিনীপুর শহর ও জেলার অন্য কয়েক জায়গায়। সে-সব আপাত গোপন আস্তানা থেকেই শ’দেড়েক প্রতিনিধি সম্মেলনে যোগ দিতে আসেন। সদস্যদের গতিবিধি কেউ যাতে আন্দাজ করতে না-পারেন, সে জন্য কৃষকভবনের সামনে আলাদা ভাবে ‘নজরদারি’র ব্যবস্থা করাও হয়েছিল। সিপিএম কর্মীরাই চালান এই ‘নজরদারি’। বিভিন্ন মামলায় ‘ফেরার’ নেতা-কর্মীরা অবশ্য এ দিনও রয়ে যান অন্তরালেই। অন্তরালে থেকেই জোনাল সম্পাদক পদে পুনর্নির্বাচিত হন আহমেদ আলি। নতুন জোনাল কমিটিতে রয়েছেন তড়িৎ খাটুয়া, এন্তাজ আলি, নুরুল ইসলামের মতো অন্য ‘ফেরার’ নেতারাও। তবে বাদ পড়েছেন একটি কঙ্কাল-মামলায় অভিযুক্ত কেশপুরের একদা ডাকসাইটে নেতা হীরালাল ভুঁইয়া। দলের জেলা সম্পাদক দীপক সরকার, জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সত্যেন মাইতি, কেশপুরের বিধায়ক রামেশ্বর দোলুইয়ের উপস্থিতিতেই অনুষ্ঠিত হয় সম্মেলন।
কেশপুরের পরিস্থিতি যে এখনই ‘অনুকূল’ হবে না, সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তা স্বীকার করে নেন সবাই। পাশাপাশি, নেতৃত্বের বক্তব্য, হাল ছেড়ে দিলে হবে না। যখন যেখানে সুযোগ আসবে, বামফ্রন্ট সরকারের সাফল্যের কথা তুলে ধরতে হবে। জেলা নেতৃত্ব পরামর্শ দেন, ঘরছাড়া কর্মী-সমর্থকেরা পারলে এলাকায় ফিরুন। এখনই ‘সক্রিয়’ হতে হবে না। একাংশ পার্টি-কর্মীর ক্ষোভ শুনে জেলা সম্পাদক বলেন, “আঘাত-আক্রমণ নতুন নয়। এর আগেও কেশপুর এই অবস্থা দেখেছে। ওখানে গত ক’মাসে আমাদের অনেকে আক্রান্ত হয়েছেন। কেউ কেউ ভাবছেন, জেলা নেতৃত্ব আক্রান্তদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন না। কিন্তু, এটা ঠিক নয়। পার্টি সব সময়ে আক্রান্তদের পাশে রয়েছে। হয়তো পরিস্থিতির জেরে কেশপুরে গিয়ে আমরা আক্রান্তদের পাশে দাঁড়াতে পারছি না। কিন্তু যাঁরা কোনও না-কোনও ভাবে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন, তাঁদের সব রকম সহযোগিতা করছি।” জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সত্যেন মাইতি বলেন, “পার্টি শুধু ক্ষমতায় আসার জন্য নয়। আমরা একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্যকে সামনে রেখে এগোই। চলার পথে দল ক্ষমতায় এসেছিল। এখন আমরা সরকারে নেই। এই পরিস্থিতিতে আমাদের কর্তব্য, যখন যেখানে সুযোগ আসবে বামফ্রন্ট সরকারের সাফল্যের কথা তুলে ধরা।” আর বিধায়কের বক্তব্য, “এই পরিস্থিতি আমরা কাটিয়ে উঠবই। মানুষ নিজেদের অভিজ্ঞতা দিয়েই ভাল-মন্দ বুঝবেন।” কেশপুরে ৭টি লোকাল কমিটি-খেতুয়া, আনন্দপুর, সাহসপুর, কেশপুর, নেড়াদেউল, ছুতারগেড়্যা ও বিশ্বনাথপুর থেকে ৭ জন প্রতিনিধিকে বক্তব্য রাখতে দেওয়া হয়। এর আগেই কেশপুরের ৭টি লোকাল কমিটির সম্মেলনও হয়ে গিয়েছে মেদিনীপুরেই। লোকাল কমিটিগুলিতে তেমন বড় কোনও রদবদল আনা না-হলেও জোনালের আয়তন কমানো হয়েছে। ২৫ সদস্যের জায়গায় এ বার সেখানে ঠাঁই হচ্ছে ১৭ জনের। অপসৃতদের মধ্যে রয়েছেন হীরালাল ভুঁইয়া, হিংমাশু কুঁয়ার, বিজয় বারিক। আগে হয়ে যাওয়া লোকাল সম্মেলনে খেতুয়া, আনন্দপুর, সাহসপুর, কেশপুর, নেড়্যাদেউলের সম্পাদক থেকে গিয়েছেন তাপস মিত্র, গোঁরাচাঁদ গুঁই, লক্ষ্মীকান্ত ঘোষ, আব্দুল মালেক ও হেকারত আলি। ছুতারগেড়্যা ও বিশ্বনাথপুরে সিদ্দিক আলি ও প্রদ্যোৎ ঘোষের পরিবর্তে সম্পাদক হয়েছেন তন্ময় ঘোষ ও মমতাজ আলি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.