বাবার ভিটেয় ‘পুনর্মিলন’ অম্বানী ভাইদের
দীর্ঘ বিবাদ এবং বছরখানেকের ‘প্রতিযোগিতা’র পরে মঙ্গলবার দুপুরে ফের এক ফ্রেমে বন্দি হলেন মুকেশ ও অনিল অম্বানী। উপলক্ষ, বাবা ধীরুভাই অম্বানীর ৮০তম জন্মবার্ষিকী। আর এ বারেও, দুই ভাইকে এক মঞ্চে হাজির করানোর পিছনে তাঁদের মা। কোকিলাবেন।
চট করে সাংবাদিকদের সামনে আসেন না। তবু সেই কোকিলাবেনই গুজরাতের গ্রামে প্রয়াত স্বামীর জন্মভিটেয় সোমবার সাংবাদিকদের ডেকে বলেছিলেন, “আমার দুই ছেলে পরস্পরকে যথেষ্ট ভালবাসে। আমরা সবাই একসঙ্গে আছি। স্বামীর স্মৃতিরক্ষায় কিছু একটা করতে চেয়েছিলাম। দু’জনেই তাতে রাজি। তাই তো ওরা দু’জনেই আসছে।” তখনই অনেকে আন্দাজ করেছিলেন, ‘অপ্রত্যাশিত’ কিছু একটা সত্যিই ঘটতে চলেছে।
অপ্রত্যাশিতই বটে! দশ বছর আগে বাবার মৃত্যুর পর দু’ভাইয়ের ঝগড়া তো কোনও দিনই বাড়ির অন্দরমহলে আটকে থাকেনি। অর্থনীতি, রাজনীতির আঙিনা পেরিয়ে আদালত পর্যন্তও গড়িয়েছে। সেই দুই ভাইয়ের ‘হৃদ্যতা’ নিয়ে একদা ‘মধ্যস্থতাকারী’ মায়ের এ হেন মন্তব্যে প্রত্যাশার পারদ তো চড়বেই। তার ওপর যদি সেই দু’ভাই হয় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের মানচিত্র বদলে দেওয়া ধীরুভাই অম্বানীর দুই ছেলে।
শেষ পর্যন্ত ঘটেই গেল সেই অপ্রত্যাশিত অথচ বহু আকাঙ্খিত ঘটনাটা।
চোরওয়াদ গ্রামের পৈতৃক বাড়িতে অনিল ও মুকেশ। ছবি: পি টি আই।
ফের মুখোমুখি দাঁড়ালেন দুই ভাই। গুজরাতের চোরওয়াদ গ্রামের সেই বাড়িতে, যেখান থেকে কোকিলাবেনকে জীবনসঙ্গী করে ব্যবসায়ী হিসেবে দীর্ঘ যাত্রা শুরু করেছিলেন ধীরুভাই অম্বানী। সেই বাড়ি, যার বাগানে দাঁড়িয়ে স্মৃতিমেদুর কোকিলাবেন বলেন, “বিয়ের পর যখন এই বাড়িতে আসি, তখন বিজলি বাতি ছিল না। কুয়ো থেকে জল তুলতাম। সেই দিয়েই কাপড় কাচতাম, ঘর সাফ করতাম...!”
বাবার মৃত্যু দুই ভাইয়ের দুরত্ব বাড়িয়েছিল। ভাগ হয়ে গিয়েছিল ধীরুভাইয়ের ‘রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ’। বাবারই ৮০তম জন্মদিন উদযাপন মুকেশ-অনিলের সম্পর্কের সেই শীতলতা কিছুটা হয়তো কমিয়ে দিল। আরও তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, দিদিমা থেকে নাতি, নাতনি তিন প্রজন্মের উপস্থিতিতে ১৭ বছর পর পুনর্মিলন হল ধীরুভাই অম্বানীর পরিবারে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার সকালেই হেলিকপ্টারে চেপে সপরিবার চোরওয়াদ পৌঁছন অনিল। মায়ের সঙ্গে যোগ দেন পুজোয়। দুই বোন দীপ্তি সালগাওকর ও নীনা কোঠারি আগেই পৌঁছে গিয়েছিলেন। দুপুরে পৌঁছয় সস্ত্রীক মুকেশের কপ্টার। দাদাকে অভ্যর্থনা জানাতে বাড়ির মূল ফটকে অপেক্ষা করছিলেন অনিল। দুই ভাইকে এক সঙ্গে দেখে হাততালিতে ফেটে পড়েন অপেক্ষমান কয়েক হাজার গ্রামবাসী। সন্ধ্যায় পারিবারিক অনুষ্ঠানে ধরা পড়ে মুকেশ-অনিলের ‘বিরল’ হাসিমুখ ছবি। বুধবার গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে চার ছেয়েমেয়ে ও নাতি-নাতনিদের পাশে নিয়ে ধীরুভাইয়ের স্মৃতিসৌধের উদ্বোধন করবেন কোকিলাবেন। তাঁর বাড়িটিকেও সংগ্রহশালা হিসেবে ঘোষণা করা হবে।
মুকেশ-অনিল সম্পর্কে ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে, ব্যবসায়িক মহলে এমন খবর নাকি আসছিল কয়েক মাস ধরেই। রিলায়্যান্সের শীর্ষ কর্তাদের কয়েক জন জানান, চার বছর পুরনো চুক্তি বাতিল করে ২০১০ সালে সরাসরি ‘প্রতিযোগিতায়’ নামার পর থেকেই কাজিয়া ভুলে ব্যবসায় মন দিয়েছেন দুই ভাই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্তার কথায়, “ওঁরা খাঁটি ব্যবসায়ী। বুঝেছেন, নিজেদের ঝামেলায় লাভের গুড় খেয়ে যাচ্ছে অন্য সংস্থাগুলি।” অনিলের সংস্থার টাওয়ার ভাড়া করে নিজের সংস্থার ৪-জি পরিষেবা চালাচ্ছেন মুকেশ এমন খবরও বণিকমহলে রয়েছে।
কিন্তু ‘পুনর্মিলন’ কি সম্পূর্ণ হবে? বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনই সেই সম্ভাবনা নেই। তবে প্রতিযোগিতা ছেড়ে দু’ভাই ফের একযোগে মাঠে নেমে পড়লে দেশের শেয়ার সূচক, ব্যবসা, অর্থনীতি, এমনকী রাজনীতিতেও ‘ইতিবাচক’ প্রভাব পড়বেএমনই আশা বণিকমহলের। আর কোকিলাবেন তো বলেই দিয়েছেন, দুই ছেলের বিবাদ এখন অতীত।সহায়তা করার চেষ্টা হচ্ছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.