ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অশান্তি ছড়াল কাটোয়ার চন্দ্রপুর কলেজে। মঙ্গলবার টিএমসিপি-ছাত্র পরিষদ জোটের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে এসএফআইয়ের। গণ্ডগোল রুখতে গিয়ে ইটের আঘাতে জখম হলে কাটোয়ার সার্কেল ইনস্পেক্টর শচীন্দ্রনাথ পুড়িয়া, ওসি রাজর্ষি দত্ত-সহ চার পুলিশ কর্মী। এই ঘটনার পরে পুলিশ ছাত্রদের উপরে লাঠি চালায় বলে অভিযোগ দু’পক্ষেরই। জখম হন ২৫ জন ছাত্র। তাঁদের মধ্যে ১০ জনকে মন্তেশ্বর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে দু’জনকে সেখান থেকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। জেলা পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর অবশ্য লাঠি চালানোর কথা অস্বীকার করেন।
এ দিন চন্দ্রপুর কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন ছিল। কলেজ শুরুর সময় থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ছাত্র সংসদ ছিল ছাত্র পরিষদের হাতে। ২০০৪ সালে ক্ষমতায় আসে এসএফআই। অভিযোগ, সে বার ছাত্র পরিষদকে চক্রান্ত করে মনোনয়ন জমা দিতে দেওয়া হয়নি। সে বার থেকে টানা সাত বছর ক্ষমতায় ছিল এসএফআই। এ বার টিএমসিপি এবং ছাত্র পরিষদ জোট গড়ে এসএফআইয়ের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। এ দিন ভোটের ফল ঘোষণার পরে দেখা যায়, ১৬টি আসনের মধ্যে ছাত্র পরিষদ-টিএমসিপি জোট পেয়েছে ১৩টি। এসএফআই জেতে দু’টিতে। ‘টাই’ হয় একটি আসনে।
গোলমালের আশঙ্কায় এ দিন শুরু থেকেই কলেজ চত্বরে মোতায়েন ছিল পুলিশ ও র্যাফ। অভিযোগ, ফল বেরোনোর পরেই কয়েক জন এসএফআই কর্মী-সমর্থক পুলিশকে লক্ষ করে গালিগালাজ করতে থাকে। পুলিশ তাঁদের সরিয়ে দেয়। এসএফআইয়ের রাজ্য কমিটির সদস্য কিংশুক মণ্ডলের অভিযোগ, “ছাত্র পরিষদ-টিএমসিপি কর্মী-সমর্থক ও পুলিশের একাংশ আমাদের কর্মীদের উপরে চড়াও হয়। এর ফলে আমাদের ১৭ জন জখম হয়েছেন বলে জেনেছি।” তাঁর দাবি, টিএমসিপি-ছাত্র পরিষদের সন্ত্রাসের ভয়ে এ দিন তাঁদের অনেক প্রার্থীও কলেজ যাননি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কলেজ চত্বর থেকে এসএফআইয়ের কর্মী-সমর্থকেরা হটে যাওয়ার পরে পুলিশ টিএমসিপি-ছাত্র পরিষদকে সংযত হতে বলে। এর পরেই ইটবৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। কাটোয়া ওসি রাজর্ষি দত্ত বলেন, “দুই ছাত্র গোষ্ঠীর সংঘর্ষ আটকাতে গিয়ে ইটের আঘাতে সিআই, আমি-সহ চার জন জখম হয়েছি।”
টিএমসিপি-র বর্ধমান জেলা সভাপতি অশোক রুদ্রের অভিযোগ, “পুলিশ বিনা প্ররোচনায় আমাদের কর্মীদের উপরে লাঠি চালিয়েছে। ৭-৮ জন জখম হয়েছেন। সংগঠনের জেলা সহ-সভাপতি হিল্লোল বন্ধু গুরুতর জখম অবস্থায় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি। পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে।” ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি বরুণকুমার সাহা বলেন, “এসএফআই হেরে যাওয়ার পরে গণ্ডগোল পাকায়। আমাদের কেউ এর সঙ্গে যুক্ত নয়।”
জেলা পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর অবশ্য বলেন, “পুলিশকে লক্ষ করে ইট ছোড়ার পরে লাঠি উঁচিয়ে তাড়া করা হয়েছে। লাঠি চালানো হয়নি।” কলেজে এমন ঘটনার পরে চন্দ্রপুরের কাছে বুঁইচি গ্রামে বোমা ফেটেছে বলে অভিযোগ। কারা এই বোমা ফাটিয়েছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। |